বিজয়ের সুবর্ণ জয়ন্তী আজ

0

মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের ৫০ বছর পূর্তি আজ। বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী পালনে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে সরকার। ১৯৭১ সালের এদিন আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাসে সূচিত হয় বিজয়ের অধ্যায়। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র যুদ্ধের পর এইদিন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করে এবং বাংলাদেশ শত্রুমুক্ত হয়। পূর্ব পাকিস্তানে বাঙালীদের শাসন প্রতিষ্ঠায় ’৭০-এর ঐতিহাসিক নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের বিজয়ের পর বাঙালীদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে পাক সরকার টালবাহানা শুরু করে। এর প্রতিবাদ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী করার দাবিতে পূর্ব পাকিস্তানে শুরু হয় গণআন্দোলন। বাঙালীদের সরকার গঠনের দাবিতে ছাত্র-জনতার চূড়ান্ত আন্দোলনের মাঝে সরকার গঠনের আলোচনা চলা অবস্থায় হঠাৎ ৭১-এর ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে পূর্ব পাকিস্তানের নিরস্ত্র বাঙালীদের ওপর। তারা রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে সারাদেশে ভয়াবহ গণহত্যা চালায়। সে রাতেই বাঙালীদের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে। মজলুম জনতার নেতা মাওলানা ভাসানীসহ সব দলের শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা অধিকাংশই গ্রেফতার এড়াতে আত্মগোপন করেন। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক নেতৃত্বের অভাব ও নির্দেশনার অভাবে জনগণ দিশাহারা হয়ে পড়ে। সশস্ত্র বাহিনী, ইপিআর ও পুলিশ যথাযথ নির্দেশনার অভাবে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের চৌকশ অফিসার মেজর জিয়াউর রহমান বিদ্রোহ ঘোষণা করেন এবং চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র নিয়ন্ত্রণে নিয়ে সেখানে থেকে প্রথমে নিজে এবং পরে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণে সকলকে আহ্বান জানান। ওই ঘোষণার মধ্য দিয়েই হতবিহ্বল জাতি এবং সশস্ত্র শক্তি খুঁজে পায় মুক্তির পথ। তারা জিয়াউর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়, গড়ে তোলে প্রতিরোধ, শুরু হয় সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ। এরপর মুজিবনগরে সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও তাজউদ্দীনের নেতৃত্বে প্রবাসী সরকারের অধীনে কর্নেল ওসমানীর পরিচালনায় দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ চলে। ত্রিশ লাখ শহীদের রক্ত আর ৩ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে ওই ’৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর আমাদের বিজয় অর্জিত হয়। এই বিজয়ের মধ্য দিয়েই পরিপূর্ণভাবে বিশ্ব মানচিত্রে আত্মপ্রকাশ ঘটে স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশের। সেদিন জানমালের সীমাহীন ত্যাগের মাধ্যমে মাতৃভূমিকে স্বাধীন করে আমরা পেয়েছি একটি নতুন মানচিত্র, একটি নতুন লাল সবুজ পতাকা, একটি দেশ, একটি নতুন সংবিধান। আজকের এই বিজয়ের দিনে আমরা গভীর শ্রদ্ধায় সঙ্গে স্মরণ করি মহান মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদকে। স্মরণ করি, বাঙালীদের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মজলুম জনতার নেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খানভাসানী এবং স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে। স্মরণ করি, কর্নেল ওসমানীসহ সকল মুক্তিযোদ্ধাকে। তাদের প্রতি এ জাতির ঋণ কোনো দিন শোধ হবে না। প্রত্যাশা করি, বিজয়ের সুবর্ণ জয়ন্তী হোক সবার জন্য আনন্দের। যে গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম থেকে মুক্তি যুদ্ধ এবং স্বাধীনতা অর্জন সেই গণতন্ত্র মুক্তি পাক। মুক্ত হোক বাক-ব্যক্তির স্বাধীনতাসহ সাংবিধানিক সব মৌলিক অধিকার। চিরস্থায়ী হোক মহান স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব।