এখন কেন রাজনৈতিক আদর্শ খোঁজা হচ্ছে, প্রশ্ন চাকরিচ্যুত শরীফের

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চাকরিচ্যুত কর্মকর্তা মো. শরীফ উদ্দিন। মঙ্গলবার (১ মার্চ) বিকেলে দুদক কার্যালয়ে গণমাধ্যমের কাছে তিনি নিজের রাজনৈতিক অবস্থান ব্যাখ্যা করেন। মঙ্গলবার (১ মার্চ) একটি বিভাগীয় মামলার হাজিরা দিতে এসে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তিনি।
ছাত্রজীবনে রাজনৈতিক আদর্শ নিয়ে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি একজন ভেটেরিনারি চিকিৎসক। ছাত্রমৈত্রীর পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলাম। রাশেদ খান মেননের এলাকা বাবুগঞ্জে আমাদের ক্যাম্পাস ছিল। রাশেদ খান মেনন বর্তমান ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি। আমি তার দল করতাম, ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলাম। বর্তমান সরকারের আমলে আমি চাকরি পেয়েছি। এনএসআই, ডিজিএফআই’র ভেরিফিকেশন হওয়ার পরই চাকরি পেয়েছি। এখন রাজনৈতিক আদর্শ আসছে কেন? বরং যারা আমাকে হুমকি দিয়েছে, তাদের রাজনৈতিক আদর্শ খোঁজা উচিত।’ শুধু আপনার বিরুদ্ধে কেন অভিযোগ করা হয়েছে- সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা আমার কাছে হাস্যকর মনে হয়েছে। আমি রোহিঙ্গাদের ভুয়া ভোটাধিকার নিয়ে কাজ করেছি। আমি দেশের স্বার্থে কাজ করেছি। রোহিঙ্গারা বিষফোঁড়া, এটা আমি বের করেছি। আমার কাছে এখনো তথ্য আছে, কারা কীভাবে এই সার্টিফিকেটগুলো বানাচ্ছে। আমি চারজনকে গ্রেফতার করেছি। আপনারা বলেন, গত বছরের ৩০ জুনের পর আজ পর্যন্ত কি আর নতুন কোনো মামলা তদন্ত হয়েছে? এই মামলার নথিতে ছয়জন ছিল, আমি সর্বকনিষ্ঠ মেম্বার। যারা দায়িত্বে ছিলেন, ডিডি ছিলেন, ওনাদের কোনো বক্তব্য নেওয়া হয়নি। ওনারাও স্বাক্ষর করেছেন। তাদের দোষ নেই, আমার দোষ কেন আসবে?’
শরীফ বলেন, ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যে জিরো টলারেন্স নীতি রয়েছে তা বাস্তবায়ন করতে গিয়েই প্রভাবশালীদের রোষানলে পড়েছি।’ প্রধানমন্ত্রীকে মা সম্বোধন করে তিনি বলেন, ‘আপনি আমার মা। মা আমি বড় অসহায়। পরিবার ও বাচ্চা নিয়ে খুব সমস্যায় আছি। আমি দুই সপ্তাহ ধরে ঘুমাতে পারছি না। আমাকে সুযোগ দেওয়া হোক। কমিশনের যত অভিযোগ রয়েছে তার ব্যাখ্যা দিতে পারবো। সব ডকুমেন্টস আমার কাছে আছে। আমাকে (সরাসরি অপসারণ) করে দুদকে আসার পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আমি আসলে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি হিসেবে আসতে পারবো।’ অপসারিত হওয়ার পরও বিভাগীয় মামলায় হাজির দিতে হচ্ছে জানিয়ে শরীফ বলেন, ‘আমার কাছে খুব বিব্রতকর পরিস্থিতি যে দুদকের অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি হিসেবে হাজিরা দিতে এসেছি। আপনারা জানেন গত ১৬ ফেব্রুয়ারি আমাকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্য আমি অপসারিত হওয়ার পরও বিভাগীয় মামলায় হাজিরা দিচ্ছি। এটা আইনের দৃষ্টিতে কতটুক সাম্য আমি বলতে পারবো না। তবে এটা নিয়ে আমি বিব্রত। আমার বিরুদ্ধে তিনটি ডিপি চলমান। প্রথমটা হলো ব্যাংক হিসাব নো-ডেবিট সংক্রান্ত, দ্বিতীয়টা নথি হস্তান্তরে বিলম্ব কেন ও তৃতীয়টা দেরিতে কর্মস্থলে যোগদান কেন- এ সংক্রান্ত। তিনি বলেন, ‘আজকের বিভাগীয় মামলার বিষয়বস্তু ছিল আমি নথি হস্তান্তরে দেরি করেছি কেন? আমি সশরীরে হাজির হয়ে যাবতীয় প্রমাণ দিয়েছি দুদকে।’ তিনি বলেন, ‘আমার ঊর্ধ্বতনদের মিসগাইড করা হয়েছে। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি চাকরিবিধি অনুযায়ী কমিশন বরাবর আদেশ রিভিউ করার জন্য আবেদন করেছি। আশা করি, কমিশন আমার আবেদন গ্রহণ করবে এবং ন্যায়বিচার পাবো। কারণ আমার প্রতি চরম অন্যায় করা হয়েছে। আমি অসহায়।’ এছাড়া তার বিরুদ্ধে দুদকের অভিযোগগুলোর বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে দেওয়া বক্তব্যে আগের অবস্থানে অটল রয়েছেন বলেও জানান শরীফ। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি দুদক চেয়ারম্যান মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহর স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে মো. শরীফ উদ্দিনকে অপসারণ করা হয়। ওই প্রজ্ঞাপনে দুর্নীতি দমন কমিশন (কর্মচারী) চাকরি বিধিমালা, ২০০৮-এর বিধি ৫৪ (২)-এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে তাকে অপসারণ করার কথা বলা হয়।