স্বাস্থ্যের সাবেক ডিজিকে আদালতের প্রশ্ন : সাহেদের সঙ্গে এত মহব্বত কীভাবে হয়েছিল

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) আবুল কালাম আজাদের কাছে বিচারক জানতে চান, সাহেদের সঙ্গে আপনার এত মহব্বত কীভাবে হয়েছিল? আজাদ উত্তরে বলেন, চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার দিন সাহেদের সঙ্গে আমার প্রথম দেখা হয়েছিল। স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে মন্ত্রী মহোদয় উপস্থিত ছিলেন। আরও বড় বড় কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ওই থেকে সাহেদের সঙ্গে আমার পরিচয়। তিনি আরও বলেন, আমি আগে থেকে জানতাম না সাহেদ একজন প্রতারক ছিলেন। বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ কেএম ইমরুল কায়েশের আদালতে জামিন আবেদনের শুনানিতে বিচারকের প্রশ্নের জবাবে আদালতকে এসব কথা বলেন সাবেক ডিজি আবুল কালাম আজাদ। এর আগে আইনজীবীর মাধ্যমে জামিন আবেদন করেন আজাদ। তার পক্ষে জামিন শুনানি করেন ব্যারিস্টার মাসুদ মজুমদার। অপরদিকে দুদকের পক্ষে মীর আহম্মেদ আলী সালাম জামিনের বিরোধিতা করেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মীর আহমেদ আলী সালাম গণমাধ্যমকে বলেন, দুদকের করা এই মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি আবুল কালাম আজাদ আজ আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। আসামিপক্ষ থেকে আদালতকে জানানো হয়, আজাদ অসুস্থ। তার ক্যানসার হয়েছিল। আরও কিছু শারীরিক জটিলতার কথা আদালতে তুলে ধরা হয়। তবে দুদকের পক্ষ থেকে জামিনের বিরোধিতা করে আদালতকে জানানো হয়, লাইসেন্স নবায়নবিহীন বন্ধ রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তিও করেন আবুল কালাম আজাদ। করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা ও চিকিৎসার খরচ বাবদ টাকা আত্মসাৎ করেছেন আসামিরা। দুই পক্ষের বক্তব্য শুনে বিচারক এ মামলার পরবর্তী তারিখ ২রা নভেম্বর পর্যন্ত আবুল কালাম আজাদের জামিন মঞ্জুর করেন।
শুনানিতে আবুল কালাম আজাদ বিচারককে বলেন, আমি জীবনে কোনো অন্যায় করিনি। আর কখনো অন্যায় করবোও না। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে রিজেন্ট হাসপাতালের মাধ্যমে করোনা টেস্ট করার নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু মানবসেবার নামে করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য টাকা নিয়েছে রিজেন্ট হাসপাতাল। এমন অভিযোগ জানতে পেরে সঙ্গে সঙ্গে বলি, এই দুইটি শাখা বন্ধ হয়ে যাবে। এরপর বিচারক তাকে প্রশ্ন করেন, সাহেদের সঙ্গে আপনার এত মহব্বত কীভাবে হয়েছিল? বিচারকের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, স্বাক্ষর হওয়ার দিনে সাহেদের সঙ্গে আমার প্রথম দেখা হয়েছিল। ওই থেকে সাহেদের সঙ্গে আমার পরিচয়। আমি আগে থেকে জানতাম না সাহেদ একজন প্রতারক। আবুল কালাম আজাদ বলেন, স্যার, আমি ডায়াবেটিসের রোগী। আমার জীবন তুচ্ছ করে মানুষের জন্য কাজ করেছি। স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে মন্ত্রী মহোদয় উপস্থিত ছিলেন। আরও বড় বড় কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ওই থেকে সাহেদের সঙ্গে আমার পরিচয়। তিনি আরও বলেন, স্যার, আমার ডায়াবেটিস রয়েছে। আমরা জীবন তুচ্ছ করে মানুষের জন্য কাজ করেছি। আমি কোনো অপরাধ করিনি, আর ভবিষ্যতেও করবো না।
গত বছরের ২৩শে সেপ্টেম্বর করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা ও চিকিৎসার খরচ বাবদ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে পাঁচজনকে আসামি করে মামলা করেন দুদকের উপ-পরিচালক মো. ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারী। মামলার অভিযোগে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে লাইসেন্স নবায়নবিহীন বন্ধ রিজেন্ট হাসপাতালকে ডেডিকেটেড কোভিড হাসপাতালে রূপান্তর, মেমোরেন্ডাম অব আন্ডারস্ট্যান্ডিং সম্পাদন ও সরকারি প্রতিষ্ঠান নিপসমের ল্যাবে ৩ হাজার ৯৩৯ জন কোভিড রোগীর নমুনা বিনামূল্যে পরীক্ষা করিয়েছেন। যেখান থেকে অবৈধ পারিতোষিক বাবদ রোগীপ্রতি সাড়ে ৩ হাজার টাকা হিসাবে ১ কোটি ৩৭ লাখ ৮৬ হাজার ৫০০ টাকা গ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়া রিজেন্ট হাসপাতালের মিরপুর ও উত্তরা শাখার চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ডবয় ও অন্যান্য কর্মকর্তার খাবার খরচ বরাদ্দের বিষয়ে ১ কোটি ৯৬ লাখ ২০ হাজার টাকার মাসিক চাহিদা তুলে ধরেছেন। দুদকের মামলায় ছয় বছর ধরে নবায়ন বন্ধ থাকা রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে কোভিড চিকিৎসায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করা চুক্তিকে অবৈধ বলে উল্লেখ করা হয়। তখন চুক্তি নিয়ে সমালোচনার মুখে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর দাবি করে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের’ নির্দেশে ওই চুক্তি করা হয়েছিল। পরে অধিদপ্তরের ওই বক্তব্যের ব্যাখ্যা চায় মন্ত্রণালয়। জবাবে আরেক চিঠিতে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ দাবি করেন, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সাবেক সচিব আসাদুল ইসলামের ‘নির্দেশে’ রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছিল। পরে অভিযোগ অনুসন্ধান করতে গিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন সচিব আসাদুল ইসলাম ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল দুদক। এক পর্যায়ে আজাদ মহাপরিচালক পদ থেকে ইস্তফা দেন। এরপর গত ২৯শে সেপ্টেম্বর নতুন করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক ডিজি আবুল কালাম আজাদকে অন্তর্ভুক্ত করে ছয়জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় দুদক। অভিযোগপত্রভুক্ত অপর পাঁচ আসামি হলেন- রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. সাহেদ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক আমিনুল হাসান, উপপরিচালক (হাসপাতাল-১) মো. ইউনুস আলী, সহকারী পরিচালক (হাসপাতাল-১) মো. শফিউর রহমান ও গবেষণা কর্মকর্তা মো. দিদারুল ইসলাম।