কিপটে নাসুমের সঙ্গে মৃত্যুঞ্জয়ের হ্যাটট্রিকে জয়ে ফিরলো চট্টগ্রাম

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম বরাবরই রানপ্রসবা ভেন্যু হিসেবে পরিচিত। যার প্রমাণ মিললো আরও একবার। স্বাগতিক চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের সঙ্গে সিলেট সানরাইজার্সের মধ্যকার ম্যাচে দুই দলই রান করলো বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে। শেষপর্যন্ত পার্থক্য গড়ে দিলেন চট্টগ্রামের বোলাররা। রানবন্যার ম্যাচে আগে ব্যাট করে আসরে প্রথমবারের মতো দুইশ পেরিয়ে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ২০২ রানের বিশাল সংগ্রহ দাঁড় করিয়েছিল চট্টগ্রাম। জবাবে এনামুল হক বিজয়ের ঝড়ো ব্যাটিংয়ের পরও ১৮৬ রানের বেশি করতে পারেনি সিলেট। ফলে ১৭ রানে জিতে আবার জয়ের কক্ষে ফিরলো স্বাগতিক চট্টগ্রাম। তাদেরকে জয়ে ফেরানোর ম্যাচে দুর্দান্ত বোলিং করেছেন বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদ ও অভিষিক্ত মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী। এবারের আসরের প্রথম হ্যাটট্রিক করে ৩৩ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন মৃত্যুঞ্জয়। অন্যদিকে বাকিদের খরুচে বোলিংয়ের মাঝে ৪ ওভারে এক মেইডেনসহ মাত্র ১৮ রান খরচায় ২ উইকেট নিয়েছেন নাসুম।
চট্টগ্রামের করা ২০২ রানের জবাবে ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান লেন্ডল সিমন্সের উইকেট হারিয়ে বসে সিলেট। তবে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে পাল্টা আক্রমণে যান এনামুল বিজয় ও কলিন ইনগ্রাম। এ দুজনের জুটিতে ১২.৩ ওভারে আসে ১১২ রান। যা সিলেটকে এনে দেয় জয়ের সম্ভাবনা। আসরে নিজের প্রথম ফিফটি করা ইনগ্রামকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন এই ম্যাচ দিয়েই অধিনায়কত্ব থেকে সরে দাঁড়ানো মেহেদি হাসান মিরাজ। আউট হওয়ার আগে ৩৭ বলে ৫০ রান করেন ইনগ্রাম। এরপর একাই দলের ইনিংস টেনে নিতে থাকেন এনামুল হক বিজয়, হাঁকান টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের ১১তম ফিফটি। তার ব্যাটে যখন জয়ের স্বপ্ন দেখছিল সিলেট, তখনই হ্যাটট্রিক করা ওভারটি নিয়ে আসেন মৃত্যুঞ্জয়। ইনিংসের ১৮তম ওভারে আক্রমণে এসে প্রথম দুই বলে অবশ্য চার ও ছয় হজম করেছিলেন তিনি। তবে তৃতীয় বলে ফুল লেন্থের ডেলিভারিতে নাসুম আহমেদের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন ৭৮ রান করা এনামুল।
এরপর উইকেটে এসেই বড় শটের চেষ্টা করেন সিলেট অধিনায়ক মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। কিন্তু ধরা পড়ে যান ডিপ কভারে দাঁড়ানো আফিফ হোসেনের হাতে। হ্যাটট্রিক বলে নিজের সেরা ডেলিভারিটিই করেন মৃত্যুঞ্জয়। দুর্দান্ত এক ইয়র্কারে কিছুই করার ছিল না রবি বোপারার, বোল্ড হয়ে সাজঘরের পথ ধরেন তিনি। হ্যাটট্রিক পূরণ হতেই বাঁধভাঙা উল্লাসে মাতেন মৃত্যুঞ্জয়। ম্যাচ শেষে জানিয়েছেন বিপিএলের মতো পর্যায়ে প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেই হ্যাটট্রিক করা ক্যারিয়ারের বড় একটি প্রাপ্তি। শুরুতে খানিক নার্ভাস থাকলেও ধীরে ধীরে নিজের স্বরুপে ফিরেই হ্যাটট্রিকের নৈপুণ্য দেখাতে পেরেছেন মৃত্যুঞ্জয়।
সিলেটের মারকাটারি ব্যাটিংয়ের দিন মৃত্যুঞ্জয়ের হ্যাটট্রিকের আগে কিপটে বোলিংয়ের নজির স্থাপন করেন নাসুম। নিজের ৪ ওভারে এক মেইডেনসহ মাত্র ১৮ রান খরচায় ২ উইকেট নেন তিনি। নিজের প্রথম ওভারেই সিমন্সকে ফিরিয়ে চট্টগ্রামকে ভালো শুরুও এনে দিয়েছিলেন নাসুম। এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই ঝড় তোলেন চট্টগ্রামের ইংলিশ ওপেনার উইল জ্যাকস। সানজামুল ইসলামের করা প্রথম ওভারে শুধু একটি বাউন্ডারি হাঁকান তিনি। তাসকিন আহমেদের করা পরের ওভারে এক বাউন্ডারির সঙ্গে মারেন ইনিংসের প্রথম ছক্কা। সানজামুলের পরের ওভারে দুই ছক্কার মারে তুলে নেন ১৫ রান। আগের ম্যাচের মতো আজও তাসকিনকে এক ওভার করিয়েই সরিয়ে নেন সিলেট অধিনায়ক। চতুর্থ ওভারে আক্রমণে এসে জ্যাকসের কাছে তিন বলে তিন চার হজম করেন আলাউদ্দিন বাবু। সেই ওভারেই পূরণ হয়ে যায় চট্টগ্রামের দলীয় পঞ্চাশ। পঞ্চম ওভারে ফের আক্রমণে আসেন তাসকিন। সেই ওভারের দ্বিতীয় বলে বাউন্ডারি হাঁকান জ্যাকস। এরপর বাইরে থেকে আসা ধোঁয়ার কারণে কিছুক্ষণ বন্ধ থাকে খেলা। পুনরায় শুরু হওয়ার পর প্রথম বলেই চার মেরে ব্যক্তিগত ফিফটি পূরণ করেন জ্যাকস, মাত্র ১৮ বলে। বিপিএল ইতিহাসে এর চেয়ে দ্রুত ফিফটির রেকর্ড রয়েছে শুধুমাত্র আহমেদ শেহজাদের, ১৬ বলে।তবে ফিফটি পূরণের পরের বলেই সাজঘরের পথ ধরেন জ্যাকস। তাসকিনের বলে স্কুপ করতে গিয়ে শর্ট ফাইন লেগে লেন্ডল সিমন্সের হাতে ধরা পড়েন তিনি। আউট ঘওয়ার আগে সাত চার ও তিন ছয়ের মারে মাত্র ১৯ বলে ৫২ রান করেন জ্যাকস
। তার তান্ডবে প্রথম পাওয়ার প্লে’তে ৭১ রান পায় চট্টগ্রাম। তবে আরেক ওপেনার কেনার লুইস ১২ বলে করেন মাত্র ৮ রান। এরপর সাব্বির রহমান ও আফিফ হোসেন ধ্রুবর ওয়ানডে স্টাইলের ব্যাটিংয়ে কিছু কমে আসে রানের গতি। এ দুজন মিলে ৭.৩ ওভারের জুটিতে মাত্র ৪৭ রান যোগ করেন। দলীয় ১১৩ রানের মাথায় ২৯ বলে ৩১ রান করে আউট হন সাব্বির। তার বিদায়ের পর খানিক হাত খোলেন আফিফ।
মুক্তার আলির করা ১৫তম ওভারের পরপর দুই বলে ছক্কা ও চার মারেন তিন নম্বরে নামা আফিফ। পরের ওভারে রবি বোপারার বলেও বিশাল ছক্কা হাঁকান তিনি। তবে পরের বলেই সাজঘরে ফিরে যান ২৮ বলে ৩৮ রানের ইনিংস নিয়ে। এরপর হতাশ করেন দলের নতুন অধিনায়ক নাইম ইসলামও (৭ বলে ৮)। অধিনায়ক আউট হওয়ার পর শেষ ১০ বলে আরও ৩১ রান করে চট্টগ্রাম। যেখানে দুই ছয়ের মারে ৪ বলে ১৩ রান করেন মিরাজ। আর টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা বেনি হাওয়েল দুই চার ও তিন ছয়ের মারে ২১ বলে খেলেন ৪১ রানের অপরাজিত ইনিংস। সিলেটের পক্ষে একটি করে উইকেট নিয়েছেন তাসকিন, সোহাগ গাজী, মুক্তার আলি, রবি বোপারা ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। নিজের ৪ ওভারে ৫৩ রান খরচ করেছেন তাসকিন, হজম করেছেন ৫টি চার ও ৪টি ছকা।