যুক্তরাজ্যে চীনের কূটনৈতিক চাল

0

মো: বজলুর রশীদ
আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে চীন-যুক্তরাজ্য বিপরীত মেরুতে অবস্থান করছে। ব্রিটেন সুযোগ পেলেই চীনবিরোধী ইস্যুতে পদক্ষেপ নিয়েছে। চীন এবার যুক্তরাজ্যের বিরুদ্ধে তার কূটনৈতিক তীর নিক্ষেপ করল। চীন বলছে, ফকল্যান্ড ব্রিটিশের নয়, এর মালিক আর্জেন্টিনা। এতে দারুণ ক্ষিপ্ত হয়েছে জনসন প্রশাসন। এর আগে ফকল্যান্ড ইস্যুতে চীনের সমর্থন থাকলেও এবারই প্রথম আর্জেন্টিনার সার্বভৌত্বকে সমর্থন দিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে যুক্তরাজ্যকে কোণঠাসা করতে চাইছে। চীন কেন যুক্তরাজ্যের বিরুদ্ধে দাঁড়াল তা বিশ্লেষণ করতে আগের ইতিহাসে উত্তর খোঁজার চেষ্টা করতে হবে। এসবের মধ্যে রয়েছে চীনবিরোধী তাইওয়ান ইস্যুতে যুক্তরাজ্যের সমর্থন, হংকং ইস্যুতে ‘আন্দোলনকারীদের’ সহায়তা- এসব; তা ছাড়া চীনবিরোধী প্রায় সব জোটে যুক্তরাজ্য একটি সক্রিয় দেশ হিসেবে রয়েছে। যুক্তরাজ্য তাইওয়ান নিয়ে চীনবিরোধী জোটে অংশ নেয়ায় চীন এবার ফকল্যান্ড ইস্যুকে সামনে ঠেলে দেয়। ফকল্যান্ড আর্জেন্টিনার ৪০০ মাইল পূর্বে এবং যুক্তরাজ্যের আট হাজার মাইল দক্ষিণে অবস্থিত। এ দ্বীপপুঞ্জ ব্রিটেন ও আর্জেন্টিনার মধ্যে দীর্ঘ দিন ধরে বিরোধের বিষয়। ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জ যা ইলাস মালভিনাস নামেও পরিচিত দক্ষিণ আমেরিকার একটি সার্বভৌম দেশ, আয়তন প্রায় ১২ হাজার ১৭৩ বর্গকিলোমিটার। দ্বীপগুলোতে আঞ্চলিক বিরোধ দেখা দেয় প্রথমে ব্রিটেন ও স্পেনের মধ্যে; তার পর ব্রিটেন ও আর্জেন্টিনার মধ্যে। যুক্তরাজ্য ১৮৩৩ সালে সেখানে একটি নৌ গ্যারিসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দ্বীপগুলোতে নিজের দাবি জানায়। ১৯৮২ সালের এপ্রিলে আর্জেন্টিনা এসব দ্বীপ আক্রমণ করে। ব্রিটিশরা নৌবাহিনী নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানায়, তীব্র লড়াইয়ের পরে ১৯৮২ সালের ১৪ জুন আর্জেন্টিনা আত্মসমর্পণ করে।
শত্রুতার অবসান এবং আর্জেন্টাইন বাহিনী প্রত্যাহারের সাথে সাথে যুক্তরাজ্যের প্রশাসন শুরু হয়। ব্রিটেনকে দ্বীপপুঞ্জের নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দেয়ার জন্য আর্জেন্টিনা আহ্বানের প্রতিক্রিয়ায় মার্চ ২০১৩ সালে একটি গণভোট অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেখানে জনসংখ্যার ৯৯.৮ শতাংশ যুক্তরাজ্যের অংশ হিসেবে থাকার পক্ষে ভোট দিয়েছিল। ফকল্যন্ড দ্বীপপুঞ্জের ওপর আর্জেন্টিনার সার্বভৌমত্বের দাবিকে চীন সমর্থন করে বেইজিং ফকল্যান্ড বিবাদে আগ্রহী হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে।
