অশনি সংকেত

0

॥সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী॥
বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য বিশ্বে বিখ্যাত। কিন্তু সহসা দেশে যে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা দেখা যাচ্ছে এটা ভয়ঙ্কর ঘটনা। এ ধরনের ঘটনা কখনো কাম্য নয়। এটা খুবই দুঃখজনক। এর আগে কখনো এই ধরনের সাম্প্রদায়িক সহিংসতা আমরা দেখিনি। আমরা দেখি যে, এসব ঘটনা ঘটলে তদন্তের আগেই অপরাধীকে চিহ্নিত করা হয়। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, এটি বিরোধী দলের কাজ। আর বিরোধী দল বলে সরকারের ভেতরের লোকের কাজ।
পরস্পরবিরোধী বক্তব্যে আসল অপরাধী ধরা পড়ে না। অপরাধকে আরও উৎসাহ দেয়া হয়। আগেও পূজার সময় প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। সেসব ঘটনার সঠিক তদন্ত করে বিচার হয়নি বলেই আজ সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। সরকার আন্তরিক হলে অবশ্যই আসল অপরাধীকে ধরা সম্ভব। এ ঘটনার সূত্রপাত যেখান থেকে শুরু তার তদন্ত আগে করতে হবে। কারা পূজামণ্ডপে কোরআন শরীফ নিয়ে গেল। কেন তারা এ কাজ করলো। কিংবা কি তাদের অভিপ্রায় ছিল। কারা এটি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দিলো তার কারণ আগে খুঁজে বের করতে হবে। গোয়েন্দাদের তো জানার কথা এটা কারা করেছে। কোনো ধর্মপ্রাণ মসুলমানের পক্ষে এ কাজ করা সম্ভব নয়। আবার হিন্দুদের পক্ষেও এটি সম্ভব না। কুমিল্লার ঘটনার রেশ ধরেই পরবর্তী সহিংসতাগুলো হয়েছে। তাহলে কী সহিংসতা ছড়াতেই এ ঘটনা ঘটিয়েছে। যারা এ কাজ করেছে তারা হয়তো ভাবছে মস্তবড় কাজ করেছে। অপরাধের যে নগ্ন রূপ আমরা দেখেছি এটি দেশের জন্য একটা অশনি সংকেত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোনো গুজবকে কেন্দ্র করে সহিংসতার ঘটনা দিনে দিনে বেড়ে চলেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে আমরা বিনোদন হিসেবে নিয়েছি। এতদিন এর শুধু সুফল দেখেছি। আসলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মানুষকে আসক্ত করে ফেলেছে। সামাজিকতা থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভয়ঙ্কর দিক আমরা দেখতে পেলাম রংপুরের পীরগঞ্জের জেলে পল্লীতে। একটি গুজবকে কেন্দ্র করে একটি পল্লীকে জ্বালিয়ে দেয়া হলো। সম্প্রতি ফেসবুকের এক কর্মকর্তাও এর ক্ষতিকর দিক তুলে ধরেছেন। শুধু মুনাফার জন্যই কাজ করে এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো। আমাদের দেশে তরুণ সম্প্রদায় হতাশাগ্রস্ত, মাদকাসক্ত হওয়ার কারণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মধ্যে বেশি অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ক্ষতিকর দিকগুলো কীভাবে প্রতিকার করা যায় তা নিয়ে আমাদের এখনই ভাবতে হবে। তা-না হলে দেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা আরও বাড়বে।