পথে পথে চাঁদাবাজি বন্ধ হোক

0

 

পত্র-পত্রিকায় চাঁদাবাজির নানা খবর প্রায়ই আসে। এসব খবর দেখে মনে হতে পারে আমাদের সমাজে চাঁদা এখন অনেকটাই বৈধতা পেয়ে গেছে। হাটবাজার, পরিবহন খাত থেকে শুরু করে ফুটপাতের ব্যবসা সর্বত্রই চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্য। অনেক সময় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর বিরুদ্ধেও পাওয়া যায় চাঁদাবাজির অভিযোগ। বিশেষ করে সড়ক-মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে পরিবহনে চাঁদাবাজির ঘটনা তো ওপেন সিক্রেট। কিন্তু হাটের ইজারাদার হাট এলাকার বাইরে এসে চাঁদাবাজি করছেন, তাও আবার সরকারি দলের নাম ভাঙিয়ে! প্রশ্ন হলো, এই অব্যাহত ভোগান্তির সুরাহা হবে কিভাবে? সব এলাকায় হাটবাজার ইজারা দেওয়ার সময় কিছু শর্ত দেওয়া থাকে। সেই শর্ত ভঙ্গ করে চাঁদা আদায় করা হলে স্থানীয় প্রশাসনকে তা দেখতে হবে। কিন্তু ইদানিংকার চাঁদাবাজির খবরে সরকারি তদারকির কোনো খবর থাকে না। উল্টো অভিযোগ থাকে চাঁদাবাজির।
গত ঈদের আগে প্রথম আলো পত্রিকায় যশোর সাতমাইল তরকারি বাজার থেকে ঢাকা এবং বগুড়া থেকে ঢাকার পণ্যবাহী ট্রাকে পথে পথে চাঁদাবাজির সরেজমিন প্রতিবেদনে যে ভয়াবহতা তুলে ধরা হয়েছিল তাতে আশা করা হয়েছিল একটা কড়া পদক্ষেপ হবে। কিন্তু তা হয়নি। উল্টো বেড়েছে। সম্প্রতি পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে বগুড়ার শেরপুরে কৃষিপণ্য পরিবহনের যানবাহন আটকে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। স্থানীয় হাটবাজারের রসিদ বই ব্যবহার করে বিভিন্ন সড়কের মোড়ে মোড়ে এই চাঁদাবাজি চলছে। আলুর পর এবার ধানবোঝাই প্রতিটি গাড়ি থেকে এক হাজার থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত খাজনার নামে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। হাটের ইজারাদার সরকারদলীয় এক নেতার নাম ভাঙিয়ে স্থানীয় কয়েকজন উচ্ছৃৃঙ্খল যুবকের সহযোগিতায় চাঁদা আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। চাঁদাবাজদের এমন দৌরাত্ম্যের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন কৃষক ও ধান-চাল ব্যবসায়ীরা। ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগে বলা হয়েছে, শেরপুর উপজেলার কয়েকটি হাট ঘিরে স্থানীয় সড়কের বিভিন্ন মোড়ে পাহারা বসানো হয়েছে। এমনকি এসব হাটের রসিদ বই ব্যবহার করে প্রতিদিন কৃষিপণ্য পরিবহনের ট্রাক, ভটভটি, নছিমন-করিমন ও পাওয়ার ট্রলি আটকে চাঁদা আদায় করছে সংঘবদ্ধ একটি চক্র। এক মণ ধানে ১০ থেকে ১৫ টাকা হারে হিসাব কষে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। সেই হিসাবে ধানবোঝাই প্রতিটি যানবাহন থেকে এক হাজার থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা তুলছে তারা। তাদের দাবি করা চাঁদার টাকা না দেওয়া পর্যন্ত কৃষিপণ্য পরিবহনের গাড়িগুলো আটকে রাখা হচ্ছে। পাশাপাশি চাঁদার টাকার সমপরিমাণ মালপত্রও যানবাহন থেকে নামিয়ে নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। আমরা এই অত্যাচার থেকে কৃষকদের রক্ষার অনুরোধ রাখছি। আমরা মনে করি, প্রশাসন তৎপর না হলে চাঁদাবাজির এই নয়া সংস্করণ অচিরেই সারাদেশে ছড়িয়ে পড়বে।