শীতকালীন অলিম্পিকের ফাঁকে আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট আলবার্তো ফার্নান্দেজ চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের সাথে দেখা করেছেন। তাদের বৈঠকের পরে যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে, আর্জেন্টিনা ফকল্যান্ডের ওপর ‘পুরোপুরিভাবে তার সার্বভৌমত্ব প্রয়োগ’ করতে সক্ষম হবে। এ দিকে ফার্নান্দেজ শির ‘এক চীন’ নীতিকে সমর্থন করেছেন, যা তাইওয়ানকে মূল ভ‚খণ্ডের অংশ হিসেবে ধরে নেয়। যৌথ বিবৃতিটি চীন ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে একটি কূটনৈতিক দ্বন্দ্বের সূত্রপাত করেছে, এরই মধ্যে বিভিন্ন ইস্যুতে পক্ষদ্বয় উত্তেজনায় জড়িয়ে পড়েছে। যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রসচিব লিজ ট্রাস চীনকে ফকল্যান্ডের সার্বভৌমত্বকে সম্মান করতে বলেছেন এবং দ্বীপগুলোকে ‘ব্রিটিশ পরিবারের অংশ’ বলে অভিহিত করেছেন। ট্রাসের বিবৃতির পর, যুক্তরাজ্যে চীনা দূতাবাস এ বিষয়ে আর্জেন্টিনার প্রতি তার সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে। এই প্রথমবার নয় যে, ফকল্যান্ড নিয়ে চীন আর্জেন্টিনাকে সমর্থন করেছে। ২০২১ সালের জুনে জাতিসঙ্ঘে চীনা দূত ঔপনিবেশিকতা বিলুপ্ত করার জন্য বিশ্বব্যাপী প্রচেষ্টার আহ্বান জানান এবং দ্বীপপুঞ্জে চীনের অবস্থানের রূপরেখা দেন। চীন ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জের ওপর আর্জেন্টিনার দাবিকে সমর্থন করার পর, আর্জেন্টিনার রাষ্ট্রপতি আলবার্তো ফার্নান্দেজ চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিন পিংয়ের সাথে দেখা করেছেন। তাদের বৈঠকের পরে যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আর্জেন্টিনা ফকল্যান্ডের ওপর পুরোপুরিভাবে তার সার্বভৌমত্ব প্রয়োগ করতে সক্ষম হবে। চীনের তরফ থেকে আরো বলা হয়, আর্জেন্টিনার কৃষিপণ্য ও রাস্তাঘাটে ব্যাপক বিনিয়োগ করবে চীন। আর্জেন্টিনার অর্থনীতি আমেরিকা ও আইএমএফের ওপর নির্ভরশীল। আমেরিকার বিরূপ আচরণ ও আইএমএফের দীর্ঘমেয়াদি সময় ক্ষেপণের কারণে আর্জেন্টিনা চীনের সাথে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি পছন্দ করেছে এবং চীনকে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছে। বেইজিংয়ে উইন্টার অলিম্পিক অনুষ্ঠানে দুই দেশের বৈঠকে গৃহীত পদক্ষেপ প্রসঙ্গে আরো জানা যায়, কৃষিপণ্য বাজারে ব্যাপক লগ্নি করবে চীন। রাস্তাঘাটেও বিনিয়োগ করবে অর্থাৎ বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রকল্প এবার আর্জেন্টিনাতেও কাজ শুরু করছে। প্রাথমিকভাবে সে দেশে চীন ২৩.৭ বিলিয়ন ডলার খরচ করবে। ব্রাজিলে বেশি বাণিজ্য হলেও আর্জেন্টিনা দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যবন্ধু হয়ে উঠবে বলে উভয় নেতা মনে করছেন। আর্জেন্টিনার উন্নয়নের জন্য এই বিআরআই প্রকল্প গুরুত্বপূর্ণ। জানা যায়, চীনের সাথে আর্জেন্টিনার বাণিজ্য সম্পর্ক ৫০ বছর হলেও নানা প্রতিকূলতায় সামনে এগোনো কঠিন ছিল, তাই নতুন এই চুক্তি সে কারণে ঐতিহাসিক।
