দক্ষিণ আফ্রিকায় আরেক ইতিহাসের হাতছানি

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ ২০০৬-২০০৭, দেশের বাইরে প্রথম আন্তর্জাতিক ওয়ানডে সিরিজে জয় পায় বাংলাদেশ। কেনিয়াকে ৩-০ তে হোয়াইটওয়াশ করে বিদেশের মাটিতে প্রথম সিরিজ জিতে ইতিহাস রচনা করে টাইগাররা। এরপর বিদেশের মাটিতে এই সাফল্য খুব বেশি নয়। ৩৪ সিরিজের বিপরীতে মাত্র ৬টিতে জয় তুলে নিতে পেরেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে সবশেষটি ২০২১ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। তবে এবার অন্যরকম এক ইতিহাসের সামনে দাঁড়িয়ে তামিম ইকবালের দল। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজ জয়ের হাতছানি। যেখানে কোনো ফরম্যাটে ম্যাচ জয়েরই স্মৃতি ছিল না বাংলাদেশের। তবে শুক্রবার তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে জয় দিয়ে আরেক ইতিহাসের অপেক্ষায় ‘টিম টাইগার্স’।
চলতি সিরিজের প্রথম ম্যাচে প্রোটিয়াদের ৩৮ রানে হারিয়ে নতুন কিছুর আশায় এখন টাইগার শিবির। আজ জোহানেসবার্গে দ্বিতীয় ম্যাচে জিতলেই বিদেশভূমে আরও একটি সিরিজ জয়ের সুযোগ তামিমদের সামনে। অধিনায়ক প্রথম জয়ে দারুণ আত্মবিশ্বাসী। তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ অবশ্যই এটি অনেক বড় জয় আমাদের জন্য। দক্ষিণ আফ্রিকায় (দ্বিপক্ষীয় সিরিজে) আগে কখনো জিতিনি। তাই এটি বিশেষ জয়। ছেলেদের নিয়ে অনেক গর্বিত, সবাই যেভাবে খেলেছে।’ এ ছাড়াও জয়ের ধারা অব্যাহত রাখলে আইসিসি’র ওয়ানডে সুপার লীগে বাংলাদেশের অবস্থান আরও শক্ত হবে। বর্তমানে ১৫ ম্যাচে ১১ জয়ে ১১০ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার শীর্ষেই আছে বাংলাদেশ।
অন্যদিকে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে এই জয়ের বীজ বপন হয়েছে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে। মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে টেস্ট জয় জন্ম দিয়েছিল এমন আরেকটি ইতিহাসের। ব্ল্যাকক্যাপদের মাটিতে তাদের বিপক্ষে প্রথম জয়ই বদলে দিয়েছে টাইগারদের আত্মবিশ্বাস। দলের জয়ে ফিফটি হাঁকিয়ে দারুণ অবদান রাখা তরুণ ইয়াসির আলী চৌধুরী রাব্বী এমনটাই মনে করেন। তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ। নিউজিল?্যান্ডকে মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে যখন হারাই এরপর থেকে বাংলাদেশ দলের মধ্যে একটা বিশ্বাস কাজ করা শুরু করে, আমরা যেকোনো দলকে বাইরের দেশেও হারাতে পারবো। এটাও ভিন্ন কিছু ছিল না। নিউজিল?্যান্ডে থাকতেও আমরা বলছিলাম, আমার যখন দক্ষিণ আফ্রিকায় যাবো তখন ওদেরও হারাতে পারবো। এই বিশ্বাস অবশ?্যই ছিল।’
