বাম্পার ফলনের পরও কৃষকের টিকে থাকার ভরসা বিচালি

0

মাসুদ রানা বাবু ॥ যশোরের মনিরামপুর উপজেলার ঝাঁপা গ্রামের কৃষক মতিয়ার রহমান চলতি বোরো ধান কাটার মৌসুমে একজন শ্রমিকের মূল্য দিয়েছেন ১ হাজার ৬ শ টাকা। অন্যান্য খরচতো রয়েছে। অথচ, এক মণ ধান বিক্রি করেছেন ১ হাজার ২৩০ টাকায়। বিঘা প্রতি তিনি যে ধান পেয়েছেন, তা দিয়ে উৎপাদন খরচই উঠছে না। তাই বোরো ধানের বাম্পার ফলন হলেও মতিয়ার রহমানের মুখে হাসি নেই। উৎপাদন খরচের তুলনায় ধানের ন্যায্য মূল্য না পেয়ে তিনি পুরোপুরি হতাশ হয়ে পড়েছেন। লাভের মুখ দেখতে না পেয়ে ধান চাষের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন তিনি।
কৃষক মতিয়ার রহমান জানান, ধান রোপণ থেকে শুরু করে ঘরে ওঠা পর্যন্ত বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে সর্বনিম্ন ২০ হাজার টাকা। তার মতে, বিঘা প্রতি ( ৩৩ শতাংশ) জমি প্রস্তুত করতে খরচ হয়েছে ২ থেকে আড়াই হাজার টাকা। চারা রোপণে ২ হাজার টাকা, পরিচর্যায় দেড় থেকে দুই হাজার টাকা, সার কীটনাশক বাবদ ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা। এর বাইরে বিদ্যুৎ চালিত পাম্প দিয়ে সেচ খরচ বাবদ গুনতে হয়েছে ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা । ধান কাটা ও আঁটি বাঁধা বাবদ ৬ হাজার টাকা, ক্ষেত থেকে বাড়ি আনা বাবদ ২ হাজার টাকা এবং ঝাড়া আড়াই হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। তিনি জানান, ধান রোপণের মৌসুমের চেয়ে কাটার মৌসুমে শ্রমিকের দাম বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচও বেড়ে যায়। এবার ধান কাটা মৌসুমে সর্বনিম্ন শ্রমিকের মূল্য ছিল ৬০০ টাকা থেকে ১৬০০ টাকা পর্যন্ত।
সদর উপজেলার চূড়ামনকাটি এলাকার কৃষক আমিন উদ্দিনে বলেন, তার অঞ্চলে বোরো ধানের উৎপাদন খরচ আরও বেশি। কারণ সার কীটনাশক ছাড়া অন্যান্য উপকরণের দাম বেশি। তিনি বলেন, ধান উৎপাদন করে লাভ দূরে থাক খরচই ওঠে না। কেবলমাত্র পেট বাঁচানোর জন্যে ধান চাষ করি। উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় অনেক কৃষক ধান চাষের আগ্রহ হারিয়ে অন্য চাষের দিকে ঝুঁকছেন। তিনি নিজেও এবার কম জমিতে ধান চাষ করেছেন।
ঝিকরাগাছার বাঁকড়া অঞ্চলের কৃষক আবুল হাশেম বলেন, ধান চাষে কোনো লাভ নেই। এখন নিজের জন্য ধান চাষ করতে হবে, যাতে বছরের খাবার ঘরে থাকে, গো-খাদ্য হিসেবে বিচালি যাতে কিনতে না হয়। অধিক জমিতে ধান চাষ করলে, কৃষক বাঁচবে না। তাই বাধ্য হয়ে অন্য চাষের চিন্তা করছি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক সুশান্ত কুমার তরফদার জানান, এ বছর সরকারিভাবে প্রতিমণ ধানের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ২৮০ টাকা। ধানের মূল্য আরও একটু বেশি নির্ধারণ করলে কৃষক লাভবান হতো। তবে উৎপাদন খরচ বেশি হলেও কৃষক নিজের খাদ্য নিজে যোগান দিতে পারছে, সেদিক দিয়ে তারা লাভবান। তিনি জানান, এ বছর জেলায় বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৬০ হাজার ৫০০ হেক্টর। সেখানে চাষ হয়েছে ১ লাখ ৬০ হাজার ৭৮৫ হেক্টর। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি। বর্তমানে শতকরা ৯০ ভাগ ধান কৃষকের ঘরে উঠে গেছে। বাকি ১০ ভাগ ধান অল্প কিছু দিনের মধ্যে কৃষকের ঘরে উঠবে।