ব্যবসায়ী নামক প্রতারকদের থামান

0

ঘটনা দুর্ঘটনার মধ্য দিয়ে শেষ হলো পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরের ছুটি। ঈদপূর্ব ও পরবর্তী ৬ দিনের ছুটিতে মানুষ যেমন আনন্দ উৎসব করেছে। তেমনি করেছে আহাজারি। অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে সড়ক দুর্ঘটনার আধিক্য এই আহাজারির কারণ। তবে, গতকাল পর্যন্ত কত মানুষ হতাহত হয়েছে তা সঠিকভাবে পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, আজ পত্রিকা প্রকাশ হলে মোটামুটি একটি ধারণা পাওয়া যাবে। আশা করছি, আগামীতেও দুর্ঘটনার বিষয়ে পৃথক সম্পাদকীয় লেখা সম্ভব হবে। যেখানে হতাহতের সংখ্যা কারণ ও করণীয় নিয়ে লেখা যাবে। আমরা কামনা করছি, হতাহতের সংখ্যা যেন কম হয়। কারণ, মৃত্যুর চেয়ে বেদনাদায়ক আর কিছুই নেই। আমরা আজ বরং ঈদবাজারে মানুষের দুর্ভোগও অর্থদণ্ড এবং প্রশাসনিক অবহেলা নিয়ে না বলা কিছু কথা বলি।
পহেলা মে ও ঈদের কারণে চারদিন সংবাদপত্র প্রকাশিত না হওয়ায় বাজারে প্রতারিত মানুষের যন্ত্রণার কথা অজানাই থেকে গেছে। তবে, কিছু কথা অনলাইন, ফেসবুক লাইভ ও পোস্টের মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ায় কমবেশি মানুষ জানতে পেরেছে। আমরা তারই উল্লেখযোগ্য কিছু বিষয়ে আলোকপাত করবো। একথা সবাই জানে, ঈদের আগে বাজারে সয়াবিন ও পামওয়েলের সংকট শুরু হয়। প্রশাসনের উদাসীনতামূলক অবস্থানের কারণে সংকট দুর্ভিক্ষসম পরিস্থিতির জন্ম দেয়। বোতলজাতকৃত সয়াবিন ঈদের ৩ দিন আগেই ফুরিয়ে যায়। অভিযোগ ছিল, অধিক লাভের আশায় কোম্পানির এজেন্টরা এই সংকট সৃষ্টি করেছে। এর সুযোগ নিয়ে পাইকারী ও খুচরা ব্যবসায়ীরা খোলা তেলের দাম বাড়িয়ে দেন। ঈদের আগের দিন সেই তেল ২শ’ টাকা লিটারে তুলে দেন। এরপর বোতল খুলে ব্যারেলে ঢেলে উচ্চমূল্যে বিক্রি করেন। তেল নেই, তেল নেই, প্রচার করে একপোয়া, হাফ কেজি, করে বিক্রি করেন। এই তেল গ্রামের দোকানে মানুষকে শেষ পর্যন্ত ২৪০/২৫০ টাকা পর্যন্ত কিনতে হয়েছে।
দুঃখের বিষয় যে, কেউ কাউকে একটি কথাও জিজ্ঞাসা করেনি। দায়িত্বশীলদের ভাব ছিল এমন যে, যা হচ্ছে হয়ে যাক, কেউ তো রাস্তায় হরতাল ডাকছে না। তেলের বাজারে যখন এমন ‘স্বাধীনতা’ তখন অন্যরাও চালিয়েছেন ফ্রি স্টাইলে। চাল, ডাল, আটা, সিমাই, চিনি সব কিছুরই মূল্য বাড়িয়ে দেদারছে বিক্রি করেছে। মাংসের দামতো রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। মানুষের প্রকাশিত দুঃখ শুধু এইটুকু যে, প্রশাসনের কেউ এসে জিজ্ঞাসা করেনি বেশি দামে বিক্রির কারণ কী ? আইন কেন মানছে না ? নিত্য পণ্যের বাজারেই শুধু প্রতারণা বা বেআইনি হয়েছে তা নয়, ক্রেতাদের ভাষ্য হচ্ছে সিট কাপড় থেকে শুরু করে সকল রেডিমেট পোশাকের মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। যত নামি কোম্পানি, ততো দাম বেশি। চাঁদরাতে ঘন্টায় ঘন্টায় দাম বদলের অভিযোগ ফুটপাত থেকে অভিজাত পর্যন্ত ছিল। জুতা থেকে মনোহরি, এমনকি পাপশ ও ঝাড়–র দাম পর্যন্ত যে যার মতো বাড়িয়ে বিক্রি করেছে। ক্রেতার প্রশ্ন ছিল শুধু একটাই, কেউ কি নেই এসব দেখার? এভাবে প্রকাশ্যে ব্যবসার নামে ডাকাতি থেকে রক্ষার কি কেউ নেই ? কোন আইন কি এদের নিয়ন্ত্রণে করা হয়নি ? ভ্যাট, ট্যাক্স, খাজনা দিয়ে বেতন যুগিয়ে কি এই “পুরস্কারই” পেতে হবে ?
আমরা অবশ্য ক্রেতাদের এ সব প্রশ্নের উত্তর জানি না। শুধু জানি সরকার, সংসদ, প্রশাসন বহাল থাকতে এসব চলতে পারে না। জনগণের দায়িত্ব সরকার ও তার প্রশাসনের। অতএব জনস্বার্থে তাদেরকেই ভূমিকা নিতে হবে। বিদ্যমান আইন যথাযথভাবে প্রয়োগ করলেই জনস্বার্থ রক্ষা হবে বলেই আমরা মনে করি।