ব্যারিস্টার সুমন-ইশরাতকে জরিমানা, রায়ের অনুলিপি প্রকাশ

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ বার কাউন্সিলে আইনজীবী অন্তর্ভুক্তির পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ না হওয়ার পরও ব্যারিস্টার জুম্মন সিদ্দিকীকে সরাসরি হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করায় বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের গেজেটের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিট আবেদন খারিজ করে রায় দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। ফলে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ওই গেজেট প্রকাশকে বৈধ বলা হয় হাইকোর্টের রায়ে। পাশাপাশি রিটকারী দুই আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনকে এবং অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসানকে ১০০ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। সোমবার (৯ নভেম্বর) দুই আইনজীবীর জরিমানার ২০০ টাকা পরিশোধ করতে ১ টাকা করে জমা দিচ্ছেন আইনজীবীরা। এরইমধ্যে ২০২০ সালের ৯ নভেম্বর দেওয়া রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করা হয়েছে। কয়েকবার আইনজীবী অন্তর্ভুক্তির পরীক্ষায় অংশ নিয়েও উত্তীর্ণ হতে পারেননি ব্যারিস্টার জুম্মন সিদ্দিকী। কিন্তু তাকে সরাসরি হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবে ঘোষণা দিয়ে গেজেট প্রকাশ করে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল। এর বিরুদ্ধে রিট পিটিশন দাখিল করেন দুই আইনজীবী। পরে আদালত গেজেটকে বৈধতা দিয়ে রায় দেন। সেই রায় প্রকাশ করা হয়েছে। রায়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সাইয়েদুল হক সুমন ও অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান প্রত্যেককে ১০০ টাকা করে জরিমানার কথা বলা হয়েছে। রায়ে দুই বিচারপতি স্বাক্ষরের পর সম্প্রতি ৭৭ পৃষ্ঠার এ রায় প্রকাশ করা হয়েছে। দুই আইনজীবীকে জরিমানার কারণ হিসেবে রায়ে বলা হয়েছে, আইনজীবী হলেও তারা প্রত্যেক অন্যায়, আইনের অপপ্রয়োগ ও আইনভঙ্গের বিরুদ্ধে জনস্বার্থে মামলা করতে পারবেন না। মামলার পিটিশনাররা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হলেও জুম্মন সিদ্দিকীর বিষয়ে হাইকোর্টের অনুমতিতে ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হননি। এ অনুমতিতে সর্বস্তরের জনগণও ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। তাই পিটিশনারদের এ মামলা করার কোনো স্বার্থ সংশ্লিষ্টতা (লোকাস স্ট্যান্ডি) নেই।এ মামলা চলাকালীন পিটিশনাররা জুম্মন সিদ্দিকীর পরিবার, তার আইনজীবী ও হাইকোর্টের বিচারককে উদ্দেশ্য করে আক্রমণাত্মক মন্তব্য করেছেন। পিটিশনাররা আদালতের বিচার প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। এতে জুম্মন সিদ্দিকী ও তার পরিবারের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়েছে।
জুম্মন সিদ্দিকীকে হাইকোর্টে প্র্যাকটিস করা থেকে বিরত রেখে সংবিধানের ৪০ অনুচ্ছেদে বর্ণিত পেশার স্বাধীনতার অধিকার থেকে তাকে বঞ্চিত করা হয়েছে। পিটিশনারদের ওপর বিপুল পরিমাণ জরিমানা আরোপ করা উচিত। কিন্তু তাদের বয়স ও পেশাগত অভিজ্ঞতার সময়সীমা বিবেচনায় প্রত্যেককে ১০০ টাকা করে জরিমানা করা হলো। বার কাউন্সিলে আইনজীবী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হওয়ার পরও ব্যারিস্টার জুম্মন সিদ্দিকীকে সরাসরি হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করায় বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের গেজেটের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিট আবেদন খারিজ করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। ফলে এ গেজেট প্রকাশকে বৈধ বলা হয়েছে রায়ে। পাশাপাশি রিটকারী দুই আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনকে