বকেয়া ২ কোটি টিকা কবে পাবে বাংলাদেশ?

0

রঞ্জন বসু, দিল্লি॥ ভারতে কোভিড-১৯ টিকাকরণ কর্মসূচি শুরু হওয়ার ঠিক ৯ মাস পাঁচ দিনের মাথায় আজ (বৃহস্পতিবার) সকালে দেশটিতে ১০০ কোটি ডোজ টিকা দেওয়া সম্পূর্ণ হয়েছে। ভ্যাকসিনেশনের ক্ষেত্রে ভারত এই গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক স্পর্শ করলেও বাংলাদেশ বা নেপালে পুরনো অঙ্গীকার অনুযায়ী ঠিক কবে থেকে আবার টিকার চালান পাঠানো শুরু হবে সেই নির্দিষ্ট তারিখ কিন্তু এখনও বলতে পারছে না দিল্লি কর্তৃপক্ষ। দিল্লিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বললেও তারা বল ঠেলে দিয়েছেন পুনের সেরাম ইনস্টিটিউটের কোর্টে।
মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, ‘দেশের ভেতরে টিকার চাহিদা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আসায় এবং উৎপাদন বাড়ায় আমরা গত মাসেই সেরাম ইনস্টিটিউটকে বাংলাদেশে ১০ লাখ কোভিশিল্ড পাঠানোর অনুমতি দিয়েছি। এখন তারা তাদের প্রোডাকশন শিডিউল ও সুযোগ-সুবিধা অনুযায়ী কবে প্রতিবেশী দেশগুলোতে টিকা পাঠাতে পারবে, সেটা তাদের ওপরই নির্ভর করছে।’ পুনের সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া (যারা ভারতে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার উদ্ভাবিত টিকাটি কোভিশিল্ড নামে উৎপাদন ও বাজারজাত করছে) আবার এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে মুখই খুলতে চাইছে না।
তবে ওই প্রতিষ্ঠানের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা আভাস দিয়েছেন, চলতি মাসের মধ্যেই (অর্থাৎ ৩১ অক্টোবরের আগেই) তারা বাংলাদেশ, নেপাল ও মিয়ানমার–এই তিনটি প্রতিবেশী দেশের প্রতিটিতে ১০ লাখ ডোজ করে কোভিশিল্ড টিকার চালান পাঠাতে শুরু করবেন।
বাংলাদেশ (সে দেশের সরকার ও ফার্মা কোম্পানি বেক্সিমকো) এর আগে গত বছরই সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে মোট ৩০ মিলিয়ন বা ৩ কোটি ডোজ কোভিশিল্ড কেনার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছিল। এর একটা বড় অংশের দামও আগাম মিটিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু সেই চুক্তি অনুযায়ী ৭০ লাখ ডোজ বাংলাদেশে পাঠানো হলেও (সেই সঙ্গে অতিরিক্ত ৩০ লাখ ডোজ পাঠানো হয় উপহার হিসেবে) এপ্রিলে যখন মহামারির বিধ্বংসী সেকেন্ড ওয়েভ ভারতে আঘাত হানে– তখন আচমকাই ভারত বিদেশে টিকা রফতানি বন্ধ করে দেয়। অথচ চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশের এখনও ২ কোটিরও বেশি কোভিশিল্ড পাওয়ার কথা। এপ্রিলে টিকা রফতানি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশ তাদের প্রাপ্য টিকা, বা তার অন্তত কিছুটা অংশ পাওয়ার জন্য পরবর্তী ছয় মাসে ভারতের কাছে অনেক অনুরোধ-উপরোধ জানিয়েছে– দেনদরবার করা হয়েছে কূটনৈতিক পর্যায়েও। অবশেষে গত ২০ সেপ্টেম্বর ভারতের স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখভাই মান্ডভিয়া দিল্লিতে ঘোষণা করেন, ভারত আবার বিদেশে টিকা রফতানি শুরু করবে খুব শিগগিরই– আর তা শুরু হবে বাংলাদেশ-নেপালের মতো প্রতিবেশী দেশগুলোকে দিয়েই।
ভারতের স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখভাই মান্ডভিয়া
ভারতীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী এই ঘোষণা করার আগে তার কার্যালয়ে বিশেষ করে বিদেশি সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের বিশেষ করে ডেকে পাঠিয়েছিলেন– যাতে ভারতের টিকা রফতানি ফের শুরু করার খবর বিদেশেও ফলাও করে প্রচারিত হয়। সেই খবর যথারীতি গুরুত্বও পেয়েছে, কিন্তু ঘটনা হলো মন্ত্রীর সেই ঘোষণার পর এক মাসেরও বেশি কেটে গেলেও এখন পর্যন্ত কিন্তু এক ডোজ টিকাও রফতানি করা যায়নি। ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ, নেপাল ও মিয়ানমার—এই তিনটি প্রতিবেশী দেশের প্রতিটিতে দশ লাখ ডোজ করে কোভিশিল্ড পাঠানোর জন্য সেরাম ইনস্টিটিউটকে অনুমতি দিয়েছে। এছাড়া ভারতের আর একটি ভ্যাক্সিন-নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ভারত বায়োটেককেও অনুমতি দেওয়া হয়েছে, যাতে তারা ইরানে ১০ লাখ ডোজ কোভ্যাক্সিন পাঠাতে পারে। অনুমতি মিললেও কার্যক্ষেত্রে টিকার কনসাইনমেন্ট কিন্তু এখনও ঢাকা বা কাঠমান্ডুগামী বিমানে তোলা সম্ভব হয়নি। যদিও সেটা আগামী দশ-বারো দিনের মধ্যেই সম্ভব হচ্ছে বলে আশা করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার সকালে ভারতের একশো কোটি টিকা দেওয়ার মাইলফলক স্পর্শ করার মুহূর্তটি প্রত্যক্ষ করতে প্রধানমন্ত্রী মোদি দিল্লির রাম মনোহর লোহিয়া হাসপাতাল পরিদর্শন করেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী মান্ডভিয়া টুইট করেন, ‘অভিনন্দন, ভারত!’ কিন্তু টিকার অপেক্ষায় মাসের পর মাস ধরে বসে থাকা বাংলাদেশ বা নেপাল যে কবে আবার ভারতকে ধন্যবাদ বা অভিনন্দন জানানোর সুযোগ পাবে, দিল্লির কাছে সেই উত্তর এখনও অস্পষ্ট।