আরেকটি গাছিদা উদ্ধার, রুবেলের আদালতে স্বীকারোক্তি: হামলাকালে নিজেদের অস্ত্রে সহযোগী ও আহত ইয়াসিনের আঘাতে জখম হয়েছিল দুই ভাই

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যশোর শহরের শংকরপুর চোপদারপাড়ায় ইয়াসিন আরাফাত হত্যাকা-ে ব্যবহৃত আরও ১টি গাছিদা উদ্ধার করেছে ডিবি পুলিশ। আটক হত্যা মামলার আসামি রুবেলের স্বীকারোক্তিতে রোববার শংকরপুর চোপদারপাড়ায় ঘটনাস্থলের কাছের একটি ড্রেনের পাশ থেকে গাছিদাটি উদ্ধার করা হয়। একইদিন আটক রুবেলকে আদালতে সোপর্দ করা হলে তিনি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক পলাশ কুমার দালাল তার জবানবন্দি গ্রহণ করেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের এসআই মফিজুল ইসলাম জানান, হত্যা মামলার আসামি রুবেলকে জখম অবস্থায় আটকের পর তাকে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিলো। কিছুটা সুস্থ হওয়ায় রোববার হাসপাতাল থেকে তার ছাড়পত্র নেয়া হয়। এরপর রুবেলের স্বীকারোক্তিতে বিকেল ৩টার দিকে শংকরপুর চোপদারপাড়াস্থ ব্রাদার্স ক্লাবঘরের একশ’ গজ দূরে ড্রেনের পাশ থেকে হত্যাকা-ে ব্যবহৃত ১টি গাছিদা উদ্ধার করা হয়। এ নিয়ে ২টি গাছিদা, ২টি রামদা, ১টি চাপাতি ও ২টি বার্মিজ চাকু উদ্ধার করা হলো। তিনি বলেন, পরে আটক রুবেলকে আদালতে সোপর্দ করা হয়। এ সময় রুবেল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন। পরে আদালতের বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
তদন্ত কর্মকর্তা হত্যাকা- সম্পর্কে বলেন, মোস্তাফিজুর রহমান ওরফে স্বর্ণকার রানাকে মারধর করে পঙ্গু করায় প্রতিশোধ নিতে এই হত্যাকা- বলে আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে ও প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে। তিনি বলেন, ঘটনার দিন অর্থাৎ ১৬ ফেব্রুয়ারি মা হাঁসের মাংস রান্না করে রুবেল ও রানাকে খেয়ে যেতে বলেছিলেন। খুলনার শিরোমনি থেকে বাড়িতে হাঁসের মাংস খেতে এসে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ইয়সিনকে হত্যারও সিদ্ধান্ত নেন দুই ভাই রুবেল ও স্বর্ণকার রানা। এ জন্য ছোটভাই হাফিজুরকে ব্রাদার্স ক্লাবঘরে গিয়ে ইয়াসিনের বিষয়ে খোঁজখবর নিতে বলেন। এরই মধ্যে পূর্ব পরিচিত মাদক ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসী সুমন ও ময়নাসহ কয়েকজনকে আসতে বলেন তাদের সাথে যোগ দেওয়ার জন্য। রাত সাড়ে ৭টার দিকে হাফিজুর মোবাইল ফোনে ভাইদের জানান, ইয়াসিন ক্লাবঘরের ভেতর আছেন। এই খবর পেয়ে রুবেল, স্বর্ণকার রানা ও তাদের সহযোগী শান্ত সেখানে আসেন। ক্লাবঘরে তখন কয়েকজন সহযোগী নিয়ে কেরাম খেলছিলেন ইয়াসিন। এ সময় অন্য সহযোগীদের আসা পর্যন্ত অপেক্ষা না করে স্বর্ণকার রানা, রুবেল, হাফিজুর ও শান্ত ক্লাবঘরে ঢুকেই ইয়াসিনকে কোপাতে থাকেন। এক পর্যায়ে স্বর্ণকার রানার হাত থেকে দা পড়ে যায়। ওই দা ইয়াসিনের এক সহযোগী কুড়িয়ে নিয়ে স্বর্ণকার রানার মাথায় কোপ দেন। ওই আঘাতে জখম অবস্থায় ক্লাবঘর থেকে বেরিয়ে আসেন স্বর্ণকার রানা। এরই মধ্যে সহযোগীর কাছ থেকে দা নিয়ে রুবেলের পিঠে কোপ দেন আহত ইয়াসিন। পরে সেখান থেকে আহত রুবেল, শান্ত ও হাফিজুরও বেরিয়ে আসেন। এরপর হাফিজুর জখম দুই ভাই স্বর্ণকার রানা ও রুবেলকে নিয়ে একটি রিকশায় ওঠেন পালানোর জন্য। কিন্তু রিকশাচালক ভেবেছিলেন, কেউ হয়ত তাদের মারধর করেছে, যাত্রীরা থানায় মামলা করবেন। এমন কথা ভেবে রিকশাচলক তাদেরকে নিয়ে কোতয়ালি থানার সামনে যান। কিন্তু সামনে থানা দেখতে পেয়ে আরোহীরা ভয় পেয়ে যান এবং ধমক দিয়ে রিকশাচালককে বারান্দীপাড়ায় যেতে বলেন স্বর্ণকার রানা। সেখানে তাদের খালাতো ভাই জনি থাকেন। বারান্দীপাড়ায় যাবার পর তারা জনিকে বলেন যে, দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন। তাদেরকে হাসপাতালের পরিবর্তে অন্য কোনো স্থানে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করাতে বলেন। তাদের কথা বিশ্বাস করে জনি সদর উপজেলার বসুন্দিয়ায় পরিচিত এক হাতুড়ে ডাক্তারের কাছে তাদের নিয়ে যান। কিন্তু তাদের হাবভাবে জনির সন্দেহ হয়। এ সময় জনি তাদেরকে বলেন, তোরা নিশ্চয় কোথাও কাউকে মারধর করতে গিয়ে আহত হয়েছিস। তখন স্বর্ণকার রানা তাকে এ নিয়ে আর কোনো কথা বলতে নিষেধ করেন। এক পর্যায়ে দুই ভাই স্বর্ণকার রানা ও রুবেল প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে ৩ ভাই একটি প্রাইভেটকারে করে খুলনার শিরোমণিতে যান। সেখানে গিয়ে লিন্ডা হাসপাতালে ভর্তি হন জখম দুই ভাই। পরে যশোরের ডিবি পুলিশ ওই হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে।