সাড়ে ৫৮ লাখ মেট্রিক টন জ্বালানি তেল আমদানির পরিকল্পনা

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ করোনার প্রকোপ এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। দেশের অর্থনীতি ধীরে ধীরে গতি ফিরে পাচ্ছে। বিভিন্ন কাজে পরিশোধিত জ্বালানি তেলের চাহিদাও বেড়েছে। এই চাহিদা মেটাতে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত জিটুজি ভিত্তিতে বিভিন্ন উৎস থেকে ৫৮ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন বিভিন্ন ধরনের জ্বালানি তেল আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে। এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদনের জন্য অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির পরবর্তী সভায় উপস্থাপন করা হবে বলে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০১৬ সাল থেকে জ্বালানি তেলের চাহিদার ৫০ শতাংশ জিটুজি ভিত্তিতে এবং বাকি ৫০ শতাংশ উন্মুক্ত আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে আমদানি করে আসছে। সূত্র জানায়, দেশে ব্যাপকভাবে কোভিড-১৯ এর টিকা দেওয়ার কার্যক্রম চলমান থাকায় করোনা পরিস্থিতির উন্নতিতে সরকার ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-কলকারখানা এবং পর্যটন খাতসহ বিভিন্ন কার্যক্রম চালুর অনুমতি দেওয়ার ফলে বিগত সময়ের তুলনায় ২০২২ সালে অর্থনৈতিক কার্যক্রম ব্যাপকভাবে গতিশীল হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ফলশ্রুতিতে জ্বালানি তেলের চাহিদা ও ব্যবহার ক্রমান্বয়ে বাড়বে। স্থানীয়ভাবে জ্বালানি তেলের উৎস হিসেবে ইস্টার্ন লিফাইনারি (ইআরআই) সর্বোচ্চ পরিমাণ জ্বালানি তেল সরবরাহ করে থাকে। বেসরকারি উদ্যোগে স্থাপিত বিভিন্ন ক্রড অয়েল/কনডেনসেট প্রসেসিং প্ল্যান্ট ২০২১ সালে চালু হওয়ায় স্থানীয় উৎস থেকে জ্বালানি তেলের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। সূত্র আরো জানায়, বিগত সময়ের জ্বালানি তেলের চাহিদা অপ্রত্যাশিতভাবে কমবেশি হয়ে থাকে। ২০২১ পঞ্জিকাবর্ষেও শেষ দিকে বিশ্ববাজারে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) দাম বাড়ার কারণে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ কমে যাওয়ায় ফার্নেস অয়েল ও ডিজেলের চাহিদা অপ্রত্যাশিতভাবে বেড়ে যায়। এ আকস্মিক চাহিদা পূরণের অতিরিক্ত জ্বালানি তেল আমদানির লক্ষ্যে সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে আবার প্রশাসনিক অনুমোদন নিতে হয়। এতে সময় স্বল্পতার কারণে চাহিদা অনুযায়ী জ্বালানি তেল আমদানি ও সরবরাহ ঝুঁকির সম্মুখীন হয়।
সূত্র জানায়, জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতের লক্ষ্যে এবং জ্বালানি তেলের আকস্মিক চাহিদা বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করে ২০২২ পঞ্জিকাবর্ষেও জন্য প্রণীত সম্ভাব্য চাহিদার পাশাপাশি নিরাপদ সরবরাহ খারা বিবেচনায় নিয়ে কিছু অতিরিক্ত পরিমাণ জ্বালানি তেল আমদানির অনুমোদনের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবিত অতিরিক্ত পরিমাণ আমদানির ক্ষেত্রে আমদানি সময়ে জিটুজি ভিত্তিতে নেগেশিয়েশন করা প্রিমিয়াম অথবা কোটেশনের ভিত্তিতে আমদানি করা হবে। বিপিসি’র চাহিদা অনুযায়ী ২০২২ পঞ্জিকাবর্ষের জন্য জরুরি/আকস্মিক চাহিদাসহ ৪৪ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন ৫০ পিপিএম সালফার মানমাত্রার গ্যাস অয়েল (ডিজেল), ৪ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন জেটএ-১ (এভিয়েশন ফুয়েল), ৪ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন মোগ্যাস (অকটেন) ৩ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন ফর্নেস অয়েল এবং ১ লাখ ৫০ হাজার টন মেরিন ফুয়েল আমদানির প্রস্তাব করা হয়েছে। অন্যান্য গ্রেডের জ্বালানি তেল যেমন কেরোসিন ও পেট্রোলের চাহিদা ইআরএল ও স্থানীয় উৎস থেকে পূরণ করা হয়। বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউটের (বিএসটিআই) নির্ধারিত মানদণ্ড অনুযায়ী দেশে পেট্রোলের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণের জন্য ইআরএল আমদানিকৃত মোগ্যাস (অকটেন) ব্লেন্ডিং করে পেট্রোল উৎপাদন করবে। এ ছাড়াও বিপিসি ইতোমধ্যে ভারতের নুমালিগড় রিফাইনারি লিমিটেড (এনআরএল) থেকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে জ্বালানি তেল আমদানির লক্ষ্যে সেলস অ্যান্ড পারচেজ অ্যাগ্রিমেন্ট (এসপিএ) স্বাক্ষর করেছে। পাইপ লাইন নির্মাণের কার্যক্রম শেষ পর্যায়ে রয়েছে। পাইপ লাইন নির্মাণের আগে অন্তর্বর্তী সময়ে আগের ধারাবাহিকতায় পার্বতীপুর ডিপো, দিনাজপুর/উত্তরাঞ্চলে ২০২২ সালে ডিজেলের চাহিদা পূরণের জন্য এনআরএল থেকে রেল ওয়াগনের মাধ্যমে ডিজেল আমদানি করা হবে।