ইউপি নির্বাচন নির্বিঘ্ন ও নিরপেক্ষ করতে পুলিশের বিশেষ বার্তা

0

লোকসমাজ ডেস্ক ॥ তৃতীয় দফার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে নির্বিঘœ করতে দেশের সকল জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। মৌখিক, মোবাইলে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়ে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলা হয়েছে, নির্বাচন যেকোনো মূল্যে শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ করতে হবে। নির্বাচনকে ঘিরে যেসব চক্র অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করবে তাদের কঠোর হাতে দমনের আদেশ দেয়ার পাশাপাশি বিট ও কমিউনিটি পুলিশিংকে সক্রিয় রাখতে বলা হয়েছে। যেখানে বিদ্রোহী প্রার্থী বেশি সেই এলাকায় টহল জোরদার রাখার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যেসব এলাকায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ওই এলাকাগুলোর সাধারণ লোকজনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা, সংশ্লিষ্ট এলাকায় নিয়মিত পুলিশের টহল জোরদার করা এবং সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে বলা হয়েছে।
নির্বাচনকে ঘিরে সোশ্যাল মিডিয়ায় যাতে ভুয়া গুজব ছড়িয়ে অস্থিরতা তৈরি করে পরিবেশকে ঘোলাটে না করতে পারে সে জন্য পুলিশের আইসিটি শাখাকে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করার পাশাপাশি সমন্বয়ের জন্য উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে। যে সকল এলাকায় উঠতি সন্ত্রাসীদের আনাগোনা আছে বা কিশোর গ্যাংয়ের মাত্রা বেশি সেই এলাকায় তালিকা ধরে অভিযানের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অবৈধ অস্ত্রের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান চালানোর কথা বলা হয়েছে। দুই ধাপের নির্বাচনের হানাহানিতে এখন পর্যন্ত ৩৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। সহিংসতার হিসাবে দেখা গেছে যে, ১৬টি জেলায় সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে বেশি। ওই সব এলাকায় বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যা বেশি ছিল। নির্বাচনের আগে এবং পরে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা যাতে ভালো থাকে সেজন্য পুলিশের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে এই সব উদ্যোগ। পুলিশ সদর দপ্তরের অপারেশন বিভাগ ও দেশের একাধিক জেলার এসপিদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের বিশেষ বার্তা পাওয়ার ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ জেলার এসপি জায়েদুল আলম মানবজমিনকে জানান, ‘পুলিশ সদর দপ্তর থেকে শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আগামী ২৮শে নভেম্বরে সোনারগাঁও এলাকায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন ঘিরে কোনো ধরনের সহিংসতা ও রক্তপাত সহ্য করা হবে না। যারা করবে তাদের কঠোরভাবে দমন করা হবে।’ এ ছাড়াও জয়পুরহাট, টাঙ্গাইল ও সাতক্ষীরা জেলার এসপিরা পুলিশ সদর দপ্তরের বার্তাটি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। রাজশাহী বিভাগের এক এসপি জানান, মূলত দলীয় কোন্দলের কারণে সংঘাত বৃদ্ধি পাচ্ছে। যেসব এলাকায় বিদ্রোহী প্রার্থী বেশি ওইসব এলাকায় সংঘাতের মাত্রা বেশি। এ ছাড়াও বিরোধী দলের যেসব প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে তাদের সমর্থকদের সঙ্গে ঘটছে সংঘর্ষের ঘটনা। তাদের সামলাতে পুলিশ হিমশিম খাচ্ছে। পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, অতীতের ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনগুলোতে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বরাবরের মতো এবারো সহিংসতা হচ্ছে। প্রার্থীদের মিছিল ও নির্বাচনী অফিসে হামলার ঘটনা ঘটছে।
সূত্র জানায়, কোনো কোনো এলাকায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ১ থেকে ৭ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন। এ ছাড়াও মেম্বার ও নারী সদস্যরাও নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। দলীয় মনোনয়ন পাওয়া চেয়ারম্যানের সমর্থকদের ওপর বেশি হামলা করা হচ্ছে। এই হামলা করছে বিদ্রোহী প্রার্থীর লোকজন। যেসব এলাকায় অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার হচ্ছে ওইসব এলাকায় অস্ত্র উদ্ধারের পাশাপাশি ব্যবহারকারীদের ধরতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সূত্র জানায়, তৃতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিট পুলিশিংকে সক্রিয় করছেন এসপিরা। বিট পুলিশিং এর সদস্যরা নির্বাচনী এলাকাগুলোতে সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করে কারা সহিংসতার উস্কানি দিচ্ছে তাদেরকে চিহ্নিত করবেন। এ ছাড়াও এলাকাগুলোতে পুলিশের পিকেট পার্টি, মোবাইল পার্টি ও টহল পার্টিকে সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখার পাশাপাাশি যারা প্রার্থীদের হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন এবং সমর্থকদের ওপর হামলা করছেন তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছে পুলিশ।