মফঃস্বল শহর করোনা মোকাবেলায় প্রস্তুতি প্রয়োজন

0

বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত বাড়ছে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা। দৈনিক ১৪ হাজার থেকে ১৭ হাজার নমুনা পরীায় তিন হাজার থেকে চার হাজার মানুষের করোনা শনাক্ত হচ্ছে। গতকাল শনিবার পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছিল এক লাখ আট হাজারের বেশি। এর মধ্যে মোট আক্রান্তের প্রায় অর্ধেকই যুক্ত হয়েছে গত ১৫ দিনে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, পরীার সংখ্যা যত বাড়বে, আক্রান্তের সংখ্যাও তত বাড়বে। কিন্তু সেই নমুনা পরীা নিয়েও তৈরি হয়েছে নানামুখী সংকট। দিনের পর দিন লাইন দিয়েও অনেকে নমুনা দিতে পারছেন না। যাঁরা নমুনা দিতে পারছেন তাঁদেরও পরীার ফলাফল পেতে ৮ থেকে ১০ দিন লেগে যাচ্ছে। তত দিনে হয় রোগীর মৃত্যু হচ্ছে, না হয় উপসর্গহীন বা ভালো হয়ে যাচ্ছে। অনেক পজিটিভ রোগী এই সময়ে পরিবারের সদস্য কিংবা অফিস, হাট-বাজার বা অন্যান্য সামাজিক মেলামেশার মাধ্যমে অনেককে সংক্রমিত করছেন। দেশে ৬১টি আরটি-পিসিআর ল্যাবে পরীার ব্যবস্থা করা হলেও সব কটি সঠিকভাবে কাজ করতে পারছে না। টেস্ট কিটের ঘাটতিও নমুনা পরীার কাজ ব্যাহত করছে। এই পরিস্থিতিতে করোনা মোকাবেলায় সরকারের উদ্যোগে পরিকল্পনা ও সমন্বয়হীনতার চিত্রই ল করা যায়।
আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার হতে সময় লেগেছিল ১১ দিন। আর ৪০ হাজার থেকে ৫০ হাজার হতে সময় লেগেছিল মাত্র পাঁচ দিন। আর এখন এক দিনেই বাড়ছে চার হাজার পর্যন্ত। পিক বা চূড়ায় না ওঠা পর্যন্ত আগামী দিনগুলোতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর এই হার আরো বাড়তে পারে। পিকে ওঠা নিয়েও বিশেষজ্ঞদের মধ্যে রয়েছে নানা মত। বিবিসির বিশ্লেষণ অনুযায়ী সর্বোচ্চ পর্যায়ে ওঠার পর নিচে নামা শুরু হতে ৪২ দিন বা তারও বেশি সময় লাগতে পারে। অতি আশাবাদী কারো কারো মতে, চলতি মাসের শেষ নাগাদ সংক্রমণের হার কমে আসতে পারে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বাংলাদেশে সংক্রমণ ও মৃত্যুর এই ঊর্ধ্বগতি রোধে যে ধরনের প্রস্তুতি থাকা প্রয়োজন ছিল, তা আমাদের নেই। এ েেত্র সরকারের সঠিক পরিকল্পনা ও দূরদর্শিতার অভাব ছিল। সরকার প্রথম দিকে দৈনিক ১০ হাজার পরীা করানোর ল্য ঠিক করে। পরে সেটি বাড়ালেও এখন পর্যন্ত প্রতিদিন ২০ হাজার নমুনা পরীার সমতা তৈরি করতে পারেনি। অথচ অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, এই সময়ে দৈনিক ৫০ হাজারের বেশি নমুনা পরীা করা জরুরি। এদিকে, আরটি-পিসিআর পরীার ল্যাব বেড়ে ৬১টি হলেও প্রতিদিন সব ল্যাবে পরীা করা সম্ভব হচ্ছে না। রয়েছে কিটের সংকট। তাই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরও মনে করছে, শুধু পিসিআর পরীা দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে না, বিকল্প কৌশলও নিতে হবে। তবে তারা গণস্বাস্থ্যের কিট ও ল্যাব ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেবেন কি-না তা প্রকাশ করেননি।
শুধুু নমুনা পরীাই নয়, রোগীদের জন্য হাসপাতালে শয্যাসংখ্যা বাড়ানো, আইসিইউ, অক্সিজেন, ভেন্টিলেশনসহ উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। সেই সঙ্গে অবশ্যই দ্রুত রোগ শনাক্ত করতে হবে। এক্ষেত্রে বলে রাখা ভালো, আমাদের দেশে এখনও যা কিছু হচ্ছে তা মূলত রাজধানী কেন্দ্রিক। করোনা মহামারীতেও একই প্রবণতা লক্ষনীয়। সরকারের সংশ্লিষ্টদের ভাবখানা এমন যে দেশটা শুধু রাজধানী বা দুয়েকটি বাণিজ্যিক শহর কেন্দ্রিক। এর বাইরে যারা আছে তারা রোহিঙ্গা জাতীয়। দুঃখের বিষয় করোনাকালে রোহিঙ্গারা যে সুরক্ষা পেয়েছে বহু শহরের ভিআইপিরাও পাননি। সরকারের শীর্ষস্থানীয়দের দাবি অনুযায়ী বিশেষ সুরক্ষার কারণে রোহিঙ্গা ক্যাম্প করোনা মুক্ত রয়েছে। আশ্রিত রোহিঙ্গাদের রক্ষায় সরকারের এ ভূমিকার জন্য আমরা অবশ্যই ধন্যব্দা জানাই। সেই সাথে এই কথাটুকু বলতে চাই দেশের ১৮ কোটি মানুষের ১৬ কোটিই বাস করে রাজধানীর বাইরে। করোনা এখন সারাদেশে আক্রান্ত এবং মৃত্যুর তালিকা দেখলে তার প্রমাণ মিলছে। তারপরও পরীব্ণা ও চিকিৎসায় চরম অবহেলার শিকার হচ্ছে তারাই। সরকার যদি এখনও সকল জেলা উপজেলায় বিশেষ পদক্ষেপ না নেয় তাহলে বিদেশের কোন দেশের সাথে বাংলাদেশ তুলনায় উঠবে। যা কারো কাম্য নয়। আমরা তাই সরকারকে এখনই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানাই।