যশোরের বড় বাজার উত্তপ্ত : চালের কুইন্টালে ২০০ টাকা ও মুরগির কেজিতে বাড়ল ৩০

0

শেখ আব্দুল্লাহ হুসাইন ॥ বোরো ধানের ভরা মৌসুমেও বাজারে সব ধরনের চালের কুইন্টালে দাম বেড়েছে ২০০ টাকা করে। এদিকে ঈদের ছুটি শেষে খামারের মুরগির কেজিতে বেড়েছে ৩০ টাকা। বেড়েছে ডিমের দামও। তবে এ সপ্তাহে সবজির দাম কিছুটা কমেছে। ভোক্তারা বলছেন, বিভিন্ন অজুহাতে ব্যবসায়ীরা নিত্যপণ্যের দাম বাড়াচ্ছেন, মূল্যবৃদ্ধির পেছনে তারা বাজার তদারকি সংস্থার গাফিলতিকেই দায়ী করছেন। রোববার যশোর শহরের বড় বাজার ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে এমন চিত্র পাওয়া যায়।

বোরো ধানের ভরা মৌসুমেও বাজারে সব ধরনের চালের কুইন্টালে ২০০ টাকা করে দাম বেড়েছে। রোববার বড় বাজার চালবাজারে খুচরা পর্যায়ে বাংলামতি চাল মানভেদে বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৮৪ থেকে ৮৬ টাকা বা প্রতি কুইন্টাল (১০০ কেজি) ৮ হাজার ৪০০ থেকে ৮ হাজার ৬০০ টাকা দরে। যা গত সপ্তাহে কেজিতে ২ টাকা বা প্রতি কুইন্টালে ২০০ টাকা কম ছিল। মিনিকেট চাল মানভেদে বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৬৪ থেকে ৭২ টাকা বা প্রতি কুইন্টাল ৬ হাজার ৪০০ থেকে ৭ হাজার ২০০ টাকা। যা গত সপ্তাহে প্রতি কেজিতে ২ টাকা বা প্রতি কুইন্টালে ২০০ টাকা কম ছিল। ব্রি-৬৩ চাল বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৫৮ টাকা বা প্রতি কুইন্টাল ৫ হাজার ৮০০ টাকা। যা গত সপ্তাহে প্রতি কেজিতে ২ টাকা বা প্রতি কুইন্টালে ২০০ টাকা কম ছিল। ব্রি ২৮ চাল প্রতি কেজি মানভেদে বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ৬২ টাকা বা প্রতি কুইন্টাল ৬ হাজার থেকে ৬ হাজার ২০০ টাকা। যা গত সপ্তাহে ছিল প্রতি কেজি ৫৬ থেকে ৬০ টাকা বা প্রতি কুইন্টাল ৫ হাজর ৬০০ থেকে ৬ হাজার টাকা। কাজললতা চাল বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৬৮ টাকা বা প্রতি কুইন্টাল ৬ হাজার ৮০০ টাকা। যা গত সপ্তাহে ছিল প্রতি কেজি ৬৪ টাকা বা প্রতি কুইন্টাল ৬ হাজার ৪০০ টাকা। স্বর্ণা চাল বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি মানভেদে ৫৩ থেকে ৫৪ টাকা বা প্রতি কুইন্টাল ৫ হাজার ৩০০ থেকে ৫ হাজার ৪০০ টাকা। যা গত সপ্তাহে ছিল প্রতি কেজি ৫ হাজার ২০০ টাকা। আর হীরা চাল গত সপ্তাহের দরেই প্রতি কেজি ৪৮ টাকা বা প্রতি কুইন্টাল ৪ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

যশোর বড় বাজার চাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সুশীল কুমার বিশ্বাস জানান, বর্তমানে কৃষকের ঘরে ধানের মজুদ কমে এসেছে। অটো রাইস মিল মালিক ও বড় ব্যবসায়ীরা হাট থেকে প্রচুর পরিমাণে ধান কিনে মজুদ করছেন। এ কারণে হাটে ধানের দাম বেড়ে গেছে। তাই বোরো ধানের ভরা মৌসুমেও চালের দাম বেড়েছে।

এদিকে বড় বাজারের মুরগি ব্যবসায়ী আবুল হাশেম জানান, কুরবানি ঈদে সরকারি টানা ১০ দিনের ছুটি শেষে গত ১৫ জুন থেকে অফিস খুলেছে। রাজধানী ঢাকায় আবার ঘরমুখো মানুষ ফিরে গেছে। যশোর অঞ্চল থেকে খামারের মুরগির সরবরাহ ঢাকায় বেড়েছে। এ কারণে মুরগির সংকটে দাম বেড়েছে। রোববার খামারের সোনালি মুরগির কেজি বিক্রি হয়েছে ২৮০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ২৫০ টাকা। লেয়ার মুরগিতেও ১০ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৩৩০ টাকা। তবে এ সপ্তাহে প্রতি কেজিতে ১০ টাকা কমে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ১৬০ টাকা। মুরগির ডিমের হালিতেও দাম বেড়েছে ২ টাকা। ৩৮ টাকা ডিমের হালি বিক্রি হয়েছে ৪০ টাকায়।

তবে কয়েকদিনের টানা হালকা বৃষ্টিতেও বাজারে সবজি সরবরাহে ঘাটতি পড়েনি। এ সপ্তাহে বেশ কিছু সবজিতে আরও দাম কমেছে। বড় বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী নাসির আলী জানান, রোববার তিনি পটল প্রতি কেজি ১৫ টাকা দরে বিক্রি করেছেন, গত সপ্তাহে ছিল ২০ থেকে ৩০ টাকা। মুখিকচু বিক্রি হয়েছে ৪০ টাকা, গত সপ্তাহে ছিল ৫০ টাকা। ভালো মানের বেগুন বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকা, গত সপ্তাহে ছিল ১০০ থেকে ১২০ টাকা। আমদানি করা গাজর বিক্রি হয়েছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা, গত সপ্তাহে ছিল ১৬০ টাকা।

বড় বাজার এইচএমএম রোডের কাঁচামালের আড়তদার ‘আরিফ ভাণ্ডার’-এর স্বত্বাধিকারী শাহাবুদ্দিন মাতুব্বর ও সুজিত কাপুড়িয়া বাবলু জানান, সম্প্রতি কয়েকদিনের হালকা বৃষ্টিতে সবজির ফলনে উপকার হয়েছে। বাজারে যথেষ্ঠ পরিমাণে সবজি আমদানি হচ্ছে। দামও অনেক কমে এসেছে।

কুরবানি ঈদের পরে যশোর বড় বাজারে চাল ও খামারের মুরগির দামের অস্বাভাবিক বৃদ্ধিকে এক শ্রেণির অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের কারসাজি বলছেন ভোক্তারা। রোববার বাজার করতে আসা ক্রেতা আনিসুর রহমান বলেন, ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন অজুহাতে বাজারে চাল ও খামারের মুরগির দাম বাড়িয়েছেন। তিনি আকস্মিক এ দাম বৃদ্ধির পেছনে সরকারি বাজার তদারকি সংস্থাগুলার গাফিলতিকে দায়ী করেন।