ক্ষয়ক্ষতি কমানোর উদ্যোগ নিন, ঘূর্ণিঝড়ে অরক্ষিত উপকূল

0

প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় সিডর আঘাত হেনেছিল আজ থেকে ১৪ বছর আগে, ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর। প্রায় সাড়ে তিন হাজার মানুষ জীবন হারিয়েছিল। আহত হয়েছিল অর্ধ লক্ষাধিক। ৩০ হাজারের বেশি গবাদি পশু মারা গিয়েছিল। সেদিনের ভয়াবহ স্মৃতি স্মরণ করে এখনো অনেকে শিউরে ওঠেন। এর পরও আইলা, রোয়ানু, বুলবুল, ফণীসহ আরো অনেক ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছে। বহু মানুষ হতাহত হয়েছে। ঘরবাড়ি, সহায়-সম্পদ হারিয়েছে। এখনো অসহায় মানুষ একই রকম ঝুঁকি নিয়ে উপকূলে বসবাস করে। সিডরসহ বিভিন্ন সময়ের ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে উপকূলীয় বেড়িবাঁধের ব্যাপক ক্ষতি হলেও এখনো অনেক বাঁধ মেরামত করা যায়নি। উপকূলবাসীকে রক্ষায় নানা রকম প্রকল্প নেওয়া হলেও সেগুলোর অগ্রগতি নেই বললেই চলে। তাহলে উপকূলীয় অঞ্চলের কয়েক কোটি মানুষের পরিণতি কী হবে?
বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের সংখ্যা ও তীব্রতা দুটিই বাড়ছে। আগে কয়েক বছর পর পর একটি ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানত। এখন প্রায় প্রতিবছরই ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে। কোনো কোনো বছর একাধিক ঘূর্ণিঝড়ও আঘাত হানে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়তে থাকায় তলিয়ে যাচ্ছে অনেক দেশের উপকূলীয় নিম্নাঞ্চলসহ বহু দ্বীপদেশ। বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ উপকূলীয় অঞ্চলেরও একই অবস্থা। ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসের প্রয়োজন হয় না, স্বাভাবিক সময়েই দিনে দুবার জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে নিম্নাঞ্চলের বাড়িঘর ও ফসলি জমি। আর অমাবস্যা-পূর্ণিমায় তো কথাই নেই। ফলে বহু মানুষ বাধ্য হচ্ছে অন্যত্র চলে যেতে কিংবা বড় শহরগুলোতে উদ্বাস্তু জীবন যাপন করতে। উদ্বাস্তু হওয়ার এই প্রবণতা ক্রমেই বাড়ছে।
উপকূলীয় জনজীবন রক্ষার প্রয়োজনে সরকার বিভিন্ন সময়ে অনেক প্রকল্প হাতে নেয়। জানা যায়, বরগুনা জেলায় দুটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল সিডরে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ মেরামতের জন্য। ঢিমেতালে সেই কাজ এখনো চলছে। আরো কত দিন চলবে কেউ জানে না। বিভিন্ন স্থানে বেড়িবাঁধ মেরামতের আরো আটটি প্রকল্প রয়েছে, সেগুলোর অবস্থাও একই রকম। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, আর্থিক সংকটের কারণে অনেক কাজই সময়মতো করা যাচ্ছে না। ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি কমানোর লক্ষ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ‘মুজিব কিল্লা নির্মাণ, সংস্কার ও উন্নয়ন প্রকল্প’ হাতে নিয়েছিল। সাড়ে তিন বছরমেয়াদি এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালের ১ জুলাই। সেই হিসাবে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর। অথচ গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পে বাস্তব অগ্রগতি ছিল ১ শতাংশের মতো, যদিও মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে ১০.৯ শতাংশ অগ্রগতির কথা বলা হয়েছিল। উপকূলীয় অঞ্চলের কয়েক কোটি মানুষের জীবন ঝুঁকিতে রেখে কোনো উন্নয়নই টেকসই হবে না। আমরা চাই, গৃহীত প্রকল্পগুলোর কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা হোক। ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে আরো উদ্যোগ নেওয়া হোক।