বিআরটি ভোগান্তির শেষ কবে?

0

জয়শ্রী ভাদুড়ী॥ বিআরটি নির্মাণ কাজের জন্য সড়ক ডিভাইডার ও ফুটওভার ব্রিজ ভেঙে ফেলা হচ্ছে। মানুষ ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার হচ্ছে। কয়েকটি ফুটওভার ব্রিজ রাস্তার মাঝে এসে পড়েছে ছবি : শিমুল মাহমুদ ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত দীর্ঘ ধারাবাহিক নির্মাণ কাজের জন্য ভোগান্তির শেষ নেই। টঙ্গী থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার অংশে যানজটের নিত্য দুর্ভোগের সঙ্গে যোগ হয়েছে মহাসড়ক থেকে বিভিন্ন লিঙ্ক রোডে যাতায়াতকারী লাখ লাখ মানুষের সীমাহীন ভোগান্তি। বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার সড়কে দীর্ঘদিন ধরে বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের কাজ চলছে। এ জন্য ব্যস্ত এই সড়কটির বিভিন্ন অংশে যানজট লেগে দুর্বিষহ ভোগান্তিতে পড়ছেন সাধারণ মানুষ।
বর্তমানে হাউজ বিল্ডিং থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত রাস্তার কাজ চলছে। বিআরটি নির্মাণ কাজের অংশ হিসাবে সড়কের মাঝের ডিভাইডার ভেঙে ফেলা হয়েছে। মাঝ বরাবর নির্মাণ করা হচ্ছে বিআরটির পৃথক লেন। ফলে মূল সড়কটি সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে। নতুন নির্মাণাধীন বিআরটির জন্য এলোমেলো হয়ে পড়েছে সড়ক শৃঙ্খলা। টঙ্গী থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত সব ফুটওভার ব্রিজ ভেঙে ফেলা হচ্ছে। এর মধ্যে কয়েকটি ফুটওভার ব্রিজ ভেঙে ফেলা হয়েছে। মানুষ ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার হচ্ছে। কোনো কোনো এলাকায় সার্ভিস রোড ভেঙে রাস্তা সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। এতে ফুটওভার ব্রিজগুলো রাস্তার মাঝে এসে পড়েছে। যদিও যে কটি ফুটওভার ব্রিজ এখনো দাঁড়িয়ে আছে সেগুলো ভেঙে ফেলা হবে। এরপর মানুষ এপার থেকে ওপারে কীভাবে যাবে সে প্রশ্নের জবাব মিলছে না।
উল্লেখ্য, ২০ কিলোমটিার দৈর্ঘ্যরে বিআরটির কিছু অংশ হবে এলিভেটেড। বড় অংশই হবে বিদ্যমান সড়কের সমান্তরালে। গত বছর বিমানবন্দর থেকে টঙ্গী পর্যন্ত কয়েকটি ইউটার্ন নির্মাণের কারণে এর সুফল পেতে শুরু করেছিল নগরবাসী। ফলে যানজট অনেকটা কমে এসেছিল। কিন্তু বিআরটি নির্মাণের কারণে ইউটার্নগুলো ভেঙে ফেলতে হচ্ছে। বিআরটির নিরবচ্ছিন্ন বিশেষায়িত বাস চলাচলের কারণে ইউটার্ন কীভাবে থাকবে সেই বিষয়টি নিয়ে কথা বলছেন না কেউ। গাজীপুর থেকে ঢাকায় সহজে প্রবেশের জন্য ২০০৫ সালে করা ২০ বছর মেয়াদি কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনার (এসটিপি) আওতায় বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার সড়কে বাসের আলাদা লেন বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০১২ সালের ১ ডিসেম্বর একনেকে অনুমোদন পায় প্রকল্পটি। ব্যয় ধরা হয়েছিল ২ হাজার ৪০ কোটি টাকা। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের কাজ শেষ করে বিআরটিতে বাস নামানোর কথা ছিল। তবে দফায় দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে এখন নির্মাণকাজ শেষ করার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে চলতি বছরের ডিসেম্বরে। নতুন করে ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা। ব্যয় বৃদ্ধির মূল কারণ সময়মতো কাজ শেষ না হওয়া। দেরি হওয়ায় নির্মাণ উপকরণের দাম বাড়ার কারণে ৭২৩ কোটি টাকা ব্যয় বেড়েছে। সঙ্গে বেড়েছে গণভোগান্তি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ জানায়, বিআরটি প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত করা হয় মহাসড়কের দুই পাশে ১১৩টি লিঙ্ক রোড। এ সড়কগুলোর প্রতিটির এক কিলোমিটার পর্যন্ত বিআরটি কর্তৃপক্ষের করে দেওয়ার কথা। কিন্তু প্রকল্পের প্রায় ৬০ ভাগ কাজ শেষ হয়ে গেলেও বিআরটি কর্তৃপক্ষ এসব লিঙ্ক রোডের কাজ শেষ করেনি। প্রকল্পের শুরু থেকে এ পর্যন্ত মাত্র ৩৮টি লিঙ্ক রোডের কাজ শেষ করা হলেও বাকি ৭৫টি লিঙ্ক রোডের কাজের ব্যাপারে বিআরটি কর্তৃপক্ষের সাড়া মিলছে না। এদিকে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ‘বিআরটি’ প্রকল্পের নির্মাণকাজ আগামী ডিসেম্বরে শেষ হবে। প্রকল্পের আওতায় ৪ দশমিক ৫ কিলোমিটার এলিভেটেড সড়ক, ৬টি ফ্লাইওভার ও ২৫টি বিআরটি স্টেশনসহ মোট ২০ দশমিক ৫০ কিলোমিটার করিডর নির্মাণ করা হবে। সম্প্রতি টঙ্গীর চেরাগ আলীতে প্রকল্পের অগ্রগতি পরিদর্শনে এসে এ কথা জানান মন্ত্রী। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে প্রতি ঘণ্টায় উভয় দিকে ২০ হাজার যাত্রী পরিবহন করতে পারবে উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, হাউস বিল্ডিং থেকে চেরাগ আলী পর্যন্ত সাড়ে চার কিলোমিটার এলিভেটেড অংশ সেতু বিভাগ বাস্তবায়ন করছে। অবশিষ্ট অংশ সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ করছে। এ করিডরে দুটি সংরক্ষিত বিআরটি লেন, চারটি মিক্সড ট্রাফিক লেন, দুটি অযান্ত্রিক লেন, পথচারীদের জন্য ফুটপাথের ব্যবস্থা থাকবে।