ইউক্রেইন যুদ্ধ: প্রাণ হাতে নিয়ে বহু দূর পথ পাড়ি ৭ বাংলাদেশির

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ রাশিয়া হামলার পরপরই নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছে ইউক্রেইনের সবাই, হাজারো মানুষের সেই মিছিলে সামিল বাংলাদেশি শিক্ষার্থী শেখ খালেদ বিন সেলিম। ওডেসা স্টেশনে তিনি সঙ্গী পান আরও ছয় বাংলাদেশি তরুণকে। ওডেসা থেকে পোল্যান্ড সীমান্তবর্তী লুভিয়েভ শহরে পৌঁছানোর গল্প শোনান তিনি। বৃহস্পতিবার ইউক্রেইনে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পরপরই কৃষ্ণসাগর তীরের শহর ওডেসা থেকে অপেক্ষাকৃত নিরাপদ পশ্চিম অঞ্চলের দিকে সরে যাওয়ার সিদ্ধাÍ নেন খালেদ।
তিনি বলেন, “ওডেসার বাস এবং ট্রেন স্টেশন পাশাপাশি। লোকজন একটি টিকেটের জন্য মরিয়া হয়ে দুই জায়গায় ছোটাছুটি করছিল। ভাগ্যক্রমে আমি টিকেট পেয়ে যাই। স্টেশনে বাংলাদেশের আরও ছয়জন স্টুডেন্টের সঙ্গে দেখা হয়ে যায়। “মানুষের প্রচ- ভিড় থাকার কারণে ওই দিন ওডেসা থেকে বাড়তি একটি ট্রেন ছাড়া হয়। তারপরও অনেক মানুষ ট্রেনে উঠতে পারেনি। আমার সামনেই ভারতীয় স্টুডেন্টদের একটি দল অনেক রিকুয়েস্ট করেও ট্রেনে উঠতে পারলো না। ইউক্রেইনের অনেক নাগরিকও ট্রেনে উঠতে পারেননি।” ওডেসার একটি মেডিকেল কলেজের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী খালেদ আক্ষেপ নিয়ে বলেন, “মেডিকেলে পড়তে ২০১১ সাল ইউক্রেইন আসি। ২০১৪ সালে পূর্ব ইউক্রেইনে (ক্রিমিয়া যুদ্ধ) যুদ্ধ শুরু হলে স্টাডি ব্রেক করে দেশে ফিরে যাই। এরপর ফিরে এসে আবার পড়া শুরু করি, এবারও যুদ্ধ। যুদ্ধ যেন আমার পিছু ছাড়ছে না।”
ওডেসাতে এখনও কয়েকজন বাংলাদেশি আটকা পড়ে আছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “আমি ওডেসা ছাড়ার পর সেখানে মিসাইল হামলার খবর পেয়েছি। সেখানে ইউনিভার্সিটি ও চার্চের বাংকার খুলে দেওয়া হয়েছে। আমাদের ইউনিভার্সিটি থেকে বলেছিল, চাইলে হোস্টেলের বাংকারে থাকতে পারি। কিন্তু আমি ঝুঁকি নিতে চাইনি।” আতঙ্ক-উত্তেজনা আর ঠেলাঠেলি করে ওডেসা থেকে ৭৯৮ কিলোমিটার দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে লুভিয়েভ পৌঁছায় খালেদদের ক্লান্ত দলটি। কিন্তু সেখানে তাদের থাকার জায়গা নেই। কিন্তু পৌঁছেও দুর্ভোগের যেন শেষ নেই। প্রচ- ঠা-ার মধ্যে একটার পর একটা হোটেল, হোস্টেল চষে বেড়ান তারা। খালেদ বলেন, “এখানে মানুষ গিজগিজ করছে। সবার চোখে মুখে আতঙ্কা। আসার পর জানতে পেরেছি, এখানেও বিমান হামলার আশঙ্কায় সাইরেন বাজানো হয়েছে। সবাই সীমান্ত পেরিয়ে পোল্যান্ড চলে যেতে চান। “প্রচ- ঠা-া এখানে। থাকার জায়গা নেই। খাবারের সঙ্কটও দেখা দিয়েছে। দুই একটি বাদে বেশিরভাগ দোকান বন্ধ। ব্যাংক বন্ধ, এটিএম বুথের সামনে দীর্ঘ লাইন। কোথাও কোথাও বুথে টাকা পাওয়া যাচ্ছে না শুনেছি। দশ-বারো জায়গায় ঘুরে আমরা থাকার জন্য কোনোমতে একটা হোস্টেল পেয়েছি। এক রুমের মধ্যেই ছয়-সাতজন থাকতে হবে।” শুক্রবার রাতে আর সীমান্তের দিকে রওনা হননি খালেদ। তিনি বলেন, “পোল্যান্ড সরকার সীমান্ত খুলে দিয়েছে। কিন্তু সেখানে ১৫-২০ কিলোমিটার লম্বা গাড়ির লাইন পড়েছে শুনেছি। ঠান্ডার মধ্যে তাদের পথে থাকতে হবে। তাই আজ রাতে সে পথে রওয়ানা না হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কিয়েভ থেকে বাঙালি আরো দুটি পরিবার এসেছে। তাদের সঙ্গে বাচ্চা আছে। তারা কাল সকালে (শনিবার) যাবে, আমিও তাদের সঙ্গেই যাব। যদি ভাগ্য সহায় হয়, তবে হয়ত ১০-১২ ঘণ্টায় সীমান্ত পেরুতে পারব।” বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে জানিয়েছে, ইউক্রেইন থেকে পোল্যান্ডে পৌঁছতে পারলে নাগরিকদের থাকা এবং দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করা হবে। আপাতত পোল্যান্ডে আশ্রয় নিয়ে পরিস্থিতি দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন খালেদ।