বিশেষজ্ঞ ও কূটনৈতিক ভাষ্যকাররা বলছেন, তাইওয়ানের প্রতি সমর্থনের কারণে চীন ফকল্যান্ড ইস্যু ব্যবহার করছে এবং চীন তার প্রভাব বিস্তারকে আরো অর্থবহ করতে দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোর সাথে অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলছে। চীন ও আর্জেন্টিনার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ২০০৭ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ৫৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ১৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। চীন ২০২০ সালে আর্জেন্টিনার শীর্ষ ব্যবসায়িক অংশীদার হিসেবে ব্রাজিলকে প্রতিস্থাপন করেছে। আর্জেন্টিনা ২০২১ সালে এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকে যোগদান করেছে এবং এখন আনুষ্ঠানিকভাবে চীনের বিআরআইতে যোগ দিয়েছে। ফকল্যান্ড ইস্যুতে বেইজিং বারবার ব্রিটেনের ‘ঔপনিবেশিক মানসিকতার’ শক্ত জবাব দিয়েছে। চীন সম্প্রতি আর্জেন্টিনায় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য আট বিলিয়ন ডলারের চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এ দিকে হংকং নিয়েও ব্রিটিশ বরিস জনসন সরকারের সাথে অনেক বিরোধ চলমান। আফিম যুদ্ধে পরাজয়ের পর ১০০ বছর অপমানে ধুঁকেছে চীন, হারিয়েছে হংকং; ব্রিটিশ কোম্পানির জন্য চীনে আফিম বিক্রি লাভজনক হয়ে ওঠে। এ জন্য তারা আফিম যুদ্ধে জড়ায় এবং দেশটির উপকূলে হংকং দখল করে ঘাঁটি গেড়ে বসে। লাভজনক মাদক ব্যবসায় সুরক্ষিত রাখতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায়।
চীনের তৎকালীন চিং রাজবংশ এই বাণিজ্য ঠেকাতে মাদক পণ্যটিকে অবৈধ ঘোষণা করার পর দু’টি যুদ্ধ হলেও ইউরোপীয় সমর প্রযুক্তির কাছে শোচনীয়ভাবে হার মানে। অন্য দিকে আফিমের মূল্য চুকাতে উজাড় হতে থাকে চিং রাজকোষ। ইউরোপীয় বণিকরা তখন চীন থেকে চা কিনত এবং শুল্ক ফাঁকি দিয়ে বিপুল পরিমাণ আফিম চোরাচালান করত। সমগ্র দক্ষিণ চীন আফিমের অবৈধ আড্ডায় ছেয়ে যায়। লাখ লাখ কর্মক্ষম মানুষ আফিমে আসক্ত হয়ে পড়ে। চীনা জনসাধারণ আফিমে বুঁদ হয়, মারাত্মক আকার ধারণ করে সামাজিক অনাচার। চীনের জন্য আফিম এমন বিষ হয়ে উঠেছিল, যা পরিবার থেকে শুরু করে সরকারি শাসনব্যবস্থা, শান্তিশৃঙ্খলা, অর্থনীতি সব কিছু ধ্বংস করে দিচ্ছিল। পরবর্তী ১০০ বছরকে বলা হয় চীনের অপমানের শতক। চীন আর্থিক ও সামাজিকভাবে মুখ থুবড়ে পড়ে তাই বিংশ শতকের শুরুতে শিল্প, বিজ্ঞান আর অগ্রগতিতে চীন ছিল শোচনীয় অবস্থানে। এ পরিণতির জন্য আজো চীনারা ব্রিটিশদের দায়ী করে। চীনে সময়ের সাথে সাথে কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণ যত দুর্বল হতে থাকে, ততই বাড়তে থাকে ওপিয়াম