ভ্রাম্যমাণ ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ই ভরসা উপকূলে সুপেয় পানির জন্য

0

বাগেরহাট সংবাদদাতা॥ বাগেরহাটে একদিকে প্রচন্ড তাপদাহ, অন্যদিকে শুষ্ক মৌসুমে উপকুলে তীব্র পানি সংকট। এরমধ্যে ভ্রাম্যমাণ ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট থেকে সুপেয় পানি পেয়ে কিছুটা স্বস্তিতে উপকূলবাসী। তবে শুষ্ক মৌসুমে স্থায়ীভাবে সুপেয় পানির সমাধান চান তারা। যতদিন পর্যন্ত এলাকায় সুপেয় পানির চাহিদা থাকবে ততদিন এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে জানান জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী।
প্রচন্ড তাপদাহ ও অনাবৃষ্টির কারণে পুকুর, দিঘী, খালসহ পানির উৎস গুলো শুকিয়ে যাওয়ায় শুধু খাবার পানিই নয় রান্নার পানিরও সংকট দেখা দিয়েছে। এনিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারের পরে জেলা প্রশাসন ও জনস্বাস্থ্য যৌথ উদ্যোগে মোবাইল ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে শরণখোলা উপজেলার পশ্চিম ধানসাগর এলাকায় দেখা যায় শত শত নারী–পুরুষ হাড়ি, কলস ও ড্রামসহ নানা পাত্র নিয়ে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে মোবাইল ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট থেকে পানি সুপেয় পানির জন্য। গরমের মধ্যে দাঁড়িয়ে থেকেও কলসে পানি নিয়ে ফেরা যেন কষ্ট নয় স্বস্তি বলেই জানালেন স্থানীয় সুফলভোগীরা। প্রতি ঘন্টায় প্লান্ট থেকে ৭শ লিটার বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করছে জনস্বাস্থ্য বিভাগ। এতে এলাকাবাসী খুশি হলেও প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুমে সুপেয় পানির স্থায়ী সমাধান চান তারা।
এদিকে বিভিন্ন উৎস থেকে পানি সংগ্রহ করে ফুটিয়ে ও বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ব্যবহার করে পানি পানের আহবান জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
শরনখোলা উপজেলা জনস্বাস্থ্য বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী এসএম মেহেদী হাসান বলেন, এলাকায় সুপেয় পানির তীব্র সংকট রয়েছে। ভ্রাম্যমাণ ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের মাধ্যমে পানি দেয়া হচ্ছে । মানুষের মাঝে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে । তবে আরও বেশি পরিমাণ পানি সরবরাহ করতে পারলে অনেক মানুষ উপকৃত হতো।
শরনখোলা উপজেলার ভোলা নদীর পাশের বাসিন্দা আবজাল হাওলাদার বলেন, এই এলাকায় কোনো টিউবওয়েল বসে না। পুকুর ও বৃষ্টির পানির উপর নির্ভর করতে হয়। কিন্তু এবছর প্রচন্ড গরমের কারণে পুকুরের পানি শুকিয়ে গেছে। আশে-পাশের খালে লবণাক্ত পানি। বাধ্য হয়ে লবণ পানি গোসল রান্না ও খাওয়ার কাজে ব্যবহার করতে হয়। এই পানি খেয়ে মাঝে মাঝে পেটে ব্যাথা ও অসুস্থ হয়ে পড়ি। আমরা খুব সমস্যায় আছি।
শরণখোলা উপজেলার বান্ধাকাটা এলাকার গৃহবধূ জিনিয়া বেগম বলেন, মেশিনে পানি দিচ্ছে এখবর পেয়ে ছুটে এলাম এক কলস নিতে। হয়ত দুদিন পর আবারও পানি দরকার হবে। আমরা শুকনা মৌসুমে স্থায়ী াবে সরকারের কাছে পানি ব্যবস্থার দাবি জানাই। পশ্চিম ধানসাগর গ্রামের আমিন চৌকিদার বলেন, গাড়িতে করে পানি দিচ্ছে। দুই ঘন্টা সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে থেকে পানি নিলাম। গরমের মধ্যে এইভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে শত শত মানুষ একটু খাবার পানির জন্য অপেক্ষা করছে।
রায়েন্দা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান মিলন বলেন, শরণখোলা উপজেলার চারটি ইউনিয়নে লবণাক্ততার কারণে অগভীর নলকূপ স্থাপন হয়না। প্রায় দেড় লাখ মানুষ পুকুর ও বৃষ্টির পানির উপর নির্ভর করে তৃষ্ণা মেটায়। কিন্তু এবার একদিকে প্রচন্ড গরম, অন্যদিকে বৃষ্টি না হওয়ায় পানির উৎসগুলোতে কোনো পানি নেই। ফলে মানুষের মাঝে খাবার পানির জন্য হাহাকার চলছে। বর্তমানে যে ভ্রাম্যমাণ ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের মাধ্যমে পানি দেয়া হচ্ছে তাও অপ্রতুল। তারপরেও মানুষের মাঝে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে।
বাগেরহাটের জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী জয়ন্ত মল্লিক বলেন, উপকূল জুড়ে পানির তীব্র সংকটের খবর পেয়ে বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছি। বাগেরহাটের শরণখোলায় ভ্রাম্যমাণ ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের মাধ্যমে সুপেয় পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। প্লান্ট থেকে ঘন্টায় ৭শ লিটার বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করছে। যতদিন পর্যন্ত পানির সংকট দূর না হবে এবং এলাকায় পানির চাহিদা থাকবে ততদিন এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।