জনগণের দৃষ্টিকে ভিন্নখাতে সরাতেই সরকার চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়াউর রহমানের কবর নিয়ে প্রশ্ন তুলছে-মির্জা ফখরুল

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ জনগণের দৃষ্টিকে ভিন্নখাতে সরাতেই সরকার চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়াউর রহমানের কবর নিয়ে প্রশ্ন তুলছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়াউর রহমানের মরদেহ থাকা আছে কি-না সে প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মরদেহ সম্পর্কে, তার বডি এখানে এসেছে কি-না সে সম্পর্কে যে কথাগুলো এখন তারা বলছে, আমি শুধু আজকে তার একটা প্রমাণ তুলে ধরতে চাই যে, সেই চট্টগ্রাম থেকে তার দেহ তোলা হয়। তারপর পোস্টমর্টেম (ময়নাদন্ত) করা হয়। ডা. তোফায়েল আহমেদ সাহেব তার পোস্টপর্টেম করেছিলেন এবং ২২টি বুলেট তার শরীর থেকে বের করে নিয়ে এসছিলেন।’ ‘তারপরে বিগ্রেডিয়ার আ স ম হান্নান শাহ (প্রয়াত) তার মরদেহকে সামরিক এয়ারক্রাফটে করে কুর্মিটোলায় নিয়ে এসেছিলেন, যেটা আমরা সবাই স্বচক্ষে দেখেছি। আমার মনে হয় তখন ড. মোশাররফ হোসেন সাহেব উপস্থিত ছিলেন। এসএ বারী এটি (উপ-প্রধানমন্ত্রী) সাহেবের প্রাইভেট সেক্রেটারি হিসেবে আমিও সেখানে উপস্থিত ছিলাম। আমরা সেখানে দেখেছি- একটা কাঁচের বাসকেট ছিল, সেখান থেকে আমরা তার দেহ দেখেছি।’ চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়াউর রহমান লাশ নেই- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মন্ত্রীদের নানা বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে শনিবার (২৮ আগস্ট) রাতে এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভঅয় বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন।
বিএনপির স্বাধীনতা সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন জাতীয় কমিটির উদ্যোগে ‘২৮ আগস্ট ১৯৭১: জিয়াউর রহমান কর্তৃক রৌমারীতে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের প্রথম বেসামরিক প্রশাসনের উদ্বোধন’ শীর্ষক এই ভার্চুয়াল আলোচনা সভা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে এই ধরনের কথাবার্তা বলার একটামাত্র উদ্দেশ্য সেটা হচ্ছে যে, ইতিহাসকে বিকৃত করে দেয়া, জনগণের দৃষ্টিকে ভিন্নদিকে সরিয়ে দেয়া এবং বাংলাদেশকে এই যে একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করা হচ্ছে সেখান থেকে মানুষের দৃষ্টিকে অন্যদিকে সরিয়ে দেয়া।’ তিনি বলেন ‘আমাকে একজন সাংবাদিক বলেছেন, ওবায়দুল কাদের ছবি দেখাতে বলেছেন। ছবি কেউ কোনোদিন দেখায় না। ওনাদের ছবিটাও কী দেখাতে পারবেন? এই কথাগুলো বলার উদ্দেশ্যই হচ্ছে যে, তারা ভিন্নদিকে নিতে চায়, ভিন্নভাবে মানুষকে প্রতারিত করতে চায়। সত্যি কথা বলতে কী এই সরকার একটা ভণ্ড সরকারে পরিণত হয়েছে, হিপোক্র্যাট সরকার। প্রতিটি ক্ষেত্রে তারা জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করছে।’