প্রোটিয়াদের বিপক্ষে সিরিজে টাইগার ব্যাটারদের প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ ৭ উইকেট হারিয়ে তোলে ৩১৪ রান। তবে সফরকারীদের অসাধারণ বোলিংয়ে রাসি ফন ডার ডাসেন ও ডেভিড মিলারের দারুণ দু’টি ইনিংসের পরও স্বাগতিকরা থমকে যায় ২৭৬ রানে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম ২০ ওয়ানডেতে কখনো যেখানে তিনশ’ ছুঁতে পারেনি বাংলাদেশ, সেখানে তারা শেষ দুই ম্যাচেই তা করে দেখালো। আর দু’টিতেই পেলো জয়ের স্বাদ। দুই দলের আগের দেখায় ২০১৯ বিশ্বকাপে লন্ডনের ওভাল মাঠে বাংলাদেশ ২১ রানে জিতেছিল ৩৩০ রানের পুঁজি গড়ে। ২০১৭ সালে কিম্বারলিতে ৭ উইকেটে ২৭৮ রান ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে বাংলাদেশের দলীয় সর্বোচ্চ। সেই ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ওয়েস্ট-ইন্ডিজকে হারানো ছাড়া এই দেশের মাটিতে কোনো ফরম্যাটেই আর কোনো জয় ছিল না বাংলাদেশ দলের।
প্রোটিয়াদের মাটিতে এ জয় ছিল পুরো দলের সম্মিলিত নৈপুণ্যের ফসল। ম্যাচ শেষে অধিনায়ক তামিম ইকবালও বলেন এমন কথা। দলের সিনিয়র, জুনিয়র সবাই যেন জয়ের ক্ষুধা নিয়েই মাঠে নেমেছিল। এই জয়ে দলে ফিরেছে স্বস্তিও। দলের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান রানে ফিরেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের আগে দলের প্রস্তুতির চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল ‘সাকিব ইস্যু’। বিশ্রাম আর ছুটি চেয়ে এই সফরের আগে টানা ৭ দিন খবরের শিরোনামে ছিলেন বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার। আর এতসব বিতর্কে চাপা পড়ে যাচ্ছিল সব ফরম্যাটেই সাকিবের ব্যাট হাতে নিষ্প্রভ থাকার আলোচনা। সব ধরনের ফরম্যাট মিলিয়ে গত ২৫ ইনিংস ধরে ব্যাট হাতে ৫০ রানের গণ্ডি পেরোতে পারছিলেন না বাঁহাতি এই ব্যাটার। সর্বশেষ ফিফটির দেখা পেয়েছিলেন প্রায় ৮ মাস আগে। অবশেষে এই ম্যাচে এসে সেই ডেডলক ভাঙতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। ৭৭ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলে হয়েছেন ম্যাচ সেরাও। সব মিলিয়ে অধিনায়ক তামিম বড় কিছুর আশাই করছেন। বিশেষ করে দল নিয়ে দারুণ সন্তুষ্ট তিনি। তামিম বলেন, ‘শুরুতে লিটন ও আমি ভালো একটা ভিত গড়ে দিয়েছি। সাকিব ও ইয়াসির অবিশ্বাস্য খেলেছে। আমার মতে, ইয়াসিরের ইনিংসটি স্পেশাল ছিল। যেভাবে সে দক্ষিণ আফ্রিকার পেসারদের সামলেছে। শেষে মিরাজের দুই ছক্কা, আফিফের একটি করে চার-ছক্কা, রিয়াদের ২৫ রান সবকিছুই গুরুত্ব বহন করে। আমাদের জন্য এটি অনেক বড় বিষয় যে ফাস্ট বোলাররা খুব ভালো করছে, আমাদের ম্যাচ জেতাচ্ছে। কেউ যখন বাংলাদেশের নাম নেয়, সবাই চিন্তা করে স্পিন বোলিংয়ের কথা। তবে এখন শুধু এই ম্যাচে নয়, টসের সময়ই আমি বলেছিলাম গত দুই বছর ধরে আমাদের ফাস্ট বোলাররা খুব ভালো করছে। তারা সবাই তরুণ, সামনে লম্বা ক্যারিয়ার বাকি রয়েছে। আমি নিশ্চিত তারা শক্তি বাড়িয়েই চলবে।’