এজেন্সির রমরমা ব্যবসায়। ১৯ শতকের শুরুতে মাত্র চার হাজার বাক্স হলেও, ১৮৮০ সালের দিকে সংস্থাটি ৬০ হাজার বাক্স আফিম রফতানি করে, ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক সরকারের দ্বিতীয় বৃহৎ রাজস্ব উৎস হয়ে ওঠে আফিম থেকে অর্জিত আয়। ব্রিটিশদের এমনতর ধ্বংসনীতি চীনের নেতৃত্ব ভোলেনি। তাই ব্রিটিশদের সাথে তেমন মাখামাখি ও সখ্য গড়ে ওঠেনি। হংকং নিয়েও দুই দেশের মধ্যে উত্তপ্ত অবস্থা বিরাজমান। হংকং ২৬০টিরও বেশি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ নিয়ে গঠিত। উল্লেখ্য, এখানে প্রায় আড়াই লাখ মুসলমান বসবাস করেন। মুসলমানরা পৌনে দুই শ’ বছর ধরে এখানে বসবাস করছেন। হংকংয়ের কুনলুন, আম্মার, চাই ওয়ান, স্ট্যানলি ও ইব্রাহিম মসজিদ বেশ নামকরা। বসতি স্থাপন করার পর থেকে হংকংয়ে মুসলমানের সংখ্যা কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেলেও মসজিদের সংখ্যা বাড়েনি। ফলে নামাজের সময় মসজিদগুলোতে প্রচণ্ড ভিড় হয়। বাণিজ্যিক কারণে হংকং স্বপ্নের দেশ হলেও সেখানে তেমন ভালো নেই মুসলমানরা; যদিও হংকংয়ের অর্থনীতি, বিশেষ করে ইসলামী সূচক বৃদ্ধিতে বেশ ভূমিকা রেখেছে মুসলিম জনগোষ্ঠী। কিন্তু অযাচিত ইসলামবিদ্বেষপূর্ণ নানা আচরণ মোকাবেলা করছে সেখানকার মুসলমানরা। বৌদ্ধ, তাওবাদ ও খ্রিষ্টধর্মের পর ইসলাম হংকংয়ের চতুর্থ বৃহত্তম ধর্ম। তবে হংকংয়ের বিপুলসংখ্যক মানুষ নাস্তিক্যবাদে বিশ্বাসী। হংকংয়ে বসবাসকারী মুসলিমদের মধ্যে ৬০ শতাংশ ইন্দোনেশিয়ান, ৪০ হাজার চীনা, ৩০ হাজার পাকিস্তানি মুসলিম রয়েছে।
১৯৯৭ সালের ১ জুলাই দেড় শ’ বছরের ঔপনিবেশিক শাসন শেষে চীনের অধীনে হংকংকে হস্তান্তর করে ব্রিটিশ প্রশাসন। ভোটাধিকারের পাশাপাশি চীনা একনায়কতন্ত্রবিরোধী বিক্ষোভ করে স্বাধীনতাকামীরা। হংকংয়ে ৭৫ লাখ মানুষের বসবাস, আয়তন এক হাজার ১০৪ বর্গকিলোমিটার, বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চল। ঘরবাড়ির দাম খুব চড়া। বিশ্বের অন্যতম প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্র এটি। উল্লেখ করা হয়েছে, দু’টি যুদ্ধে চীন পরাজয়ের পর ১৮৯৮ সালে হংকংকে ৯৯ বছরের জন্য লিজ নেয় ব্রিটেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এশিয়া ও আফ্রিকায় ব্রিটিশ উপনিবেশ দুর্বল হতে শুরু করে, স্বাধীন হয় বিভিন্ন দেশ। তবে ওই সময় হংকংয়ের স্বাধীনতার দাবি হালে পানি পায়নি। আশির দশকে এসে হংকংয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা শুরু করে ব্রিটেন ও চীন। ১৯৮৪ সালে সিনো-ব্রিটিশ যৌথ ঘোষণায় সিদ্ধান্ত হয়- হংকং চীনের মূল ভূখণ্ডের অধীনে যাবে। সেই অনুযায়ী ১৯৯৭ সালে ১ জুলাই হংকংয়ের শাসনভার বেইজিংয়ের হাতে তুলে দিয়ে বিদায় নেয় ব্রিটিশরা। সিনো-ব্রিটিশ যৌথ ঘোষণায় বলা হয়েছিল, হস্তান্তরের পর ৫০ বছরের