মন্ত্রীর কথায় একমত নয় মালয়েশিয়ার নিয়োগকর্তারা

0

আশরাফুল মামুন, মালয়েশিয়া থেকে॥ বহুল প্রতীক্ষার ৩ বছরেরও বেশি সময় পরে মালয়েশিয়া-বাংলাদেশ কলিং ভিসা চালুর দ্বিপক্ষীয় এমওইউ চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। এই ৩ বছরে কলিং নিয়ে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনা হয়েছে সিন্ডিকেট নিয়ে। কলিংয়ের বিভিন্ন বিষয় যেমন সুবিধা অসুবিধা নিয়ে এখনো আলোচনা চলমান রয়েছে। এমওইউ চুক্তি সম্পন্ন করে দেশে ফিরে গিয়ে প্রবাসী ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদ ঘোষণা দিয়েছেন সব খরচ নিয়োগকর্তারা বহন করে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেবে মালয়েশিয়া। কিন্তু বিষয়টি যেভাবে বলা হয়েছে এটা অতটা সহজ নয় বলে মন্তব্য করেছেন শ্রমখাতে সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকরা।
শনিবার (৮ই জানুয়ারি) সকালে মালয়েশিয়ার গণমাধ্যম দ্য ফ্রি মালয়েশিয়া টুডে তে দেয়া এক বিবৃতিতে দেশটির নিয়োগকর্তাদের এসোসিয়েশন এসএমই এর সেক্রেটারি জেনারেল মিস্টার চিন চি চিওং বলছেন, বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেয়ার ক্ষেত্রে সব খরচ মালিককে যে বহন করতে হবে সেটা বাধ্যতামূলক নয়, সেটা ঐচ্ছিক হিসেবে বিবেচিত হবে যদিও এমওইউ এর চুক্তিতে সেটা বাধ্যতামূলক বলা হয়েছে। বিমান ভাড়া, কোয়ারেন্টিন, অভিবাসন সহ যে খরচ হবে এটা মালিকদের জন্য বাড়তি বোঝা। তবে যাদের কর্মী জরুরি প্রয়োজন তারা সব খরচ বহন করে কর্মী আনতে পারবে।
কিন্তু যাদের কর্মীদের সব খরচ বহন করার সামর্থ্য নেই তারা অপেক্ষা করবেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ থেকে কর্মী আনতে মালিকদের খরচ পড়বে জনপ্রতি প্রায় বাংলাদেশি টাকা এক লাখ। এটা আমাদের জন্য বাড়তি বোঝা। কারণ ইতিমধ্যে কোভিড- ১৯ মহামারির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি আবার কয়েকদিন আগে হয়ে গেল স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা। সব মিলিয়ে আমরা এখন ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি।
সমঝোতা স্মারক সইয়ের পর কোনো সিন্ডিকেট হবে কিনা কুয়ালালামপুরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ থেকে কোনো সিন্ডিকেট হবে না। কিন্তু মালয়েশিয়া থেকে সিন্ডিকেট হলে আমার কিছুই করার নাই। মন্ত্রীর এমন বক্তব্যে অনেকেই মনে করছেন মালয়েশিয়া থেকে সিন্ডিকেট হলে আগের মতোই বাংলাদেশ থেকে সিন্ডিকেট হতে পারে। কারণ আগে শুধু বাংলাদেশের রিক্রুটিং এজেন্সি কর্মী প্রেরণ করতো। কিন্তু এবার কলিং এ মালয়েশিয়ার রিক্রুটিং এজেন্সি জড়িত থাকবে। তাই কর্মী প্রেরণের বিষয়টি যৌথভাবে সম্পন্ন হবে।
ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প সমিতির (সামেন্টা) সভাপতি মিস্টার কাম লিয়ান হুই বলেছেন, যে এমওইউতে বেশির ভাগ ধারাগুলো মেনে চলা ছাড়া নিয়োগকর্তাদের আর কোনো বিকল্প নেই। কারণ আমাদের এখানে চরম শ্রমিক সংকট রয়েছে। আমাদের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে আর এসব ভারী শিল্পে বাংলাদেশিরা ভালো কাজ করতে পারেন। তিনি আরো বলেন, আমাদের উপর যে খরচের বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে আশাকরি সেগুলো কমানো হবে।
১৯শে ডিসেম্বর সমঝোতা স্মারক এমওইউ চুক্তি সইয়ের পর অলরেডি ১৯ দিন অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত কি প্রক্রিয়ায় কর্মী নিয়োগ হবে, খরচ কতো পড়বে, কখন থেকে শুরু হবে ইত্যাদি নানা বিষয় এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে শোনা যাচ্ছে মালয়েশিয়ার একজন মন্ত্রী বাংলাদেশে সফর করবেন তখন বিষয়টি চূড়ান্ত হতে পারে।
এদিকে শ্রমবাজার সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকদের মতে, কর্মীর সব খরচ বহন করে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়া কখনো কর্মী নেবে না। তার কারণ হলো মালয়েশিয়া এখন অর্থনৈতিকভাবে কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত। ১ জন কর্মী বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়া নিতে জনপ্রতি প্রায় ১ লাখ টাকারও বেশি খরচ হবে। তারপরও ইন্স্যুরেন্স, বিভিন্ন ভাতাদি, কর্মীর কাজের মেয়াদ শেষ হলে বাংলাদেশে ফেরতের খরচ সহ এত খরচ তারা বহন করবে না। এই বিষয়টি বাস্তবায়ন করা খুবই কঠিন হবে। মালয়েশিয়ার সব নিয়োগকর্তা সমান নয়। তাছাড়া আন্তর্জাতিক শ্রম আইন এখানে সব সময় মানা হয় না। মানবাধিকার সংস্থাগুলো এখানে খুব একটা সুবিধা করতে পারে না। আরও সোর্স কান্ট্রি থাকতে কেন শুধু বাংলাদেশ থেকে কর্মী আনা হবে এটার বিরোধিতা করছে অপর একটি পক্ষ। ঐ পক্ষটির যুক্তি হলো বাংলাদেশের হাজার হাজার অবৈধ শ্রমিক জেলে প্রেরণ করা হয়েছে এবং তাদেরকে বিচারের মুখোমুখি করে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
সমঝোতা চুক্তি অনুযায়ী কর্মী নিয়োগে সব ব্যয় বহন করবে মালয়েশিয়া বাস্তবে তা হবে না বলেই মনে করেন বায়রার সাবেক মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী। তিনি আরও বলছেন, কর্মী নিয়োগের ব্যয় বহন সংক্রান্ত ব্যাপারে সরকার যা বলেছে, তা মূলত আনুষ্ঠানিক বক্তব্য। সরকারি ভাষা আর ব্যবহারিক ভাষা এক নয় বলেও উল্লেখ করেন তিনি। এর মধ্যে অনেক হিডেন চার্জ থাকবে, যা কেউই বহন করবে না। এসব শেষ পর্যন্ত শ্রমিকদেরই বহন করতে হবে বলেও মনে করছেন তিনি।