এবং অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসানকে ১০০ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। ২০২০ সালের ৯ নভেম্বর ওই আইনজীবীদের জরিমানার ২০০ টাকা পরিশোধ করতে ১ টাকা করে জমা দিচ্ছেন আইনজীবীরা। ওইদিন সকাল ১০টার পর থেকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সভাপতির কক্ষের সামনে রাখা একটি বক্সে সাধারণ আইনজীবীরা টাকার কয়েন জমা শুরু করেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে যে কবিতাটি শেয়ার করার জন্য আদালত অবমাননার রুল জারি করা হয়েছিল, বক্সের গায়ে সেই কবিতা সেঁটে দেওয়া হয়েছে।
আইনজীবীরা বক্সে এক টাকা করে কেন জমা দিচ্ছেন জানতে চাইলে ব্যারিস্টার অনিক আর হক সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের সুপ্রিম কোর্টের দুজন সতীর্থ আইনজীবীক একশ এক টাকা দুশ টাকা করে জরিমানা করেছিলেন। আমরা মনে করি একটা রিট পিটিশন দায়ের করার জন্য কোনো আইনজীবীকে যদি জরিমানা করা হয়, সেটি শুধু ওই দুজনের না সব আইনজীবীর ওপরই বর্তায়। তাই আমরা সবাই মিলে সেটি পরিশোধ করছি। এর আগে ২০১৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর এক বিচারপতির ছেলেকে সরাসরি হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবে জারি করা গেজেটের কার্যক্রম স্থগিত করেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে সরাসরি হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবে গেজেট প্রকাশ কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত। হাইকোর্টের বিচারপতি তারিক উল হাকিম ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। পরে ২০১৯ সালের ২১ নভেম্বর আইনজীবী অন্তর্ভুক্তির পরীক্ষায় বারবার উত্তীর্ণ হওয়ার পরও জুম্মান সিদ্দিকীকে সরাসরি হাইকোর্টের আইনজীবী ঘোষণার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট দায়ের করা হয়। আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন ও ইশরাত হাসান বাদী হয়ে এ রিট দায়ের করেন। রিট আবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ বার কাউন্সিল পরীক্ষায় কয়েকবার অংশ নিয়েও কৃতকার্য হতে পারেনি হাইকোর্টের এক বিচারপতির ছেলে মো. জুম্মান সিদ্দিকী। অথচ গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর জুম্মান সিদ্দিকীকে সরাসরি হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে গত বছরের ৩১ অক্টোবর গেজেট প্রকাশ করা হয়। রিটে ওই গেজেট এবং ১৯৭২ সালের বাংলাদেশ বার কাউন্সিল অর্ডারের ২১(১)(খ) ও ৩০(৩) ধারা চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। জুম্মান সিদ্দিকীসহ বার কাউন্সিলের সংশ্লিষ্টদের রিটে বিবাদী করা হয়।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ৯ নভেম্বর আইনজীবী অন্তর্ভুক্তির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ এক বিচারপতির ছেলে ব্যারিস্টার জুম্মন সিদ্দিকীকে সরাসরি হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের গেজেট প্রকাশ বৈধ বলে রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে রিটকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন ও অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসানকে একশ টাকা করে জরিমানা করেন আদালত। এ ধরনের রিট করে আদালতের সময় নষ্ট করার জন্য এ জরিমানা করা হয়। বিচারপতি গোবিন্দ্র চন্দ্র ঠাকুর ও বিচারপতি মোহাম্মাদ উল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। এদিকে এ রিট মামলার শুনানির একপর্যায়ে ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন ও অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসানের বিরুদ্ধে আদালত অবমানার রুলও জারি করেন আদালত। পাশাপাশি তাদের ব্যক্তিগতভাবে আদালতে উপস্থিত হওয়ার জন্য বলা হয়েছে।