দুর্ধর্ষ আকুলকে ৮টি অস্ত্র ও ৪ সঙ্গীসহ আটক করায় বেনাপোল সীমান্তে বিরাজ করছে উৎসব আর আতঙ্ক

0

সুন্দর সাহা॥ ছাত্রলীগ নেতা দুর্ধর্ষ বাহিনী প্রধান আন্তঃদেশীয় অস্ত্র ব্যবসায়ী আকুল হোসাইনকে আটকের পর বেরিয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। রাজনৈতিক ছত্রছায়া ছাড়াও তার নিকট আত্মীয় এক পুলিশ কর্মকর্তাকে ঢাল বানিয়ে আকুল হয়ে ওঠে সীমান্তের বহু অপকর্মের হোতা। সোনা এবং হুন্ডি ব্যবসায়ীদের সোনা ও টাকা-ডলার কেড়ে নেয়া ছাড়াও অস্ত্র, সাপের বিষ, মাদক, হুন্ডি ও স্বর্ণ পাচার ছাড়াও স্থানীয় ব্যবসায়ী, বিরোধী ও প্রতিপক্ষ রাজনৈতিকদের কাছ থেকে জোর অর্থ আদায়, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, চুরি, ভূমি দখল ও আধিপত্য বিস্তারের বিস্তর অভিযোগ রয়েছে শার্শা উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক দুর্ধর্ষ বাহিনী প্রধান আকুলের বিরুদ্ধে।

এদিকে, যশোরের বেনাপোল থেকে ঢাকায় আগ্নেয়াস্ত্রের চালান পাচার করতে গিয়ে পাকড়াও হয়েছে সীমান্তের এই ডন। ছাত্রলীগ নেতা আকুল হোসাইন গ্রেফতারের ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে শার্শা-বেনাপোল তথা গোটা যশোর জেলা জুড়ে। তাকে বহিস্কার করা হয়েছে দল থেকে। তাকে আটকের পর মিস্টি বিতরণ, আনন্দ মিছিল এ সভাসমাবেশ করছেন তারদলের নেতা-কর্মীরা। এতোদিন দুর্ধর্ষ এই সন্ত্রাসীর ভয়ে যারা মুখে কুলুপ এটে ছিলেন তারা এখন মুখ খুলতে শুরু করেছেন। ছাত্রলীগের এই সোনার ছেলের নানা অপকর্মের কাহিনী এখন মুখে মুখে ফিরছে। দীর্ঘদিন ধরেই অস্ত্র, মাদক ও চোরাচালান চক্রের অন্যতম হোতা হিসেবে কাজ করছেন আকুল। তবে অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায় এপারের একটি চক্রের প্রধান হিসেবে কাজ করছে এই ছাত্রলীগ নেতা। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার নজারদারিতে ছিলেন বলে গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তারা মিডিয়াকে জানান।


এদিকে, দুর্ধর্ষ আকুল হোসাইন বিপুল পরিমাণ অস্ত্রসহ ঢাকায় গোয়েন্দা পুলিশের হাতে আটক হওয়ায় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি ও যশোর জেলা ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ তাকে ছাত্রলীগ থেকে বহিস্কার করেছে। এই সংবাদ জানার পর বেনাপোলে বিশাল আনন্দ মিছিল করেছে শার্শা-বেনাপোলে দলীয় নেতা-কর্মীসহ সর্বস্তরের জনতা। মঙ্গলবার বিকেলে শার্শা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুর রহিম সরদারের নেতৃত্বে বেনাপোল বন্দর শহরে বিশাল আনন্দ মিছিল হয়েছে।

যশোর-কলকাতা মেইন সড়ক দিয়ে বাজার এলাকা প্রদক্ষিণ করে বেনাপোল বাজারের রাস্তার উপর একটি পথসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বেনাপোলের ব্যবসায়ী খলিলুর রহমানের সভাপতিত্বে পথ সভায় শার্শা উপজেলার মাটিতে কোন অস্ত্র ব্যবসায়ী, চোরাচালানী, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, ছিনতাইকারি, অপহরণকারি, মাদকসেবী ও মাদক কারবারিদের স্থান দেওয়া হবেনা বলে হুশিয়ারি দেন বক্তারা।

এসময় উপস্থিত ছিলেন শার্শা উপজেলা যুবলীগের সভাপতি, জেলা পরিষদের সদস্য অহিদুজ্জামান অহিদ, সাধারণ সম্পাদক, শার্শা সদর ইউপি চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন, পুটখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাদিউজ্জামান, বেনাপোল পৌর যুবলীগের আহবায়ক,পৌর কাউন্সিলর আহাদুজ্জামান বকুল, যুগ্ম আহবায়ক জসীম উদ্দিন, বেনাপোল পৌর স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি জুলফিকার আলী মন্টু, সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন, ছাত্রলীগ নেতা ইকবাল হোসেন রাসেল, শার্শা উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক হাসনাইন খুরশিদ মিলন,

সাংগঠনিক সম্পাদক আল আমিন রুবেল, পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি আল মামুন জোয়াদ্দার, সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুর রহমানসহ শার্শা উপজেলার সর্বস্তরের জনতা। এরআগে, সীমান্তের ত্রাস দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী অস্ত্র আকুল সিন্ডিকেটের প্রধান আকুল হোসাইন ৮টি আধুনিক অস্ত্র, ৮টি গুলি এবং ১৬টি ম্যাগজিনসহ তার অপকর্মের চার পরীক্ষীত দোসরকে পুলিশ আটক করায় জনমনে স্বস্তির ফিরে আসে। যার প্রেক্ষিতে ৩/৪দিন ধরে চলছে মিষ্টি বিতরণ।


এ বিষয়ে বেনাপোল পৌর স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি জুলফিকার আলী মন্টু সাংবাদিকদের জানান, ” দুর্ধর্ষ বাহিনী প্রধান আন্তঃদেশীয় অস্ত্র ব্যবসায়ী আকুল হোসাইন দীর্ঘদিন ধরে শতাধিক স্কুল কলেজ পড়ুয়া ছেলেদের নিয়ে একটি সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তুলে বেনাপোল-শার্শা এলাকায় সন্ত্রাসী চাঁদাবাজি টেন্ডারবাজি ছিনতাই, অপহরণসহ ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। তার নেতৃত্বে সীমান্তের হুন্ডি ও স্বর্ণ কারবারিদের জিম্মি করে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে কেড়ে নেওয়া হয়েছে কোটি কোটি টাকার স্বর্ণ ও হুন্ডির টাকা। প্রতিনিয়ত তার বাহিনী কর্তৃক ছিনতাই অপহরণের মতো ঘটনা ঘটলেও কেউ তার উপর ছড়ি ঘোরাতে পারেনি। মাথার উপর বেনাপোল পৌর সভার শীর্ষ এক জনপ্রতিনিধির ছায়া থাকায় দিনদিন সে বেপরোয়া থেকে বেপরোয়া হয়ে চলতে থাকে।

অস্ত্র কেনা-বেচা, হুন্ডি ও স্বর্ণচোরাচালান, সাপের বিষ পাচারসহ প্রত্নতাত্ত্বিক মূর্তি, তক্ষক ও পিলার প্রতারণা ব্যবসা করে কোটিপতি বনে গেছে এই সিন্ডিকেট প্রধান। নিম্নবিত্ত পরিবারের আকুল এখন বিপুল পরিমাণ বিত্ত-বৈভবের মালিক হয়। দুর্ধর্ষ আকুল ঢাকায় গোয়েন্দা পুলিশের হাতে ৪ সহযোগীসহ আটক হওয়ার খবরে বেনাপোল-শার্শাবাসীর মনে ফিরে এসেছে স্বস্তির নিঃশ্বাস। যেকারণে শান্তিপ্রিয় এলাকাবাসী বেনাপোলে মিষ্টি বিতরণ ও মিষ্টি মুখ করেছেন।” তবে ছাত্রলীগ নেতা দুর্ধর্ষ আকুলকে ৮টি অস্ত্র ও চার সঙ্গীকে আটক করায় বেনাপোল সীমান্তে জুড়ে বিরাজ করছে একদিকে উৎসবের আমাজ আর অন্যদিকে তার বাহিনী ও সিন্ডিকেটের সদস্যরা আকুলের গডফাদারা রয়েছে চরম আতঙ্কে।


সীমান্তে সূত্রগুলো বলছে, রাজনৈতিক ছত্রছায়া ছাড়াও তার নিকট আত্মীয় এক পুলিশ কর্মকর্তাকে ঢাল বানিয়ে আকুল হয়ে ওঠে সীমান্তের বহু অপকর্মের হোতা। বর্তমানে খুলনায় কর্মরত ওই পুলিশ কর্মকর্তার শেল্টারে অনেকটা নিরাপদেই চালাতো তার অপরাধ কর্মকান্ড। নিরপেক্ষ তদন্ত হলে সেই পুলিশ কর্তার থলের বিড়ালও বেরিয়ে পড়বে বলে সীমান্তবাসীর ধারনা। অন্যদিকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে তিন দিনের রিমান্ডে আনা আকুলসহ বাকিদের কাছ থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছেন তদন্তসংশ্লিষ্টরা।

সীমান্তের ওপার থেকে কারা কীভাবে অস্ত্র ঢোকাচ্ছে, কারা রিসিভ করছে, কীভাবে দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, কারাই বা এ ব্যবসায় পৃষ্ঠপাষকতা করছেন- এ সংশ্লিষ্ট একটি চিত্র পেয়েছেন তারা। তবে তথ্যের বিষয়ে আরও নিশ্চিত হতে গুরুত্বের সঙ্গে যাচাই-বাছাই চলছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। জানা গেছে, কৃষিশ্রমিকের মাধ্যমেই অস্ত্র, সোনা, সাপের বিষ, মাদক এবং মূল্যবান পণ্যের চোরাচালান করে আসছে আকুল সিন্ডিকেট। সীমান্তের ওপারে তিন মহাজনের অস্ত্র ব্যবসা করে আসছেন ২০১২ থেকে। গত কয়েক বছরে তিনি ২ শতাধিক অস্ত্র বিক্রি করেছেন রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।

ভারতীয় অংশে দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যদের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে কৃষি কাজ করতে যাওয়া কিছু কৃষককে ম্যানেজ করে ওপারের সিন্ডিকেট। অবৈধ অস্ত্র কিংবা অন্যসব পণ্য ভালো করে প্যাকেট করে মাটিতে পুঁতে রেখে আসে। পরবর্তীতে এ চক্রের সদস্যরা কৃষক হিসেবে নির্দিষ্ট একটা সময়ে গিয়ে সেই প্যাকেটটা নিয়ে আসে। এ চক্রের সঙ্গে রয়েছেন স্থানীয় একাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তি। স্থলবন্দর হওয়ার কারণে দেশের অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তির সঙ্গে রয়েছে তাদের ব্যক্তিগত সম্পর্ক। আকুল আটক হওয়ার পর থেকে তাদের ঘুম নেই। ভুগছেন নানামুখী আতঙ্কে।