হতাশার সেই কিংসমিডে কী হবে নতুন ইতিহাস রচনা!

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ ইতিহাস তৈরিই হয় পরিবর্তনের জন্য। রেকর্ড গড়াই হয় ভাঙার জন্য। প্রতিনিয়ত ইতিহাস তৈরি হচ্ছে। রেকর্ড এর জন্ম হচ্ছে। বাংলাদেশও ইতিহাস বদল করছে। নতুন নতুন রেকর্ডও গড়ছে।নিউজিল্যান্ডের মাটিতে কোনো জয় ছিল না। সেখানে এবার টেস্ট জিতেছে মুমিনুলের দল। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে টেস্ট, ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে কোন জয় ছিল না। এবার বাভুমার দলকে ২-১ ‘এ হারিয়ে প্রথমবার ওয়ানডে সিরিজ জিতে তামিম ইকবালের দল সে ধারার ব্যত্যয় ঘটিয়েছে। এই দুই সাফল্যের জন্ম নিয়েছে নতুন স্বপ্ন। তৈরি হয়েছে নতুন প্রত্যাশার। ভক্ত ও সমর্থকরা আশার প্রহর গুনছেন, এবার দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে প্রথম টেস্টও জিততে পারবে মুমিনুলের দল। বলে রাখা ভাল, ভারত মহাসাগরের পাড়ে সমুদ্র সৈকতের শহর ডারবান হয়ে আছে টাইগারদের হতাশা, দুঃখ ও বেদনার ভুমি। এই ডারবানের কিংসমিডে ২০০৩ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেটে আইসিসির সহযোগি সদস্য কানাডার কাছে হেরেছিল টাইগাররা।
হতাশায় মোড়ানো সেই কিংসমিডে এবার কী সাফল্যর নতুন ইতিহাস রচনা করার সুযোগ তৈরি হবে? মুমিনুলের দল কী সে সুযোগ কাজে লাগাতে পারবেন? এসব প্রশ্ন সামনে রেখে ৩১ মার্চ, বৃহস্পতিবার ডারবানের কিংসমিডে শুরু হচ্ছে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ। বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টায় শুরু হবে ম্যাচ। টি-স্পোর্টস আর জি টিভি (গাজী টিভি) সরাসরি সম্প্রচার করবে টেস্ট ম্যাচটি। অধিনায়ক মুমিনুল, সব সময়ই টেস্ট জেতার কথা বলেন। এবারো বলেছেন। ক’দিন আগে জাগো নিউজকে দেয়া একান্ত সাক্ষাতকারে বলেছিলেন, আজ বুধবার ভিডিও কনফারেন্সেও সে কথার পুনরাবৃত্তি করেছেন। তার কথা, ‘আমি সব সময়ই বলি টেস্ট জয়ের জন্যই খেলবো। এবারো সিরিজ বিজয়ের লক্ষ্যেই মাঠে নামবো। তার আগের কথা হলো, আমাদের প্রক্রিয়াগুলো মেনে চলতে হবে। মাঠে ৫ দিনের প্রতিটি সেশনে করণীয় কাজগুলো সঠিকভাবে করে দেখাতে হবে।’ এবার দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে টেস্ট সিরিজে টাইগারদের ভালো করার আরও একটি অনুকুল ক্ষেত্র আছে। আইপিএল খেলার জন্য দলে নেই প্রোটিয়াদের ৬-৭ জন ফ্রন্টলাইনার। এর মধ্যে অন্যতম ব্যাটিং স্তম্ভ এইডেন মারক্রাম আর রাশি ফন ডার ডুসেন এবং দুই প্রধান স্ট্রাইক বোলার রাবাদা ও লুঙ্গি এনগিদিও নেই দলে।
এই নির্ভরযোগ্য ও তারকা ক্রিকেটারদের অনুপস্থিতিতে দক্ষিণ আফ্রিকার মূল শক্তির অন্তত ৩০ ভাগেরও বেশি কমে গেছে। মারক্রাম আর ফন ডার ডুসেন না থাকার অর্থ- প্রোটিয়া ব্যাটিংয়ের ২০-২৫ ভাগ কমে যাওয়া। আর দুই ভয়ঙ্কর ফাস্ট বোলার রাবাদা ও লুঙ্গি না থাকা মানে বোলিং, বিশেষ করে ফাস্ট বোলিংয়ের প্রায় অর্ধেকটা নিঃশ্বেষ হয়ে যাওয়া। এমন ক্ষয়ে যাওয়া শক্তির দক্ষিণ আফ্রিকা প্রতিপক্ষ হিসেবে আগের যে কোন সময়ের চেয়ে একটু হলেও সহজ। সেটা প্লাস পয়েন্ট। কিন্তু অধিনায়ক মুমিনুল সেটাকে প্লাস পয়েন্ট মানতে নারাজ। তার ব্যাখ্যা, ‘দক্ষিণ আফ্রিকারই শুধু না, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ব্যাকআপ পারফরমার হিসেবে যাদের নেয়া হয় বা যাদের অন্তর্ভুক্তি ঘটে, তারা কেউই হেলাফেলার নয়। তাই রাবাদা-লুঙ্গিরা নেই বলেই অত্মতুষ্টিতে ভোগার অবকাশ নেই। তাদের জায়গায় যারা আসবে, তারাও নিশ্চয়ই একটা স্ট্যান্ডার্ট মেইনটেইন করবে। কাজেই কাজটা সহজ হবে না। আমাদের করণীয় কাজগুলো ঠিকমত করতে হবে। প্রক্রিয়ার যথাযথ অনুস্মরণ খুব জরুরি।’
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে মুমিনুলের দল দেখিয়েছে, তারা প্রক্রিয়া মেনে ধৈর্য্য, মনোযোগ আর মনোসংযোগ নিয়ে ৫ দিন খেলতে পারে। ব্যাটাররা যতক্ষন সম্ভব ক্রিজে থাকার কাজটি করে দেখিয়েছেন। আর বোলাররা, বিশেষ করে ফাস্ট বোলাররা দীর্ঘ সময় ধৈর্য্য ধরে একই লাইন ও লেন্থে লম্বা স্পেলে বোলিং করে প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের ধৈর্য্যর বাধ ভেঙ্গে উইকেটের পতন ঘটাতে পেরেছেন।’ এবার ডারবানের কিংসমিডে সে কাজগুলোই আবার করে দেখাতে হবে। ব্যাটারদের ব্যাটে দীর্ঘ ইনিংস আর বোলারদের বিশেষ করে ফাস্ট বোলারদের লম্বা স্পেলে কার্যকর বোলিংটা যে খুব জরুরি! আশার কথা, নিউজিল্যান্ডে তামিম ছিলেন না, এবার দক্ষিণ আফ্রিকায় তামিম আছেন। এ দেশসেরা ও অভিজ্ঞ ওপেনারের ফিরে আসায় টপ অর্ডার হবে আরো সমৃদ্ধ। কাজেই ভাল কিছুর আশা করাই যায়। দেখা যাক, সেই ভালোর রূপ কতটা ভাল হয়?