যশোরে একদিনে সর্বোচ্চ বৃষ্টির রেকর্ড,ক্ষতির আশঙ্কা সবজিতে

0

আকরামুজ্জামান ॥ বর্ষা মৌসুমে একদিনে সর্বোচ্চ বৃষ্টির রেকর্ড হয়েছে যশোরে। গতকাল শুক্রবার টানা ৬ ঘন্টায় ৬৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে এ অঞ্চলে। ভারী বর্ষণে জেলার সবজি আবাদের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। কোথাও কোথাও সদ্যরোপণকৃত আমন ধানের ক্ষেত এখন পানির নীচে। তবে কৃষি বিভাগ এ বৃষ্টিকে সবজি চাষের জন্য কিছুটা ক্ষতি দেখলেও রোপা আমনের জন্য আশীর্বাদ হিসেবে দেখছে। আগামী ২৪ ঘন্টায় আরও বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে বলে আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে। যশোর বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান বিমান ঘাঁটির আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, গতকাল শুক্রবার সকাল ৬ টা থেকে বিকেল ৬টা পর্যন্ত যশোরে সর্বোচ্চ ৬৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এটি এ মৌসুমে একদিনের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত। এসময়ে বাতাসের আদ্রতা ছিল ৯৭ শতাংশ। আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে. এ মৌসুমে গত ৪ আগস্ট সর্বোচ্চ ৭৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়। সেটি ছিল ২৪ ঘন্টার ব্যবধানে। আর গতকাল সকাল ৬ টা থেকে বিকেল ৬ টা পর্যন্ত রেকর্ড করা হয়েছে ৬৮ মিলিমিটার। আজ শনিবার ও কাল রোববার আরও বৃষ্টিপাত হতে পারে। এরমধ্যে রোববার সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, নি¤œচাপের কারণে গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে আকাশে তীব্র মেঘের সৃষ্টি হয়। এটি ঘনীভূত হয়ে গতকাল শুক্রবার ভোর থেকে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি শুরু হয়। পরে বেলা যত বাড়তে থাকে বৃষ্টির তীব্রতাও বাড়তে থাকে। বেলা সাড়ে ১১ টার পরপরই মুষলধারে বৃষ্টিপাত শুরু হয়। অঝোর ধারায় এ বৃষ্টিপাত সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে। ফলে মানুষের জীবনযাত্রা কার্যত অচল হয়ে পড়ে। বৃষ্টির কারণে শহরের অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ ছিল। দুপুরের পর রাস্তায় কোন রিকসা-ইজিবাইক চলেনি। শহর অনেকটা ফাঁকা হয়ে যায়। বৃষ্টিতে পানিবন্দি হয়ে পড়ে শহরের শংকরপুর, বেজপাড়া ও ষষ্ঠীতলার নি¤œাঞ্চলের মানুষজন। পিটিআই সড়কে জমে যায় হাঁটু সমান পানি। কৃষি বিভাগের হিসাব মতে, যশোরে আমন আবাদের চাষ করা হয় ১ লাখ ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে। বিভিন্ন জাতের সবজি আবাদ হয়েছে ১৫ হাজার ৯’শ ৪৫ হেক্টর জমিতে। জেলার কেশবপুর ও মনিরামপুর এলাকার নীচু এলাকার অনেক রোপা আমন ক্ষেত পানির নীচে। সবজি জোন হিসেবে পরিচিত যশোরের সাতমাইল বারীনগর, নোঙরপুর, তীরের হাট এলাকার বিস্তীর্ণ মাঠের সবজি ক্ষেতে পানি জমে গেছে বলে জানান চাষিরা। নোঙরপুর এলাকার কৃষক আমজাদ হোসেন বলেন, শুক্রবার টানা বৃষ্টির কারণে তার এলাকার অধিকাংশ সবজি ক্ষেতে পানি জমে গেছে। এসব ক্ষেতের পানি সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা চলছে। সামনে বৃষ্টিপাত বিলম্বিত হলে নিশ্চিত এসব ক্ষেত নষ্ট হয়ে যাবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। একই কথা বলেন চুড়ামনকাটির কৃষক হযরত আলী। তিনি বলেন, যশোরের মাঠে মাঠে চলছে এখন শীতকালীন আগাম সবজি চাষ। অধিকাংশ ক্ষেতে বাঁধাকপি, ফুলকপি, টমেটোসহ বিভিন্ন জাতের সবজির চারা রোপন করা হয়েছে। এসব চারা সবেমাত্র সতেজ হচ্ছে। কিন্তু ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে তা নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) বিরেন্দ্র নাথ মজুমদার জানান, ভারি বৃষ্টিতে রোপা আমনের ব্যাপক ক্ষতির সম্ভাবনা নেই। বরং এটি রোপা আমনের জন্য আশীর্বাদ হয়ে দেখা দিতে পারে। তবে সবজির ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেন, যেসব এলাকায় সবজি ক্ষেতে পানি জমে গেছে সেসব এলাকার কৃষকদের ক্ষেত থেকে পানি বের করে দেওয়ার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।