ভয়াল কালরাতের স্মৃতি জাগ্রত হোক স্বাধীনতার চেতনায়

0

আজ পঁচিশে মার্চ ১৯৭১-এর সেই ভয়াল কালরাতের স্মৃতি এখনো আমাদের তাড়িয়ে বেড়ায়। এই রাতেই ঘুমন্ত নিরীহ বাঙালিদের ওপর ট্যাংক, কামান, মেশিনগান নিয়ে হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়েছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনী। নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছিল রাতভর। সেই রাতে তারা রাজধানী ঢাকা, যশোর, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, বগুড়াসহ বিভিন্ন জেলায় যে গণহত্যা শুরু করেছিল, মুক্তিযুদ্ধের পুরো ৯ মাস সারা দেশেই তা চালিয়ে গেছে। ৩০ লাখ বাঙালির প্রাণ গেছে সেই গণহত্যায়। তিন লাখ নারী সম্ভ্রম হারিয়েছে। জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে অগণিত বাড়িঘর। এ সবই মানবতাবিরোধী আন্তর্জাতিক অপরাধ। তাদের সেই অপরাধের অসংখ্য প্রমাণও রয়েছে। সারা বিশ্বে সেদিন প্রতিবাদের ঝড় উঠেছিল। বহু বিশ্বনেতা সেই গণহত্যার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক সত্য যে, স্বাধীনতার পাঁচ দশক পরও গণহত্যাকারী পাকিস্তানি বাহিনীর সেই সেনাদের বিচারের আওতায় আনতে পারিনি।
৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর বীর বাঙালির অসীম তেজের কাছে সেই পাকিস্তানি বাহিনীর পরাজয় হয়েছিল। ’৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জিত হয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশের। পাকিস্তানে আটকে পড়া বাঙালিদের ফিরিয়ে আনার স্বার্থে ত্রিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে আত্মসমর্পণকারী ৯৫ হাজার পাকিস্তানি সেনাকে ফেরত দেওয়া হয়েছিল পাকিস্তানের কাছে। চুক্তিতে উল্লেখ ছিল, যুদ্ধাপরাধের দায়ে চিহ্নিত ১৯৫ জন সেনা কর্মকর্তার বিচার পাকিস্তানের আদালতে করা হবে। পাকিস্তান সরকারেরই নিয়োগ করা হামুদুর রহমান কমিশনের প্রতিবেদনেও তাদের অপরাধের স্বীকৃতি রয়েছে। কিন্তু পাকিস্তান তাদের বিচার না করে সেই চুক্তি লঙ্ঘন করেছে। পাকিস্তানের চুক্তি ভঙ্গের পরও আমরা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারিনি, আন্তর্জাতিক আদালতেও যেতে পারিনি। এটা ’৭১-এর শহীদ, নির্যাতিতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য এক কষ্টের বিষয় হয়ে আছে।
পাকিস্তান যে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ গণহত্যা শুরু করেছিল, তার হাজার হাজার প্রমাণ রয়েছে। সবচেয়ে মর্মান্তিক বিষয় পৃথিবীতে কোনো গণহত্যা লিখিত আদেশে না হলেও বাংলাদেশে পাক বাহিনী গণহত্যা চালিয়েছিল জেনারেল রাও ফরমান আলীর লিখিত আদেশনামার ভিত্তিতে। ২৬ মার্চ যে ১৯ জন বিদেশী সাংবাদিককে দেশ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল, তাঁরা প্রায় সবাই সেই রাতের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে পুরো ৯ মাসই ছিল গণহত্যার নানা প্রতিবেদন। আমাদের আজকের বাংলাদেশ সেই গণহত্যার রক্তস্রোত ও মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত। আমরা তাই লাখো শহীদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করি। জানাই গভীর শ্রদ্ধা। ভয়াল কাল রাতের স্মৃতি জাগ্রত হোক আমাদের মহান স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের চেতনায়।