আন্তর্জাতিক বাজারে কমেছে ডিজেলের দাম

0

নভেম্বরে বৃদ্ধি করা জ্বালানি তেলের দাম কমানোর সময় এসেছে সরকার আন্তরিক হলেই তা সম্ভব হবে। বিশ্ববাজারে কমছে জ্বালানি তেলের দাম। অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম নেমে এসেছে প্রতি ব্যারেল ৬৬ ডলারে। এই দাম ২০২০ সালের পর সবচেয়ে কম। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দামে এটি দ্বিতীয় দরপতন। এর আগে ২৭ নভেম্বর ব্যারেল প্রতি অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম নেমে এসেছিল ৬৮ ডলারে। জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, ইউরোপ, আমেরিকায় করোনাভাইরাস ওমিক্রনের সংক্রমণ যেভাবে বাড়ছে তাতে তেলের দাম আরও কমে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। আসন্ন শীতে করোনা সংক্রমণ বাড়বে বহুলাংশে, সেই আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন চিকিৎসা বিজ্ঞানী ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। এর ফলে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারাও কমে যেতে পারে। ইতোমধ্যেই কোন কোন দেশে দিতে হয়েছে লকডাউন-শাটডাউন। ফলে, স্বভাবতই কমবে জ্বালানি তেলের চাহিদা। যুক্তরাষ্ট্রের তেল কোম্পানিগুলোর বিশ্ববাজারে তেলের সরবরাহ বাড়ানোও দরপতনের আর একটি কারণ। গত ২৩ নবেম্বর জ্বালানি তেলের দাম কমাতে দেশের পেট্রোলিয়াম রিজার্ভ থেকে ৫ কোটি ব্যারেল তেল বাজারে ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। উল্লেখ করা আবশ্যক যে, দুই বছর আগে করোনা বা কোভিড-১৯ অতিমারীর কারণে প্রতিরোধ ব্যবস্থা হিসেবে বিশ্বব্যাপী লকডাউন-শাটডাউন কার্যকর করার সময় তেলের দাম নেমে এসেছিল ব্যারেল প্রতি মাত্র ২০ ডলারে। ফলে, অনিবার্য চরম অর্থনৈতিক মন্দার কবলে নিপতিত হয়েছিল বিশ্ব। করোনার প্রকোপ কমে যাওয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্য শিল্প-কারখানা সচলসহ বৈশ্বিক অর্থনীতি যখন আবার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে, তখন নতুন করে ওমিক্রনের সংক্রমণ জ্বালানি তেলের দরপতনে পুনরায় অশনিসঙ্কেত হিসেবে দেখা দিয়েছে।
বিশ্ববাজারে তেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে গত নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে। প্রতি লিটার ডিজেলের দাম বাড়ানো হয়েছে ১৫ টাকা এবং কেরোসিন ১০ টাকা। এর অনিবার্য বিরূপ প্রভাব পড়েছে জাতীয় অর্থনীতিতে। যানবাহনের ভাড়াসহ নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে গেছে রাতারাতি। কেরোসিনের দাম বাড়ায় এর চাপ সরাসরি গিয়ে পড়েছে গরিবের ঘাড়ে। গ্রামাঞ্চলে এখনও ল্যাম্প কুপি-হারিকেন প্রচলিত, বিশেষ করে যেখানে বিদ্যুৎ নেই সে সব অঞ্চলে। সিংহভাগ সেচ পাম্পও ডিজেলচালিত। সরকারের তরফে মূল্য বৃদ্ধিতে ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে ভর্তুকির ক্ষতি পুষিয়ে নিতে জ্বালানির এই মূল্যবৃদ্ধি। তখন এও বলা হয় যে, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমলে এর সঙ্গে সমন্বয় করে দেশেও কমানো হবে। স্বভাবতই এতে আশান্বিত হয়েছে মানুষ। এখন বিশ্ববাজারে দাম কমতে শুরু করেছে তেলের। গত ৮ মাসে যা হয়েছে সর্বনিম্ন। আগামীতে আরও কমতে পারে। এই প্রেক্ষাপটে সরকার কি আদৌ জ্বালানি তেলের দাম কমানোর চিন্তা-ভাবনা করছে? প্রতিবেশী ভারতসহ অনেক দেশ বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দৈনন্দিন দামের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে মূল্য সমন্বয় করে থাকে। সেই দিকে অগ্রসর হওয়া উচিত। সরকারের নিশ্চয় অজানা নেই, দেশের মানুষের আর্থিক অনটনের কথা। সামনে বোরো চাষ মওসুম ডিজেলের মূল্য কমালে কৃষক সরাসরি সুফল পাবে। উৎপাদন ব্যয় কমলে সাধারণ ক্রেতাও উপকৃত হবে।