দিনভর নাটকীয়তা, মধ্যরাতে অনাস্থা ভোটে হারলেন ইমরান

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ দিনভর নাটকীয়তা। এক বা দুই নয়, চারবার অধিবেশনে বিরতি। সরকার দলীয়দের দীর্ঘ বক্তব্যে সময়ক্ষেপণের চেষ্টা। বিরোধীদের ভোটের দাবিতে হট্টগোল। স্পিকার আসাদ কায়সারের পদত্যাগ। এতকিছুর পর শনিবার রাতে পাকিস্তানের পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোট অনুষ্ঠিত হলো। দেশটির স্থানীয় সময় রাত ১১টা ৫০ মিনিটে এই ভোটাভুটি শুরু হয়। এর মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় থাকতে অনাস্থা ভোট এড়াতে ইমরান খানের সব প্রচেষ্টা বিফলে গেলো। সুপ্রিম কোর্টের পর অনাস্থা ভোটেও হেরে গেলেন তিনি। চরম উত্তেজনাময় ঐতিহাসিক অধিবেশনে ইমরানকে ক্ষমতাচ্যুত করার পক্ষে ভোট দিয়েছেন ১৭৪ জন এমএনএ। পাকিস্তানের ইতিহাসে অনাস্থা ভোটে হেরে ক্ষমতাচ্যুত হওয়া প্রথম প্রধানমন্ত্রী তিনি।
পাকিস্তানের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য ৩৪৩ জন এমএনএ-র মধ্যে ১৭২ জনের সমর্থন প্রয়োজন হয়। বিরোধীরা দাবি করে আসছিল তাদের পক্ষে ১৭৬ জন এমএনএ-র সমর্থন হয়েছে। তবে ভোট দিয়েছেন ১৭৪ জন। সবগুলো ভোট গেছে ইমরান খানের বিরুদ্ধে। ইমরানের ক্ষমতাসীন দল পিটিআই দলের আইনপ্রণেতারা অনাস্থা ভোটে অংশগ্রহণ করেননি। পাকিস্তানের স্থানীয় সময় রাত ১টার দিকে অনাস্থা ভোটের ফল প্রকাশ করে অধিবেশনের চেয়ার আয়াজ সাদিক।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুসারে শনিবার রাত ১২টার মধ্যে অনাস্থা ভোট শুরুর বাধ্যবাধকতা ছিল। কয়েক দফা অধিবেশনে বিরতির পর শনিবার রাত ১১টার স্পিকার আসাদ কায়সার পদত্যাগ করেন। তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতাচ্যুত করতে বিদেশি ষড়যন্ত্রের অংশ তিনি হতে চান না। পদত্যাগের আগে তিনি জানান, মন্ত্রিসভা থেকে তিনি গুরুত্বপূর্ণ নথি পেয়েছেন। যা পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি ও বিরোধী দলের নেতাকে দেখার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। তিনি আরও বলেন, এটি জাতীয় দায়িত্ব ও সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত হওয়ার কারণে আমি প্যানেল চেয়ারম্যান আয়াজ সাদিককে অধিবেশন পরিচালনার আহ্বান জানাচ্ছি। তিনি পদত্যাগ করার পর পিএমএল-এন- এর আয়াজ সাদিকের পরিচালনায় অনাস্থা ভোট শুরু হয়। আয়াজ সাদিকের পরিচালনায় অনাস্থা ভোট শুরু হয়আয়াজ সাদিকের পরিচালনায় অনাস্থা ভোট শুরু হয় ভোটদানের সময় কমে আসতে থাকলেও পদত্যাগের আগে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে তলব করা হয়েছিল স্পিকার আসাদ কায়সার ও ডেপুটি স্পিকার কাসিম সুরিকে। এর আগে জিও নিউজ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, আসাদ কায়সার ভোট আয়োজনে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছিলেন। কারণ ইমরান খানের সঙ্গে তার ৩০ বছরের সম্পর্ক রয়েছে। তিনি তার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারবেন না।
প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে পাকিস্তানের রাজনীতিতে অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছিল। ৩ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে বিরোধীদের আনা অনাস্থা ভোটের প্রস্তাব নাকচ করে দেন ডেপুটি স্পিকার কাসিম খান সুরি। এরপরই ইমরান খানের অনুরোধে জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেন দেশটির প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি। বিষয়টি গড়ায় সর্বোচ্চ আদালতে। টানা পাঁচদিন ধরে শুনানির পর বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি অনাস্থা প্রস্তাব খারিজের আদেশ ও পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করেন এবং শনিবার সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোট আয়োজনের নির্দেশ দেন। এই নির্দেশনার আলোকে শনিবার পার্লামেন্টের অধিবেশন শুরু হয়। অধিবেশনের কার্যসূচিতে চতুর্থ স্থানে ছিল অনাস্থা ভোট।
শনিবার সকাল সাড়ে দশটায় পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মোতাবেক পার্লামেন্টের অধিবেশন শুরু হয়। কিন্তু শুরু হওয়ার পর চার দফা অধিবেশন মুলতবি করা হয়। তৃতীয় দফার বিরতি শেষে ইফতারের অধিবেশন শুরু হলেও আবার মুলতবি করা হয়েছিল। দিনভর সরকারবিরোধীরা অনাস্থা ভোট আয়োজনের পক্ষে বক্তব্য দিয়েছেন। আর সরকার দলের সদস্যরা দীর্ঘ বক্তব্য দিয়ে ভোট আয়োজনকে বিলম্বিত করার চেষ্টা করেছেন। বিরোধী দলের সব সদস্য অধিবেশনের শুরু থেকেই উপস্থিত ছিলেন। তবে সরকার দলীয় এমএনএ-দের উপস্থিতি ছিল কম। এমনকি প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান উপস্থিত হননি। ইমরান খানকে অনাস্থা ভোটে ক্ষমতাচ্যুত করতে বিরোধীদের প্রয়োজন অন্তত ১৭২ জন আইনপ্রণেতার সমর্থন।
দিনের প্রথম বিরতিতে সরকার ও বিরোধী দলের নেতাদের মধ্যে স্পিকারের চেম্বারের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এসময় বিরোধীরা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে অনাস্থা ভোট আয়োজনে জোর দেয়। বৈঠকে উভয় পক্ষ পার্লামেন্টের শৃঙ্খলা মেনে চলতে এবং কারও বক্তব্যে বাধা না দেওয়ার বিষয়ে একমত হয়। বৈঠকে সরকার পক্ষের ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশি, পিটিআই নেতা আমির ডোগার। বিরোধী পক্ষের বিলাওয়াল ভুট্টো-জারদারি, রানা সানাউল্লাহ, আয়াজ সাদিক, নাভিদ কামার ও মাওলানা আসাদ মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র: ডন, জিও নিউজ