মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ইস্যু: আলোচনার দায়িত্বে ৩ মন্ত্রী

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ র‌্যাবের বর্তমান ও সাবেক কয়েকজন শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে কাজ করতে তিন মন্ত্রীকে দায়িত্ব দিয়েছে সরকার। তারা হলেন- স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন। গতকাল মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র?্যাব’র সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। গত ১০ই ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে পৃথকভাবে এই নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট (রাজস্ব বিভাগ) ও পররাষ্ট্র দপ্তর। নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসা কর্মকর্তাদের মধ্যে র?্যাব’র সাবেক মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ রয়েছেন। তিনি বর্তমানে বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি)। বেনজীর আহমেদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তর।
একই সঙ্গে তিনি দেশটির ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়েছেন। এ বিষয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এ নিয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে আলোচনা হয়নি। এ বিষয়টি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী দেখছেন। এদিকে বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজিপি) ও র?্যাব’র সাবেক মহাপরিচালক ড. বেনজীর আহমেদসহ সাত কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদ করেছে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশন। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের এমন আকস্মিক একতরফা সিদ্ধান্তে বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিটি সদস্য মর্মাহত ও বিব্রত বলে জানিয়েছে সংগঠনটি। সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশন বলছে, বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সব সময় সৌহার্দ্যপূর্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের সরকারি পর্যায় ছাড়াও প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তি পর্যায়েও এই সুসম্পর্ক বিদ্যমান। নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের এই উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। পুলিশের কর্মতৎপরতার কারণে বাংলাদেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ বিরাজ করছে। বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ, আন্তঃদেশীয় অপরাধ দমন, সাইবার অপরাধসহ নানা অপরাধ দমনে বাংলাদেশ পুলিশ ও যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহ একযোগে কাজ করে যাচ্ছে। নিজেদের মধ্যে অভিজ্ঞতা বিনিময়ের পাশাপাশি বাংলাদেশ পুলিশের দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধিতে যুক্তরাষ্ট্র সরকার বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যদের প্রশিক্ষণ প্রদানসহ নানাভাবে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। এমন সৌহার্দ্যপূর্ণ এক দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বজায় থাকা অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অর্থ দপ্তর ও পররাষ্ট্র দপ্তর কর্তৃক বাংলাদেশ পুলিশের সম্মানিত অভিভাবক আইজিপি বেনজীর আহমেদসহ ৭ জন কর্মকর্তার ওপর যথাযথভাবে যাচাই-বাছাই ছাড়াই নিষেধাজ্ঞা আরোপ অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপ্রত্যাশিত। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশন দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে বাংলাদেশ-বিরোধী একটি চক্র, যারা বাংলাদেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে চায়, বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিকভাবে বিব্রত করতে চায়, দুইদেশের পারস্পরিক বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতামূলক সম্পর্ক বাধাগ্রস্ত করতে চায়- তারাই আন্তর্জাতিক লবিস্ট গ্রুপের সহায়তায় ভুল, মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য সরবরাহ করে বাংলাদেশের প্রকৃত অবস্থাকে গোপন করে যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাবিত করেছে। যুক্তরাষ্ট্র সরকার প্রকৃত তথ্য ও অবস্থা মূল্যায়ন করে তাদের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবে বলে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশন প্রত্যাশা করে বলে বিবৃতিতে বলা হয়েছে।
মৌলিক অধিকার সুরক্ষা কমিটির উদ্বেগ: র‌্যাবের বর্তমান ও সাবেক সাত কর্মকর্তার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মৌলিক অধিকার সুরক্ষা কমিটি। গতকাল কমিটির মুখপাত্র ড. শাহদীন মালিক এর তরফে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, মার্কিন প্রশাসন কর্তৃক র?্যাবের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তাদের ওপর চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে নিষেধাজ্ঞা ও বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। আমরা মনে করি এটি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত অমর্যাদাকর এবং অপমানজনক একটি পদক্ষেপ। এই বিষয়টি দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির চরম অবনতির একটি বহিঃপ্রকাশ।
বিবৃতিতে বলা হয়, অবিলম্বে এই বাহিনীর ভেতরের পরিস্থিতি উন্নয়নের জন্য, বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, নির্যাতন ও অন্যান্য অপরাধের যে ঘটনাগুলো ঘটেছে সেগুলোর ব্যাপারে আশু, দ্রুত এবং উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি করছি। সেইসঙ্গে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের যে ঘটনাগুলো ঘটেছে সে বিষয়ে সংসদীয় স্থায়ী কমিটি, মানবাধিকার কমিশনসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের যথাযথ ভূমিকা প্রত্যাশা করছি। আমরা আশঙ্কা করছি এই ধরনের নিষেধাজ্ঞা সামনে অব্যাহত থাকলে বা আরও সম্প্রসারিত হলে রাষ্ট্র হিসেবে আমরা অত্যন্ত অমর্যাদাকর এবং লজ্জাজনক স্তরে পৌঁছাবো। এই বিষয়গুলো চিন্তা করে এবং বাংলাদেশের ১৯৭২ সালের সংবিধান, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও সংশ্লিষ্ট আদর্শগুলো স্মরণে রেখে অবিলম্বে এই দেশে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো বিচারের আওতায় আনা এবং এই ধরনের ঘটনা যাতে আর কখনো না ঘটে সেই ব্যবস্থা করার জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানাচ্ছি।