সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ দেশে করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে নতুন করে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে সরকার। আগামী বৃহস্পতিবার থেকে এই বিধিনিষেধ কার্যকর করা হবে বলে সোমবার এক প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে। নতুন এই বিধিনিষেধে বাস-ট্রেন আবার অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলবে। উন্মুক্ত স্থানে যেকোনো সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান কিংবা রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ থাকবে বন্ধ। ১১টি ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করে সোমবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ আসার আগ পর্যন্ত এই বিধিনিষেধ কার্যকর থাকবে।
নির্দেশনায় রেস্তরাঁয় বসে খাওয়ার ক্ষেত্রে কোভিড টিকা সনদ থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। টিকা সনদ ছাড়া ১২ বছরের বেশি বয়সী শিক্ষার্থীরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ঢুকতে পারবে না বলেও জানানো হয়েছে।
বাস, ট্রেনের মতো লঞ্চেও সক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চালাতে বলা হয়েছে। সব ধরনের যানের চালক ও সহকারীদের বাধ্যতামূলকভাবে টিকার সনদধারী হতে হবে। অফিস-আদালত সহ ঘরের বাইরে মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক থাকবে বলে জানানো হয়েছে। এই নিয়ম না মানলে শাস্তি পেতে হবে। ডেল্টা সংক্রমণের পর গত বছরের এপ্রিল থেকে আগস্ট অবধি বিভিন্ন সময় লকডাউনের বিধিনিষেধ ছিল। এরপর সংক্রমণের হার দ্রুত কমে এলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ঘোষণা আসে। অন্যান্য বিধিনিষেধও শিথিল হয়।
করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন শনাক্ত হওয়ার পাশাপাশি ডেল্টার সংক্রমণ নতুন করে বাড়ায় গত ৩রা জানুয়ারি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা হয়। সভা শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, স্বাস্থ্যবিধি মানায় ফের কড়াকড়ি আরোপের দিকে যাচ্ছে সরকার। সেই বৈঠকের পর ৪ঠা জানুয়ারি ১৫ দফা নির্দেশনা দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। যেখানে সব ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে জনসমাগমে নিরুৎসাহিত করা হয়।
গতকাল সোমবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের প্রাদুর্ভাব ও দেশে এই রোগের সংক্রমণ পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার সিদ্ধান্ত: দেশের আর্থ সামাজিক অবস্থা, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল রাখা এবং সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনা করা হয়েছে। আগামী ১৩ই জানুয়ারি থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সার্বিক কার্যাবলী/চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করা হলো।
দোকানপাট, শপিংমল ও বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতা এবং হোটেল-রেস্তরাঁসহ সব জনসমাগমস্থলে বাধ্যতামূলকভাবে সবাইকে মাস্ক পরতে হবে। অফিস-আদালতসহ ঘরের বাইরে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। নিয়ম না মানলে আইন অনুযায়ী শাস্তি পেতে হবে। রেস্তরাঁয় বসে খাবার গ্রহণ এবং আবাসিক হোটেলে থাকার জন্য অবশ্যই করোনাভাইরাসের টিকা নেয়ার সনদ দেখাতে হবে। ১২ বছরের বেশি বয়সের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা মন্ত্রণালয় নির্ধারিত তারিখের পরে টিকা সনদ ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হবে না। স্থলবন্দর, সমুদ্রবন্দর ও বিমানবন্দরে স্ক্রিনিংয়ের সংখ্যা বাড়াতে হবে। বন্দরে ক্রুদের জাহাজের বাইরে আসার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা দিতে হবে। স্থলবন্দরগুলোয় আসা ট্রাকের সঙ্গে শুধুমাত্র চালক থাকতে পারবে, কোনো সহকারী আসতে পারবে না। বিদেশগামীদের সঙ্গে আসা দর্শনার্থীদের বিমানবন্দরে প্রবেশ বন্ধ করতে হবে। ট্রেন, বাস এবং লঞ্চে সক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী নেয়া যাবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কার্যকারিতার তারিখসহ সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা জারি করবে। সব ধরনের যানের চালক ও সহকারীদের বাধ্যতামূলকভাবে করোনাভাইরাসের টিকার সনদধারী হতে হবে। বিদেশ থেকে আসা যাত্রীসহ সবাইকে বাধ্যতামূলকভাবে কোভিড-১৯ টিকাকার্ড প্রদর্শন এবং র‌্যাপিড এন্টিজেন টেস্ট করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন এবং মাস্ক পরিধানের বিষয়ে সব মসজিদে জুমার নামাজের খুতবায় ইমামরা সংশ্লিষ্টদের সচেতন করবেন। জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা এ বিষয়টি নিশ্চিত করবেন। সর্বসাধারণের করোনাভাইরাসের টিকা এবং বুস্টার ডোজ গ্রহণ ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় প্রচার এবং উদ্যোগ নেবে। এক্ষেত্রে তথ্য ও সমপ্রচার মন্ত্রণালয়ের সহায়তা নিবে। কোভিড আক্রান্তের হার ক্রমবর্ধমান হওয়ায় উন্মুক্ত স্থানে সব ধরনের সামাজিক, ধর্মীয় অনুষ্ঠান এবং সমাবেশ পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখতে হবে। কোনো এলাকার ক্ষেত্রে বিশেষ কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে স্থানীয় প্রশাসন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেবে।