যশোরে বিএনপির লিফলেট বিতরণ: দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠলেও সরকার সম্পূর্ণ নির্বিকার

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ চাল, ডাল, তেল, গ্যাসসহ সকল নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অসহনীয় মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে যশোর জেলা বিএনপি লিফলেট বিতরণ করেছে। গতকাল সোমবার কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক নার্গিস বেগম নেতা-কর্মীদের নিয়ে শহরের এইচএমএম রোডের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ও পথচারীদের মাঝে এই লিফলেট বিতরণ করেন। লিফলেটে বর্তমান বাজার পরিস্থিতি তুলে ধরে গণবিচ্ছিন্ন আওয়ামী লীগ সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট সিন্ডিকেটের কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় সকল পণ্যে আগুন লেগেছে। এতে মানুষের জীবনযাত্রা দুর্বিষহ হয়ে পড়লেও সরকার সম্পূর্ণ নির্বিকার এবং তারা গণবিরোধী এজেন্ডা বাস্তবায়নেই ব্যস্ত রয়েছে। ১০ টাকা কেজি চাল খাওয়ানোর মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসার পর থেকে চালের বাজার যেন পাগলা ঘোড়া। সবচেয়ে কম দামের চালও এখন ৫২ থেকে ৫৫ টাকা কেজিচ দরে বিক্রি হচ্ছে। আর সরু চালের দাম ৭০ টাকার উপরে। সরকারি সংস্থা টিসিবির মতে গেল বছরের তুলনায় এক বছরে চালের দাম বেড়েছে ৩১ শতাংশ। যা এশিয়ার মধ্যে বংলাদেশে সবচেয়ে বেশি। গত চার মাসে গড়ে সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে ৫৬ দশমিক ২৫ শতাংশ। এখন প্রতি লিটার সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়। যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দাম। ৮৫৯ টাকার এলপিজি গ্যাস বিক্রি হচ্ছে ১৩৬১ টাকায়। পাঁচটির বেশি সবজি ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। অধিকাংশ সবজি ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায়। দেশি আদার দাম বেড়েছে ৪৮ শতাংশ। দেশি পেঁয়াজের দাম ৫৩ শতাংশ এবং আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৬০ শতাংশ। এক মাসের ব্যবধানে দুই কেজি আটার প্যাকেট ৭০ টাকার পরিবর্তে ৭৫ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৭০ টাকার চিনি ৯০ টাকায়। এক মাস আগের ৩০ টাকার এক হালি ডিম বর্তমানে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ২৩ শতাংশ। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সারের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়ানো হয়েছে। গেল বছর ৫ কেজি টিএসপি সারের মূল্য ছিল ১১০ থেকে ১২০ টাকা, সেই সার বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৭০ টাকায়। ইতিমধ্যে পানির দাম বাড়ানো হয়েছে ৫ শতাংশ। এমনিভাবে সরকার বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েই চলেছে। করোনাকালেও হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধি করা হয়েছে অসহনীয় মাত্রায়। সুতা এবং রংয়ের চরম মূল্য বৃদ্ধিতে তাঁত শিল্প এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। গেল বছরের চেয়ে সুতার দাম বেড়েছে ৬০ শতাংশ এবং রঙের দাম বেড়েছে দ্বিগুণ। এভাবে মূল্য বৃদ্ধির পাগলা ঘোড়ার দৌঁড়ে মানুষের জীবন-জীবিকা নির্বাহ যখন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে তখন মড়ার ওপর খাড়ার ঘার মতো জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে গণপরিবহনের ভাড়া। অন্যান্য ক্ষেত্রেও এর প্রভাব পড়েছে। লিফলেটে আরও উল্লেখ করা হয়েছে। প্রায় পৌনে দুই বছরের করোনা মহামারীতে মানুষের কর্মসংস্থান ভয়াবহভাবে হ্রাস পেয়েছে। মানুষের আয় কমেছে ৪০ শতাংশ। সরকারি হিসাব অনুযায়ী করোনার পূর্বে দেশে যে বেকার ছিল তা ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বলা হচ্ছে, করোনাকালে দেশে চার কোটি লোক বেকার হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে বেকারের সংখ্যা অনেক বেশি। লিফলেট নিত্যপণ্যের সীমাহীন মূল্যবৃদ্ধি, দুর্নীতি, লুটপাট, বাড়ার সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম ও একদলীয় দুঃশাসনের বিরুদ্ধে এবং জনগণের যানমাল ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানানো হয়। লিফলেট বিতরণ কর্মসূচিতে অংশ নেন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাড. সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকন, জেলা মৎস্যজীবী দলের আহ্বায়ক ইসমাইল হোসেন টেনিয়া, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি রবিউল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা আমির ফয়সাল, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি রাজিদুর রহমান সাগর, সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান বাপ্পি প্রমুখ।