ভিক্ষুক ভেবে কাকে টাকা দিচ্ছেন?

0

অনন্যা দাস
যাত্রী ভাইয়েরা ‘আমার মায়ের ক্যান্সার, ছেলে হাসপাতালে, মেয়ের পরীক্ষা, আমার একটা হাত নাই, আপনাদের কাছে ভিক্ষা চাই না, সাহায্য চাই’। ‘স্যার আমার মা-বাবা নাই, দুপুরে কিচ্ছু খাই নাই’ প্রতিদিন যাতায়াতের সময় বাসে-রাস্তাঘাটে অসংখ্য ভিক্ষকের বিলাপ শুনতে হয়। কখনো এভাবে পায়ে ধরে, গায়ে হাত দিয়ে তারা ভিক্ষা চায়, লজ্জা পেয়ে ফিরে যেতে হয়। জানি কথাটা শুনে অনেকই ভ্রু কুঁচকাবেন, ‘ভিক্ষুককে কিছু টাকা দান করতে কিসের এত বিবেচনা?’ হ্যাঁ কথা সত্য কিন্তু মধ্যবিত্ত-নিম্নমধ্যবিত্ত আমরা যারা মানবতার তাগিদে রাস্তায় দাঁড়ানো ভিক্ষুককে কিছু টাকা দিয়ে হলেও তাদের পাশে থাকতে চাই, এবার সময় এসেছে এটা নিয়ে একটু ভাববার।
ভিক্ষাবৃত্তি নিয়ে আমাদের দেশে বিকৃত মস্তিষ্কের কিছু মানুষের জমেছে রমরমা ব্যবসা। প্রতিটি এলাকায় এক ধরনের অসুস্থ প্রতিযোগিতা, ফাঁদ এবং অমানবিক কাজ করানো হচ্ছে এসব ভিক্ষুকদের দিয়ে। ভিক্ষুকদের অঙ্গচ্ছেদ থেকে শুরু করে শিশু চুরি করানোর মতো অভিযোগ উঠে এসেছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে। এসব বেশধারী ভিক্ষুকরা পথে-ঘাটে সাধারণ মানুষ বিশেষ করে মেয়েদের সঙ্গে বিভিন্ন প্রতারণার আশ্রয় নিচ্ছে। ভিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রেও এদের থাকছে অতিরিক্ত চাহিদা। অনেক সময় দেখা যায়, কয়েন বা পয়সা দেওয়া হলে তারা সেটি দাতার সামনেই ছুড়ে ফেলে দেন তাকে হেয় করার জন্য। এছাড়াও তারা অনেক সময় বিভিন্ন কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য ছোড়েন মহিলা এবং স্কুল কলেজের ছেলে-মেয়েদের উপর। এতে ভিক্ষুকদের প্রতি সাধারণ জনগণের মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি বদলাচ্ছে। যারা আসলেই সাহায্য পাওয়ার যোগ্য, তারা জনগণের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছেন। রাজধানীর পথে পথে হাজার হাজার ভিক্ষুক। অর্থনৈতিক দিক থেকে এগিয়ে যাওয়া দেশে কেন এত লোক খাদ্য-বস্ত্রের অভাবে পথে বসেছেন? তাহলে এটা কি সত্যিকারের দারিদ্র্যতা, নাকি পেশা? এদের মধ্যে সত্যিকার অর্থে যারা সাহায্য পাওয়ার অধিকারী, তাদের খুঁজে বের করা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য ব্যাপার। সরকারের সমাজ কল্যাণ বিভাগের উচিত মাঠ পর্যায়ে এসে প্রকৃত দরিদ্রদের তালিকা প্রণয়ন করা এবং তাদের বিভিন্ন স্তরে ভাগ করে বাজেটে এদের জন্য নির্দিষ্ট কিছু অর্থ বরাদ্দ দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা। সরকার ভিক্ষুকদের জন্য যে পুনর্বাসন এবং আর্থসামাজিক নিরাপত্তা দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, সেই প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করা। সর্বোপরি ভিক্ষাবৃত্তিকে সঠিক জায়গায় আনতে সরকার এবং নগর প্রশাসন যদি এখনই সোচ্চার না হয়, তাহলে ভবিষ্যতে সামাজিক অবক্ষয়ের আরও বিরূপ প্রভাব দেখা দেবে। ঢাকার হাতিরঝিল এলাকার একজন প্রকৃত ভিক্ষক বলেন, এই এলাকায় কয়েকটি ভিক্ষুকের সংঘবদ্ধ দল আছে। তাদের কারণে আমি ভিক্ষা করতে পারি না। ওরা চাঁদা চায়। মাঝে মাঝে না খেয়েও থাকি। মানবধর্মই বড় ধর্ম। তাই আমরা যারা সত্যিকার অর্থে অসহায়দের সাহায্য করতে চাই, তারা এই সংকটময় পরিস্থিতি না কাটা পর্যন্ত কষ্ট করে হলেও ভিক্ষুককে আর্থিক সাহায্য না করে অর্থাৎ টাকা না দিয়ে তাদের খাবার, শীতের কাপড় কিংবা তাদের প্রয়জনীয় সরঞ্জাম নিজেরা কিনে দেবো। তাহলে খুব স্বল্প হলেও এই পেশায় পরিবর্তন আসবে। যারা ভিক্ষাবৃত্তিকে পেশা হিসেবে নিয়েছে, তাদের সংখ্যা কমবে।
লেখক: শিক্ষার্থী, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি।