কার স্বার্থে কথা বলছে কোয়াব, ক্লিন ফিড কি অসম্ভব?

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ ১ অক্টোবর থেকে বিদেশি টেলিভিশন চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ করার বিষয়ে নেওয়া সরকারি সিদ্ধান্ত কার্যকর করেছে ক্যাবল অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (কোয়াব)। সরকারের বক্তব্য- বিজ্ঞাপনযুক্ত বিদেশি চ্যানেল প্রচার করা যাবে না। এতে বছরে দুই হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দেশ। ক্যাবল অপারেটররা বলছে, বিজ্ঞাপনমুক্ত (ক্লিন ফিড) বিদেশি চ্যানেল চালানো সম্ভব নয়। যদিও দেশীয় টিভি চ্যানেলগুলো বলছে এটি সহজ একটি কাজ। প্রশ্ন হলো, কার স্বার্থে কথা বলছে কোয়াব? এ বিষয়ে কোয়াব সভাপতি আনোয়ার পারভেজের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা ক্লিন ফিড চালাতে পারবো না। তাই ক্যাবল টিভির সম্প্রচার বন্ধ রেখেছি। যতদিন বিষয়টির সুরাহা না হচ্ছে ততদিন সম্প্রচার বন্ধ থাকবে।’
ক্লিন ফিড সম্ভব নয়: কোয়াব
এক প্রশ্নের জবাবে আনোয়ার পারভেজ বলেন, ‘ক্লিন ফিড সম্ভব নয়। এ কারণে আমরা কোনও চ্যানেল চালাতে পারছি না।’ ক্রিকেট বা ফুটবলের মতো খেলা লাইভ সম্প্রচার হচ্ছে, তাতে আমাদের স্থানীয় বিজ্ঞাপন প্রচার হচ্ছে। এক্ষেতে ক্লিন ফিড আনা কীভাবে সম্ভব হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘একটা প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান খেলার প্রোডাকশন তৈরি করে। সেই প্রোডাকশন তারা বিভিন্ন দেশের স্বত্বপ্রাপ্তদের দেয়। আমাদের দেশে কোনও চ্যানেলের অনুষ্ঠান প্রচার কারা করবে?’ উল্টো প্রশ্ন রাখেন তিনি। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর সম্প্রচারও বন্ধ রাখা হয়েছে কিনা এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের বলা হয়েছে বিদেশি বিজ্ঞাপনযুক্ত চ্যানেল চালানো যাবে না। এখন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগেুলোতে কোনও বিজ্ঞাপন যদি প্রচার হয়ে যায় সেটার দায় কে নেবে? আমাদের পক্ষে তো এত চ্যানেল মনিটর করা সম্ভব নয়। যে কারণে সব বিদেশি চ্যানেলই বন্ধ রেখেছি।’
ক্লিন ফিড সম্ভব: দেশীয় বিশেষজ্ঞরা
কোয়াব বলছে ক্লিন ফিড সম্ভব নয়। এদিকে দেশীয় টিভি চ্যানেলগুলো বলছে এটা সহজ কাজ। দেশের একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের শীর্ষ এক কর্মকর্তা বলেন, বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলের সম্প্রচার চলে। ধরা যাক ভারতের কোনও টিভি চ্যানেলে একটি অনুষ্ঠান বা সিরিয়াল প্রচার হবে। ওই সিরিয়াল এয়ারিংয়ের সময় যে জায়গাগুলোতে বিজ্ঞাপন প্রচার হয় সেসব জায়গায় প্রমোশনাল চালাতে পারে। তিনি বলেন, ট্রান্সমিশনের সময় এটা করা যেতে পারে। এটা সংশ্লিষ্ট চ্যানেল কর্তৃপক্ষই করতে পারে। এতে হয়তো আমাদের দেশের দর্শকরা আধ ঘণ্টা পরে অনুষ্ঠানটা দেখতে পারবে। তবে ক্লিন ফিড সম্ভব নয় কথাটা ঠিক নয়। ওই টিভি কর্মকর্তা আরও উল্লেখ করেন, ভারতীয় টিভি চ্যানেলগুলোতে অনেক পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচার হয় যার মধ্যে অনেকগুলো এ দেশে পাওয়া যায়। ওই বিজ্ঞাপন প্রচারের ফলে সংশ্লিষ্ট পণ্যের আমদানিকারক বা স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত (মাল্টিন্যাশনাল প্রতিষ্ঠান) পণ্যের বিজ্ঞাপন দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেন না। এতে দেশীয় চ্যানেলগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দেশীয় বিজ্ঞাপনের বাজার বড় হচ্ছে না। আমাদের বিজ্ঞাপনের বাজার দেড় হাজার কোটি টাকার কিছু বেশিতে আটকে আছে। এ ধরনের উদ্যোগ নিলে তা সর্বোপরি দেশের জন্যই ভালো।
অ্যাপস, ইউটিউব খোলা
ক্যাবল অপারেটররা বিদেশি চ্যানেলের প্রচার বন্ধ রাখলেও এ দেশে খোলা আছে বিভিন্ন ওটিটি (ওভার দ্য টপ) অ্যাপস ও ইউটিউব প্লাটফর্ম। ভারতের জি নেটওয়ার্ক ও স্টার গ্রুপের বিভিন্ন চ্যানেল রয়েছে অ্যাপসে। সেসব অ্যাপসে দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন সিরিয়াল, অনুষ্ঠান। এ ছাড়া বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের ইউটিউবে চ্যানেলও আছে। টিভিতে সিরিয়াল প্রচার শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চলে যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট ইউটিউব চ্যানেলে। কোনও কোনও সিরিয়াল এক দুইদিন পর হলেও আসছে। বিজ্ঞাপনমুক্তভাবেই দেখা যাচ্ছে। কোনওটিতে থাকছে ইউটিউব থেকে দেওয়া বিজ্ঞাপন। এ বিষয়ে কোয়াব সভাপতি আনোয়ার পারভেজ বলেন, আমি সরকার, বিটিআরসিকে অনুরোধ জানাবো এসব অ্যাপ, ইউটিউব চ্যানেলও বন্ধ করে দেওয়া হোক।
তথ্যমন্ত্রী যা বলছেন
এভাবে সরকার চ্যানেল বন্ধের নির্দেশ দিতে পারে কিনা তা নিয়ে চলছে সমালোচনা। শনিবার দুপুরে চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমিতে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ স্পষ্ট জানিয়ে দেন, সরকার কোনও চ্যানেল বন্ধ করেনি। দেশের আকাশ উন্মুক্ত রয়েছে। বিজ্ঞাপনমুক্ত বা ক্লিনফিড প্রদর্শনের আইন মানা বিদেশি চ্যানেলগুলোর যেমন দায়িত্ব, একই সঙ্গে যারা সেগুলো এখানে সম্প্রচার করে, তাদেরও দায়িত্ব। ‘আমরা বহুবার তাগাদা দিয়েছি। শেষ পর্যন্ত যারা এখানে বিদেশি চ্যানেলের প্রতিনিধি তাদের সঙ্গে ক্যাবল অপারেটর ও দেশের টিভি চ্যানেলগুলোর মালিকদের নিয়ে বৈঠক করে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম ১ অক্টোবর থেকে আইন কার্যকর করবো। সে অনুযায়ী গতকাল থেকে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেছি। তিনি আরও বলেন, আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বিদেশি চ্যানেলগুলো বিজ্ঞাপনসহ সম্প্রচার করছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে দেশ প্রতিবছর প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ কারণে আমরা এ পদক্ষেপ নিয়েছি।