জন্য হংকং সাংবিধানিকভাবে চীনের বিশেষ অঞ্চলের মর্যাদা পাবে। বিভিন্ন সময় হংকংয়ের শাসন ব্যবস্থায় নিজেদের অবস্থান জোরদার করার চেষ্টা করেছে চীন। ৫০ বছরের জন্য বিশেষ মর্যাদার কথা বললেও ২৩ বছরের মাথায় তা কার্যত উঠিয়ে নেয় বেইজিং। স্বায়ত্তশাসন ও স্বাধীনতার সুপ্ত আকাক্সক্ষা বারবার প্রকাশ্যে আসতে থাকে। ব্রিটেন বিদায় নিলেও বিক্ষোভকারীদের পক্ষে সবসময় পক্ষ নিয়েছে ও চীনবিরোধী কর্মকাণ্ডের অগ্নিশিখায় তেল ঢেলেছে। এমন অবস্থায় হংকংয়ের জন্য চীনা পার্লামেন্ট বিশেষ নিরাপত্তা আইন চালু করে। হংকংয়ে নতুন এ আইনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ শুরু হয়। আটক হয় শতাধিক। ব্রিটেন এ আইনকে সিনো-ব্রিটিশ যৌথ ঘোষণার লঙ্ঘন বলে আওয়াজ তুলতে থাকে। পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, হংকংয়ের সাড়ে তিন লাখ অধিবাসীর ব্রিটিশ পাসপোর্ট রয়েছে। এখন এখানকার আরো ২৬ লাখ অভিবাসী চাইলে পাঁচ বছরের জন্য ব্রিটেনে চলে আসতে পারবে। এরপর তারা নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করার সুযোগ পাবে। একই সুবিধা দিতে যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়াও। এসব পদক্ষেপ চীনকে দারুণভাবে ক্ষেপিয়ে তোলে। যুক্তরাজ্য একটি উদার ভিসা প্রোগ্রাম চালু করেছে, যা সম্ভাব্য লাখ লাখ হংকংবাসীর জন্য নাগরিকত্বের পথ উন্মুক্ত করে দেয়। ব্রিটিশ সরকারের অনুমান, আগামী কয়েক বছরে চার লাখ ৭৫ হাজার হংকংবাসী ইংল্যান্ডে চলে যাবে। হংকংয়ের সাথে যুক্তরাজ্যের বাণিজ্যিক স্বার্থ রয়েছে। হংকং ও যুক্তরাজ্য তাদের ঘনিষ্ঠ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বজায় রেখেছে। ২০১৯ সালে দুই দেশের মধ্যে মোট বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১৫.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ২০১৮ সালের চেয়ে ৬.২ শতাংশ বেশি। ২০১৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত গড় বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৪.১ শতাংশ। চীন যুক্তরাজ্যের নতুন পররাষ্ট্র সচিব লিজ ট্রাসকে সতর্ক করে দিয়েছে। লিজ লিথুয়ানিয়ার সাথে সংহতি প্রকাশ করার প্রতিশ্রুতি দেয়ায় চীন, লন্ডন ও বেইজিংয়ের মধ্যে সম্পর্কের ক্ষেত্রে ‘নতুন বাধা’ তৈরি না করতে বলেছে। লিথুয়ানিয়ার সাথে চীনের খারাপ সম্পর্ক। কেননা লিথুয়ানিয়া তাইওয়ানকে স্বাধীন দেশের মর্যাদা দেয় এবং ‘এক চীন দুই সিস্টেম’ নীতি মানে না। তাই এ দেশটি ইউরোপে বেইজিংয়ের প্রধান শত্রু হয়ে উঠেছে। চীন মনে করে, জেনে শুনেই লিজ সেখানে ‘গাজর’ ফেলেছেন। ফকল্যান্ড ইস্যু জনসন সরকারের জন্য পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়াবে, তা নিশ্চিত।
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত যুগ্মসচিব ও গ্রন্থকার