যশোরে বিদ্যালয়ের সভাপতি নির্বাচনে উপজেলা চেয়ারম্যানের সাথে যাওয়া বহিরাগতদের বিশৃঙখলা

0

স্টাফ রিপোর্টার॥ একটি বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি নির্বাচন নিয়ে গতকাল যশোর সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের কার্যালয়ে বিশৃক্সক্ষলা সৃষ্টি করেন উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরীর সাথে যাওয়া বহিরাগতরা। সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ঘটনাটি অনাকাঙ্খিত এবং সরকারি কাজে বাধা প্রদান বলে জানিয়েছেন। অপরদিকে কোতয়ালি থানা পুলিশের ওসি মো. তাজুল ইসলাম বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত নন বলে জানিয়েছেন। সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এম. কামরুজ্জামান জানিয়েছেন, গত ৩১ অক্টোবর সদর উপজেলার হাশিমপুরের আয়শা আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য পদে নির্বাচন সম্পন্ন হয়। এতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অভিভাবক সদস্য পদে জগমোহনপুরের ফারুক হোসেন, মশিউল আজম, যোগী গ্রামের নওশের আলী মন্ডল, হুদা রাজাপুর গ্রামের মনিরুল ইসলাম, রাজাপুর গ্রামের সেলিনা খাতুন এবং শিক্ষক সদস্য পদে এনামুল কবীর, আলমগীর হোসেন ও সুরাইয়া পারভীন নির্বাচিত হন।

গতকাল রবিবার দুপুরে এই ৮ সদস্যের ভোটের মাধ্যমে সভাপতি পদে নির্বাচনের জন্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে প্রস্তুতি নেয়া হয়। বিকেল ৩টার কিছু আগে তার কার্যালয়ে হাজির হন উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরী। তার সাথে ফারুক আহমেদ কচি, মঈনুদ্দিন মিঠু, লাবু, শায়ের খানসহ শতাধিক লোক আসেন। ওই ৮ জন ভোটারের সাথেও শতাধিক লোক এসেছিলেন। তার কক্ষের ভেতর উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরীসহ বহিরাগতরা ভিড় করেন। যেহেতু উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরী একজন সম্মানিত ব্যক্তি সে কারণে তাকে তার পাশে একটি চেয়ারে বসতে দেন। এই অবস্থার মধ্যে বিকেল পৌনে ৪টার দিকে তিনি নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু করেন এবং উপস্থিত ভোটারদের কাছে সভাপতির নাম প্রস্তাব করার আহবান জানান। তার কথা শুনে আলাউদ্দিন নামে এক ব্যক্তির নাম সভাপতি পদে প্রস্তাব আনেন একজন ভোটার। এ সময় আরেকজন ভোটার কিছু বলার চেষ্টা করলে সেখানে বহিরাগতরা তাকে বাধা প্রদানসহ হট্টগোল শুরু করেন। শুরু হয় ধাক্কাধাক্কি। চরম বিশৃঙ্খলা কারণে হতবাক হয়ে যান, তিনি কোনঠাসা হয়ে পড়েন। সুষ্ঠু নির্বাচন প্রক্রিয়া বানচাল হয়ে যাওয়ায় ভোটাররা কক্ষের বাইরে চলে যান। বহিরাগতদের অনেকে তাদের সাথে বেরিয়ে যান। এসময় কার্যালয়ের সামনে প্রচণ্ড হট্টগোল বাধে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, বহিরাগতরা মাজহারুল ইসলাম নামে এক জনের পক্ষে অবস্থান নিয়ে তাকে সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত করান। এ জন্য ভোটারদেরকে সন্ত্রাসী কায়দায় চাপ দেয়া হয়। উপজেলা শিক্ষা অফিসার আরও জানান, কিছুক্ষণ পর ভোটরদের মধ্যে পাঁচ জন তার কক্ষে ফিরে আসেন। এ পাঁচ জন হচ্ছেন ফারুক হোসেন, মশিউল আজম, এনামুল কবীর, আলমগীর হোসেন ও সুরাইয়া পারভীন। এবার তারা উপজেলা চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে সভাপতি হিসেবে মাজহারুল ইসলামের নাম প্রস্তাব করেন এবং হাত তুলে তাকে সমর্থন করেন। অপর ৩ জন ভোটার বাইরে অবস্থান করলেও তারা ভোট প্রক্রিয়া থেকে বিরত ছিলেন। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বলেন, উপস্থিত ৫ জন গরিষ্ঠ সংখ্যক ভোটার। তারা হাত তুলে সমর্থন দেয়ায় মাজহারুল ইসলামকে সভাপতি পদে নির্বাচিত ঘোষণা দেয়া হয়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বহিরাগতরা সরকারি কাজে বাধা দিয়েছেন। উপযুক্ত পরিবেশ নষ্ট করে দেয়া হয়েছে। তাদের কারণে সুষ্ঠু নির্বাচনের পূর্ণাঙ্গ প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করা যায়নি। তার রুমে যে ঘটনাটি ঘটেছে তা অনাকাঙ্খিত। বিষয়টি তিনি জেলা শিক্ষা অফিসারকে অবহিত করবেন। কোতয়ালি থানা পুলিশের ওসি মো. তাজুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবহিত নন।
উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরীর কাছে এ বিষয়ে জানতে তার মোবাইল ফোন নম্বরে (০১৭১১ ২৯৮৮৪৩) কয়েক দফা কল দেয়া হয়। কিন্তু তিনি রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। আয়শা আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেন জানান, তিনি ওই সময় শিক্ষা অফিসারের কক্ষে উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু এ বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চান না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্র জানায়, আলাউদ্দিন ইতোপূর্বে ওই বিদ্যালয়ের সভাপতি ছিলেন। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদারের অনুসারী। অপরদিকে মাজহারুল ইসলাম সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদের অনুসারী। সূত্রটি জানান, ভোটারদের তাদের পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করতে বাধা দেয়ার জন্য সেখানে বিশৃঙ্খলতা সৃষ্টি করা হয়। সভাপতি নির্বাচনের ক্ষেত্রে সেখানে প্রভাব বিস্তারের ঘটনাও ঘটেছে বলে সূত্রটি দাবি করেছে।