হাসপাতালে ওষুধ সরবরাহে গুরুত্ব দিন

0

“নামেই তালপুকুর, ঘটি ডোবে না” বলে একটি কথা চালু আছে বহুকাল ধরে। কথাটা বলা হয় ‘নামের বিশালত্ব বাস্তবে না থাকার বিষয়টি বুঝাতে। সাম্প্রতিককালে এই কথাটি শতভাগ প্রযোজ্য ‘যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের’ বাস্তব অবস্থার ক্ষেত্রে। যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের অপর নামই হচ্ছে ‘মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল’। মেডিকেল কলেজের নিজস্ব হাসপাতাল নির্মাণের দায়িত্ব থেকে ভারতীয় কোম্পানি চলে যাওয়ায় হাসপাতালটি নির্মাণ হয়নি। ফলে, ২৫০ শয্যা হাসপাতালেই চলছে সব কাজ। অথচ, এই হাসপাতালে মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে উন্নত চিকিৎসা সেবা থেকে। অভিযোগ আছে, এখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ছড়াছড়ি থাকলেও রোগীদের জোটে না চিকিৎসা। চেম্বারে ঢুকে ডাক্তারের সামনে রোগের কথা শেষ করার আগেই কিছু কমন ওষুধ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা লিখে শেষ করেন চিকিৎসক। তারা এমন সব ওষুধ ও টেস্ট লেখেন যা হাসপাতালে পাওয়া যায় না। যেসব টেস্ট হাসপাতালে হয় সেগুলো আবার ডাক্তারদের পছন্দ হয় না। ফলে, সবই করতে হয় বাইরের থেকে।
হাসপাতালে নেই আর নেই নিয়ে লোকসমাজে প্রায়ই সংবাদ হয়। জরুরি বিভাগে গজ, ব্যান্ডেজ, প্লাস্টার, স্পিরিট, সিরিঞ্জ থাকে না প্রায়ই। ওয়ার্ডে থাকে না গ্যাসের ট্যাবলেট, ক্যাপসুল, ব্যথার ওষুধ। থাকে না স্যালাইনসহ অতি জরুরি প্রয়োজনীয় ওষুধ। সর্বশেষ গতকাল লোকসমাজে প্রকাশিত সংবাদে উল্লেখ করা হয়েছে গত তিন মাস ধরে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের ওষুধ নেই। সকল মরণ ব্যাধির কারখানা ডায়াবেটিসের ওষুধ ৩ মাস ধরে হাসপাতালে না থাকা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে অবহেলা নাকি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখার অক্ষমতা তা সরকারের তদন্তে আসা প্রয়োজন। প্রতিবেদক ওষুধ না থাকার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগের চিকিৎসকের বক্তব্য তুলে ধরেছেন। চিকিৎসক জানিয়েছেন, প্রতিদিন তার কাছে শতাধিক ডায়াবেটিস রোগী আসে। অধিকাংশ রোগীর প্রয়োজন হয় পিলিকোজিন ও জোট ফরজিন নামক দুটি ওষুধ। যা সরবরাহ নেই। আলাপকালে তিনি জানান, ওষুধ না থাকায় রোগী কমছে। আমরা মনে করি এটা হাসপাতালের চিকিৎসার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থাহীনতার প্রকাশ। এটা অত্যন্ত দুঃখ ও উদ্বেগজনক। এটা সত্য যে, হাসপাতালের ৮০ ভাগ রোগী দরিদ্র শ্রেণির মানুষ। সরকার তাদের চিকিৎসা সেবার দায় বহন করে বলে দাবি করে। সাংবিধানিকভাবে এট যেমন সরকারের দায়িত্ব, তেমনি জনগণেরও অধিকার। অথচ, জেলা পর্যায়ের শীর্ষ হাসপাতালে তা মিলছে না। আমরা মনে করি, সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা। আশা করবো, জনস্বার্থ বিবেচনায় প্রাধান্য দিয়ে সরকার হাসপাতালে জরুরি সব ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ নিশ্চিত করবে।