ইউক্রেনে আটকেপড়া জাহাজের ২৮ নাবিক যেমন আছেন

0

মিজানুর রহমান॥ শঙ্কা ছিল যা, হয়েছেও তাই। ইউক্রেনের অলভিয়া সমুদ্রবন্দরে আটকে থাকা বাংলাদেশি জাহাজ ‘এম ভি বাংলার সমৃদ্ধি’তে হামলা হয়েছে। এতে নিহত হয়েছেন ইঞ্জিনিয়ার মো. হাদিসুর রহমান আরিফ (২৯)। হামলার পর এখনো অক্ষত আছেন ওই জাহাজের ২৮ নাবিক। তবে তারা প্রতিটি মুহূর্ত কাটাচ্ছেন আতঙ্কের মধ্যেই। মৃত্যুরমুখ থেকে ফিরে আসা নাবিকরা প্রিয়জনদের কাছে ভিডিও বার্তা পাঠাচ্ছেন বাঁচার আকুতি নিয়ে। এসব ভিডিওতে কান্নাজড়িত কণ্ঠে সরকারকে তাদের উদ্ধারের জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানান। তবে নাবিকদের এই আকুতির যেন কোনো সদুত্তর নেই সংশ্লিষ্টদের। আটকে পড়া এই নাবিকদের কীভাবে উদ্ধার করা হবে তার সুনির্দিষ্ট উত্তর মিলছে না কারও কাছে। প্রশ্ন করা হলে শুধু তাদের উত্তর ‘চেষ্টা চলছে’। স্বজনদের কাছে পাঠানো এক ভিডিও বার্তায় এম ভি বাংলার সমৃদ্ধির সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার জানান, আমাদের জাহাজে হামলা হয়েছে। একজন মারা গেছেন। আমাদের পাওয়ার সাপ্লাই নেই। ইমার্জেন্সি জেনারেটর দিয়ে পাওয়ার সাপ্লাই হচ্ছে। আমরা মৃত্যুর মুখোমুখি রয়েছি। তবুও এখনো উদ্ধার করা হয়নি। তিনি বলেন, দয়া করে আমাদের বাঁচান। আমরা এখানে সবাই মৃত্যুর মুখে আছি। আমাদের বাঁচান। আমাদের জন্য কোনো জায়গা থেকে সাহায্য আসেনি। আরেকটি ভিডিও বার্তায় জাহাজে থাকা এক নারী নাবিক বলেন, ‘আমি বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজ থেকে বলছি। আমাদের জাহাজে কিছুক্ষণ আগে বোমা হামলা হয়েছে। থার্ড ইঞ্জিনিয়ার স্যার মারা গেছেন। আমরা খুব বিপদে আছি। আমাদের এখান থেকে উদ্ধার করুন প্লিজ।’ উদ্ধারের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) নির্বাহী পরিচালক (বাণিজ্য) ড. পীযুষ দত্ত জাগো নিউজকে বলেন, ২৮ নাবিক অক্ষত আছেন এবং তারা জাহাজেই আছেন। জাহাজ থেকে তাদের তো হুট করে নামানো যায় না। নিরাপত্তা নিশ্চিত হলেই নামানো হবে। আপাতত অপেক্ষাকৃত নিরাপদ হওয়ায় তারা জাহাজেই আছেন।
জানতে চাইলে বিএসসির মহাব্যবস্থাপক ক্যাপ্টেন মো. মুজিবুর রহমান বলেন, আগে জীবন, পরে সম্পদ। জাহাজ যেহেতু আনা যাচ্ছে না, সেহেতু জাহাজ থেকে নাবিকদের উদ্ধার করার চেষ্টা চলছে। সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করছেন। আপাতত জাহাজ রেখে আমরা নাবিকদের নিরাপদে স্থানান্তরের চেষ্টা করছি। তবে সবশেষ পাওয়া তথ্য মোতাবেক নাবিকরা জাহাজেই রয়েছেন। তাদের কাছে পর্যাপ্ত খাদ্যসামগ্রী রয়েছে। আরেক প্রশ্নের জবাবে ক্যাপ্টেন মুজিবুর রহমান বলেন, হামলার ঘটনায় নিহত হাদিসুরের দেহ অনেকটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তার দেহাবশেষ জাহাজটির ফ্রিজেই সংরক্ষণ করা হয়েছে। উদ্ধার প্রক্রিয়ার বিষয়ে জানতে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরীকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। এছাড়া ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও কোনো সাড়া মেলেনি। তবে একই মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) লায়লা জেসমিন জাগো নিউজকে বলেন, সরকার নাবিকদের উদ্ধারের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এদিকে বৃহস্পতিবার (৩ মার্চ) সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আমরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে যোগাযোগ রাখছি। ইতোমধ্যে আমাদের পোল্যান্ডের দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। আমাদের সচিবের সঙ্গে বেশ কয়েকবার কথা হয়েছে, জাহাজের ক্যাপ্টেনের সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন। তারাও চাচ্ছেন, তাদের নিরাপত্তাটা নিশ্চিত হোক। যদি জাহাজ থেকে নেমে যায়, তবে নিরাপত্তা ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি, আরও নিরাপদ রাস্তা বের করতে পারি। কূটনৈতিক পর্যায়ে ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছি। তাহলে হয়তো তাদের সেখান থেকে নিয়ে আসতে পারবো।
এর আগে বাংলাদেশ সময় বুধবার (২ মার্চ) দিবাগত রাত সাড়ে ৯টার দিকে এম ভি বাংলার সমৃদ্ধিতে হামলার ঘটনা ঘটে। এতে জাহাজে লাগা আগুন তাৎক্ষণিকভাবে নাবিকদের প্রচেষ্টায় নেভানো হয়। এ ঘটনায় জাহাজের থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. হাদিসুর রহমান মৃত্যুবরণ করেন। হাদিসুরের বাড়ি বরগুনার বেতাগী উপজেলার হোসনাবাদ ইউনিয়নের কদমতলা বাজার এলাকায়। তিনি ওই এলাকার চেয়ারম্যান বাড়ির বাসিন্দা মো. আবদুর রাজ্জাক (অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক) ও আমেনা বেগম দম্পতির বড় ছেলে। বিএসসি সূত্রে জানা গেছে, যুদ্ধ শুরুর আগে ২২ ফেব্রুয়ারি এম ভি বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজটি ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে পৌঁছায়। ওই বন্দর থেকে পণ্য আনার কথা থাকলেও যুদ্ধের কারণে সেটি আটকে যায়। এরপর থেকে ২৯ জন নাবিক নিয়ে জাহাজটি ওই বন্দরে অবস্থান করছে। চীনে তৈরি ‘এম ভি বাংলার সমৃদ্ধি’ জাহাজ ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর বিএসসির বহরে যুক্ত হয়। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা চালায় রাশিয়া। টানা কয়েকদিন ধরেই দুপক্ষের মধ্যে চলছে লড়াই। এরই মধ্যে বেলারুশে শান্তি সংলাপে বসেছিল রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রতিনিধি দল। তাদের আলোচনা শেষ হয়েছে। তবে কোনো সমাধান না আসায় দ্বিতীয় দফা বৈঠকে সম্মত হয়েছে দুপক্ষই। অন্যদিকে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা নিষেধাজ্ঞার ধাক্কা টের পেতে শুরু করেছে রাশিয়া। বৈশ্বিক ব্যাংকিং পেমেন্ট সিস্টেম সুইফট থেকে বাদ পড়ার পরপরই দেশটির মুদ্রা রুবলের রেকর্ড দরপতন হয়েছে।