শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীকেই নির্দেশ দিতে হলো

0

শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীকেই হস্তক্ষেপ করতে হলো। তাকেই নির্দেশ দিতে হলো, ভরা মওসুমে চালের দাম বাড়লো কেন তা খতিয়ে দেখা হোক। লক্ষণীয় বিষয় হলো- প্রধানমন্ত্রী ঘোষণার পরই খাদ্যবাজার নিয়ন্ত্রণে নিয়োজিত বিভিন্ন শাখা গতকাল সকাল থেকেই তৎপরতা শুরু করেছে এবং বেশ কিছু জরিমানা আদায় করেছে। তবে, দুর্ভাগ্যজনক যে, গতরাত পর্যন্ত কোথাও চালের দাম কমানোর কোনো খবর মেলেনি। তবে, আমরা আশাবাদী নিশ্চয়ই কিছু সুফল মিলবে যদি নির্দেশনা যথাযথভাবে কার্যকর হয়। ‘যদি’ বলার কারণ হচ্ছে, অতীতে খাদ্যমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী বারবার নির্দেশ দেবার পরও কোনো সুফল দেখতে না পাওয়া। সুফলের বদলে মূল্য বৃদ্ধির ঘটনা দেখা গেছে, প্রায় প্রতিবার।
গত সপ্তাহে লোকসমাজসহ প্রায় সব পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, ভরা মৌসুমেও চালের দাম বাড়ছে। নওগাঁর মোকামে দশ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধির খবর হয়েছে। বাস্তবতা হচ্ছে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বেশির ভাগ নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে। খুচরা পর্যায়ে সব ধরনের চাল কেজিতে দুই থেকে পাঁচ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। টিসিবির বাজারদরের তথ্য অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহে চালের দাম কেজিতে তিন টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে বস্তাপ্রতি ১০০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, বড় কোম্পানিগুলো ধান কিনে মজুদ করছে। অন্যদিকে, ছোট ও মাঝারি মজুদদার এবং মিল মালিকরাও মজুদ করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
পত্রিকার খবর অনুযায়ী বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বলছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির গতি মার্চ মাসের তুলনায় এপ্রিল মাসে কিছুটা কমলেও টানা তিন মাসের মতো সার্বিকভাবে এ মাসেও বেড়েছে মূল্যস্ফীতি। গত মার্চ মাসে মূল্যস্ফীতি ছিল ৬.২২ শতাংশ। এপ্রিলে এসে তা দাঁড়ায় ৬.২৯ শতাংশে, যা দেড় বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে মূল্যস্ফীতি কিছুটা বেড়ে ৬.৩৯ শতাংশ হয়েছে, মার্চ মাসে এ খাতে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৬.০৪ শতাংশ। গ্রামে মূল্যস্ফীতির হার কিছুটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬.৫৯ শতাংশ, যা মার্চ মাসে ছিল ৬.৫২ শতাংশ।
বাজারে যখন খাদ্যপণ্য ও খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের দাম বাড়তে শুরু করে, তখন মজুদের একটি প্রবণতা দেখা যায়। সাম্প্রতিক সময়ে এ প্রবণতা আমরা দেখেছি সয়াবিন তেলের মূল্যবৃদ্ধির সময়। বাজারে তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক থাকার সময়ই এক শ্রেণির ব্যবসায়ী তেল কিনে মজুদ করেন। এক পর্যায়ে বাজারে সরবরাহ সংকট তৈরি হয়। বাজার বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ধান উৎপাদন মৌসুমে বাজারে চালের দামে অস্থিরতা থাকার কথা নয়। অথচ, তাই হচ্ছে। সকাল-বিকেল হাটে হাটে মূল্য বৃদ্ধি মূলত কারসাজির কারণেই হচ্ছে।
বিশ্ব আজ নতুন এক পরিস্থিতির মুখে পড়েছে। বৈশ্বিক বিপণনব্যবস্থাই আজ এক নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে। বাংলাদেশ এর বাইরে নয়। এখন বাংলাদেশকে নিজের বাস্তবতার নিরিখে সিদ্ধান্ত নিয়ে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মজুদদারি ঠেকাতে সরকারকে বাজার মনিটরিংয়ে জোর দিতে হবে। বিশ্ববাজারের সুযোগ নিয়ে ব্যবসায়ীরা যাতে চালের বাজার অস্থির করতে না পারেন, সেই ব্যবস্থা নিতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারকে তার নিজের ঘরে ব্যবসায়ীদের ইন্ধন ও আশ্রয়দাতা খুঁজতে হবে।
মূল্যস্ফীতির কারণে সার্বিক জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যায়। এর প্রভাব গরিব মানুষের ওপরই বেশি পড়ে। তাদের আয়ের বড় অংশই চলে যায় খাদ্যপণ্য কিনতে। আমরা মনে করি,, আমদানি ঠিক রেখে সাপ্লাই চেইন সচল রাখার মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণ ও বাজারে স্বস্তি ফিরিয়ে আনা সম্ভব। এর জন্য প্রয়োজন সমন্বয়। সেই দক্ষতা সরকারকেই দেখাতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর সফলতার প্রত্যাশা আমরা করতেই পারি।