ডোপ টেস্ট হোক সব ক্ষেত্রে

0

বাংলাদেশে চাকরি এখন সোনার হরিণ। চাকরির অভাবে ফি বছর বাড়ছে উচ্চ শিক্ষিত বেকার। অনেকেই যথেষ্ট মেধা, শিাগত যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও সরকারী চাকরি পান না সহজে। তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণীর সরকারী চাকরিতে ঢোকার পথ কিছুটা সহজ হলেও বিসিএসের মাধ্যমে ক্যাডার সার্ভিস তথা সরকারী চাকরিতে প্রবেশ বেশ কষ্টাসাধ্য ও সময়সাপে। ফলে স্বভাবতই প্রায় ২৬ লাখ শিতি বেকারের অনেকের মধ্যে হতাশা থাকা বিচিত্র নয়। এবার সেটা আরও কিছুটা কঠিন তথা দুঃসাধ্য হতে চলেছে। সরকারী চাকরিতে ঢোকার শর্ত হিসেবে ডোপ টেস্ট তথা মাদক পরীা বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। এর জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জেল-জরিমানাসহ অর্থদন্ডের বিধান রেখে প্রণয়ন করেছে ডোপ টেস্ট বিধিমালা-২০১৯। বলাবাহুল্য, এই পরীায় উত্তীর্ণ হতে না পারলে পাওয়া যাবে না সরকারী চাকরি। ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার জন্য কেউ আবেদন করলে তাকেও উত্তীর্ণ হতে হবে এই পরীায়। অস্বীকার করার উপায় নেই যে, দেশে একশ্রেণীর মানুষের মধ্যে ইয়াবা-ফেনসিডিলসহ মাদকাসক্তি বৃদ্ধি পেয়েছে। তরুণদের একাংশের নীতিনৈতিকতাও প্রশ্নবিদ্ধ। সেই প্রোপটে এর প্রয়োজন অস্বীকার করা যায় না।
সংবাদ মাধ্যমে খবর হয়েছে সরকারী চাকরিতে প্রবেশের শর্ত হিসেবে ডোপ টেস্ট তথা মাদকাসক্তি পরীা বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে- বেসরকারী নিয়োগসহ চাকরির েেত্রও অনুরূপ ব্যবস্থা করা হবে পর্যায়ক্রমে। বিষয়টি ২০১৮ সালে প্রণীত মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে পাস হলেও এতদিন বাস্তবায়ন হতে পারেনি যথাযথ আইন ও বিধিমালা এবং আনুষ্ঠানিক পরীাগার বা ল্যাবের অভাবে। সম্প্রতি পুলিশের শতাধিক ব্যক্তি মাদকাসক্ত হিসেবে চিহ্নিত হওয়ায় গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় সামনে চলে এসেছে বিষয়টি। এর জন্য প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হয়েছে ২১টি জেলা, যেখানে ডোপ টেস্টের জন্য নির্মাণ করা হবে আধুনিক ল্যাবরেটরি, যেগুলো পরিচালিত হবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের অধীনে। এর জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১০২ কোটি টাকা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এটি অনুমোদন করলেই কাজ শুরু হবে। নিয়োগের জন্য বাছাইকৃত ব্যক্তির পুলিশ ভ্যারিফিকেশন, স্বাস্থ্য পরীার সঙ্গে করা হবে ডোপ টেস্ট। এসব ল্যাবে বিভিন্ন ধরনের মাদকাসক্তির পরীা নেয়া যাবে নির্ধারিত ফির বিনিময়ে, যা বহন করতে হবে চাকরিপ্রার্থীকে। ডোপ টেস্ট পজিটিভ হলে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত প্রার্থীও অযোগ্য ঘোষিত হবেন। আবার কর্মরতদের মধ্যেও এর আলামত পাওয়া গেলে নেয়া হবে আইনানুগ ব্যবস্থা। আগামী বছরের শুরুতে বিসিএস ক্যাডার, পুলিশসহ বিভিন্ন বিভাগে দুই লাধিক নিয়োগ দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বর্তমানে মাদক ব্যবহারের প্রাবল্যে ডোপ টেস্টের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
এখানে উল্লেখ করা যায়, বর্তমান কর্মরত পুলিশ ও সীমান্তরক্ষীর মধ্যে অনেকেই রয়েছেন যারা মাদক সেবনের পাশাপাশি পাচারও করেন। মেজর সিনহা হত্যার পর বিষয়টি ব্যাপকভাবে প্রকাশ পেয়েছে। এর আগে অনেকে ইয়াবা ও ফেনসিডিলসহ পুলিশ ও র‌্যাবের হাতে ধরা পড়েছেন। অনেকে মাতাল হয়ে খুন, ধর্ষণের মতো জঘন্য ঘটনায় জড়িয়ে পড়েছেন। এসব ঘটনায় সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও সরকার বিব্রত হচ্ছে। এ অবস্থা কাটিয়ে উঠতে পুলিশ বিভাগ ডোপ টেস্ট শুরু করেছে। ইতোমধ্যে তারা শতাধিক পুলিশ শনাক্ত করেছেন। ফলে, নিয়োগে ডোপ টেস্ট আইন কার্যকরের দাবি জোরালো হয়েছে। সরকার তারই ভিত্তিতে ২০১৮ সালে প্রণীত আইন কার্যকরের উদ্যোগ নিয়েছে। আমরা জাতীয় স্বার্থেই এর সমর্থন করি এবং পক্ষপাত ও দলীয় চিন্তামুক্ত হয়ে কার্যকরের আহ্বান রাখি। আশা করি, সরকার কঠোর ও নিরপেক্ষভাবে ডোপটেস্ট আইন কার্যকর করবে এবং সকল ক্ষেত্রে তা কার্যকর করবে।