ক্যাম্পে আটকে পড়া বাংলাদেশিদেও জিম্মি করেছে ইউক্রেন সেনারা

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ ইউক্রেনের জুরাভিস নামের শহরের এক ডিটেনশন সেন্টারে ৫ বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন দেশের আটকে পড়া ১২০ জন মানুষকে জিম্মি করে ‘মানব ঢাল’ হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। জুরাভিস শহরটি ইউক্রেন-বেলারুশ সীমান্ত থেকে এর দূরত্ব প্রায় ১৩০ কিলোমিটার। শহরটি থেকে পোল্যান্ড সীমান্তের দূরত্বও প্রায় একই। দেশটিতে রাশিয়ার সামরিক আগাসন শুরু হলে লাখ লাখ মানুষ সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আশ-পাশের দেশগুলোতে যাওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু, এই শহরের একটি ক্যাম্পে, যেটি আগে ছিল ডিটেনশন সেন্টার, আটকে আছেন বিভিন্ন দেশের নারী ও শিশুসহ মোট ১২০ জন মানুষ। তাদের মধ্যে ৫ জন বাংলাদেশি। আটকে পড়া বাংলাদেশিরা জানান, ইউক্রেনের সেনারা মানব ঢাল হিসেবে সেখানে তাদের জিম্মি করে রেখেছে। তারা জিম্মিদশা থেকে উদ্ধারের জন্য আকুতি জানিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে।
ক্যাম্পে আটকে থাকাদের একজন রিয়াদ মালিক জানান, এই ডিটেনশন সেন্টারে আগে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকলেও যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে সেগুলো আর নেই। খাবার, পানি, বিদ্যুৎসহ সব বিষয়েই সংকটে রয়েছেন তারা। তিনি বলেন, আমাদের ওপর অত্যাচার করা হচ্ছে, আমাদের ফোন কেড়ে নিয়েছে। আমার এই ফোনটি লুকিয়ে রেখেছিলাম বলে আপনার সঙ্গে কথা বলতে পারছি। আমরা কোনো মিডিয়ার সঙ্গে যেন যোগাযোগ করতে না পারি সে জন্যই ফোন নিয়ে নিয়েছে। আমাদেরকে তারা এখানে আটকে রেখেছে, জিম্মি করে রেখেছে। আমাদেরকে মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ঠিকমতো খেতেও দেওয়া হচ্ছে না।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরিচালনাধীন এই ক্যাম্পে যারা আছেন তারা অনেক খারাপ অবস্থায় আছেন জানিয়ে তিনি আরও বলেন, আমাদের এই ক্যাম্পের চারপাশে ইউক্রেন সামরিক বাহিনীর অনেক সদস্য জড়ো হয়েছেন, প্রায় ৫ হাজারের মতো হবে। রাশিয়া বোমা বা ক্ষেপনাস্ত্র মারলে আমরা সবাই মারা যাব। তখন ইউক্রেন বলবে, রাশিয়া বেসামরিক নাগরিক হত্যা করছে। আমরা এখন মানব ঢালে পরিণত হয়েছি। ক্যাম্প থেকে বোমাবর্ষণ ও গুলির শব্দ শুনতে পাচ্ছেন তারা। এখন পর্যন্ত কোনো আঘাত না এলেও নিশ্চিত মৃত্যুর জন্যই যেন দিন গুনছেন এই মানুষগুলো। রাশিয়া বরাবরই বলে আসছে বেসামরিক মানুষ তাদের লক্ষ্য নয়। সামরিক বাহিনীকে লক্ষ্য করে রুশ সেনারা এই এলাকায় হামলা চালালে ‘মানব ঢাল’ এই ১২০ জনের মধ্যে অনেকে বা সবাই মারা যেতে পারেন। রাশিয়া বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা করছে না এবং ইউক্রেনীয় সেনারা আক্রমণ না করে আত্মসমর্পণ করলে তাদেরও রুশ সেনারা হত্যা করছে না বলে জানান দেশটির একটি ডিটেনশন ক্যাম্পে আটকে থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাংলাদেশি। কাজের খোঁজে ইউরোপ পাড়ি দেওয়ার জন্য বাংলাদেশিরা বিভিন্ন রুট ব্যবহার করে। তার মধ্যে অন্যতম রাশিয়া। রাশিয়া থেকে ইউক্রেন হয়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে প্রবেশ করেন অনেকেই। এই রুট ধরেই ইউরোপের উদ্দেশে ২০১৮ সালে বাংলাদেশ ছেড়েছিলেন রিয়াদ। উদ্ধার পাওয়ার আশায় পোল্যান্ডে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছেন রিয়াদ মালিক। কিন্তু সেখান থেকে সব শুনে ‘ঠিক আছে’ বলা হলেও কোনো ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে কি না তা তাদের জানানো হয়নি বলে অভিযোগ তার। রিয়াদ মনে করেন, আমাদের এখান থেকে উদ্ধার করার জন্যে বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগ দরকার। সরকার যদি রাশিয়ার সঙ্গে কথা বলে, যেভাবে নাবিকদের উদ্ধার করা হলো সেভাবে আমাদের উদ্ধার করতে পারে। পোল্যান্ড দূতাবাস কিছু করতে পারবে বলে মনে হয় না। ইউক্রেনের মিকোলাইভ শহরের অপর একটি ডিটেনশন ক্যাম্পে আটকে আছেন আরও প্রায় ৬০ জন, যাদের মধ্যে ২ জন বাংলাদেশি।
রাশিয়া হয়ে ইউরোপ যাওয়ার উদ্দেশে ২০২০ সালের বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়া এই ২ জনকে আদালত ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দিলেও পোল্যান্ড সীমান্ত থেকে প্রায় ৯০০ কিলোমিটার দূরের এই ক্যাম্পে জোর করে আটকে রাখা হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ক্যাম্পের একজন বাংলাদেশি বলেন, এই শহরটি গতকাল রাশিয়া দখল করে নিয়েছে। রাশিয়ার বোমায় স্থানীয় বিদ্যুৎকেন্দ্র ধ্বংস হয়ে গেছে। বিদ্যুৎ নেই। তীব্র শীতে হিটিং সিস্টেম চলছে না। এখানে পানি নেই। এত শীতের দেশে হিটার ছাড়া থাকা যে কী কষ্টের তা বুঝাতে পারব না। আমাদেরকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করার জন্যই শুধু তারা আটকে রেখেছে। ক্যাম্পের অপর বাংলাদেশি জহিরুল ইসলাম। নোয়াখালী জেলার বাসিন্দা জহিরুল বলেন, আদালত আমাদের ছেড়ে দিতে বললেও কর্তৃপক্ষ ছাড়ছে না। ছেড়ে দিলে আমরা নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে পারতাম। এখানে যুদ্ধ হচ্ছে, একটু আগেও আমাদের ক্যাম্পের সামনে দিয়ে রাশিয়ান ট্যাংক গেল। ক্যাম্পের ওপর দিয়ে যুদ্ধবিমান উড়ছে। গতকাল (বুধবার) সারাদিন আমরা বাঙ্কারে ছিলাম।
সাময়িক যুদ্ধবিরতির ঘোষণা রাশিয়ার
ইউক্রেনের সঙ্গে সাময়িক যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেওয়া হল রাশিয়ার পক্ষ থেকে। সংবাদ সংস্থা এএফপি-র তথ্য অনুযায়ী জানা গেছে যে, আজভ সাগরের তীরের বন্দর শহর মারিওপোল এবং ভলনোভাখা শহরের বাসিন্দাদের দেশ ছাড়ার সুযোগ দিয়ে সাময়িকভাবে এই যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়েছে রাশিয়া। দশম দিনে এসে এই সাময়িক যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হল রাশিয়ার পক্ষ থেকে। চলতি সপ্তাহে বেলারুশে দ্বিতীয় দফার শান্তি বৈঠকের পরে রাজধানী কিয়েভসহ ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরের অসামরিক বাসিন্দাদের নিরাপদে সরে যাওয়ার সুযোগ দিতে ঐকমত্য হয়েছিল। তারই ভিত্তিতে মস্কোর এই সিদ্ধান্ত বলে মনে করা হচ্ছে। রাশিয়া যুদ্ধের কৌশল বদলাচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছিল। তার মধ্যেই এই সাময়িক যুদ্ধবিরতি আসল। সাড়ে পাঁচ ঘণ্টার জন্য যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছে রাশিয়া। তবে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা করা হলেও রাশিয়া তা মানছে না বলে অভিযোগ করছে ইউক্রেন। মারিউপোলের ডেপুটি মেয়র সেরহাই অরলভ বিবিসিকে বলেছেন, ‘রুশরা আমাদের ওপর এখনো বোমা ফেলছে। এখনো তারা আমাদের ওপর গোলাবর্ষণ করে চলেছে।’ ‘মারিউপোলে কোনো যুদ্ধবিরতি নেই, শরণার্থী যাতায়াতের পথেও কোনো যুদ্ধবিরতি নেই। আমাদের বেসামরিক মানুষ শহর ছাড়তে চায়, কিন্তু তারা গোলাবর্ষণের হাত থেকে বাঁচতে পারছে না।’

দেশের স্বার্থে ভোট দেওয়া থেকে বিরত থেকেছি: পরিকল্পনামন্ত্রী
লোকসমাজ ডেস্ক॥ পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, ‘বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্য, কর্মচারী না, ভোট দেওয়া না দেওয়ার হিসাব আমরা করব আমাদের দেশের স্বার্থের কথা চিন্তা করে।’ তিনি বলেন, মূলত দেশের স্বার্থের কথা চিন্তা করে আমরা ভোট দেয়নি। শুধু আমরা একা নয় আরও অনেক রাষ্ট্র আমাদের সঙ্গে একই অবস্থানে গিয়ে ভোট দেওয়া থেকে বিরত থেকেছে। শনিবার সকালে সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার মিনা বাজারে ৯ কোটি ৯৯ লাখ টাকার অভ্যন্তরীণ রাস্তা উন্নয়নকাজের উদ্বোধন শেষে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। মন্ত্রী আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুদ্ধ পছন্দ করেন না। আমরা রাশিয়া-ইউক্রেনের কাছে আবেদন করেছি আপনারা শান্তি প্রিয় অবস্থানে গিয়ে সমঝোতা করুন, বাংলাদেশ যতটুকু পারে সাহায্য করবে।