বিএনপি মহসাচিব বলেন, ‘আওয়ামী লীগের এখন কোনো রাজনীতি নেই। তারা অন্তঃসারশূন্য একটা রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে। তারা জনগণের কোনো সমস্যার সমাধান করতে পারেনি, তারা করোনার সমস্যার সমাধান করতে পারেনি, আজকে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান তারা করতে পারেনি। আজকে আমাদের শিশুদের লেখা-পড়া প্রায় ধ্বংসের দিকে চলে যাচ্ছে।’ ‘অর্থনীতি একেবারে রসাতলে যাচ্ছে। আজকে কোনো রকমের রাষ্ট্রের অগ্রগতির জন্য, জনগণের কল্যাণের জন্য, সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার উন্নতির জন্য তারা কোনো কাজই করতে পারেনি। আমাদের সব অর্জনগুলো তারা ধবংস করে নিয়ে গেছে, হরণ করে নিয়ে গেছে। সেজন্য তারা মিথ্যাচার করে জনগণের দৃষ্টিকে ভিন্নদিতে নিয়ে যেতে চায়।’ এই অবস্থা থেকে উত্তরণে সকলকে বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই সরকার যতদিন থাকবে, যদি আরও বেশিদিন থাকে, বাংলাদেশ আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সেজন্য আমাদের বড় প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে জনঐক্য সৃষ্টি করা। ১৯৭১ সালে যেমন জিয়াউর রহমান জণযুদ্ধ শুরু করেছিলেন, সেই রকম জনযুদ্ধের জন্য আমাদেরকে ঐক্য সৃষ্টি করতে হবে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য।’
সভায় বিষয়বস্তুর উপর তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করেন দলের তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক একেএম ওয়াহিদুজ্জামান। এসময় দলের ভাইস চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম বলেন, ‘রৌমারী মুক্তিযুদ্ধের একটি গৌরবময় ইতিহাস, আমাদের গর্বের স্থান। জেড ফোর্সের অধীনে এই অঞ্চলটি ছিল স্বাধীন দেশের মুক্তাঞ্চল। ২৮ আগস্ট আমাদের জেড ফোর্সের কমান্ডার জিয়াউর রহমান সেখানে বেসামরিক প্রশাসনের উদ্বোধন করেন। ওই সময় রৌমারীর জনগণ ট্যাক্স দেওয়ার জন্য লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকতো। তারা জানে যে, তাদের ট্যাক্সের টাকায় মুক্তিযুদ্ধের প্রচেষ্টা আরও জোরদার হবে। জিয়াউর রহমান কেবলমাত্র একজন সমর নায়কই ছিলেন না, কীভাবে বেসামরিক প্রশাসন চালাতে হবে একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন তিনি রৌমারীতে।’ তিনি বলেনন, ‘আজকে ইতিহাসের এমনই বিকৃতি ঘটেছে যে, জিয়াউর রহমান মুক্তিযোদ্ধা কি-না এটাও আমাদের বক্তৃতা দিয়ে বলতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের সময় বিদেশিদের বক্তব্য কিংবা ইতিহাসের যে নির্মোহ সত্য এগুলোকে ভুলিয়ে দেয়ার জন্য বর্তমান সরকার প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা, জেড ফোর্সের বীরত্বগাঁথা, রৌমারীর সেই মুক্তাঞ্চলের আকাশ-বাতাস, বৃক্ষ-লতা সব কিছুই সাক্ষী দেবে যে, জিয়াউর রহমান মহান মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। এই অবৈধ সরকার, অনির্বাচিত সরকারের কথায় দেশবাসী মোটেও আলোড়িত হবে না। মিথ্যা আর কত টিকবে এখানে?’ তিনি বলেন, ‘আজকে আমরা একটি অবরুদ্ধ দেশে বসবাস করছি। আজকে প্রয়োজন সেই গামছাপরা, গেঞ্জি গায়ে দেয়া গ্রামীণ মুক্তিযোদ্ধাদের। তাদেরকে এসে শহর দখল করতে হবে, তাদেরকে দেশবাসী সামনে পরিচয় দিতে হবে কারা মুক্তিযুদ্ধে করেছিল এই দেশে আর কারা বিদেশে গিয়ে আরামে ছিল।’ ‘এদেশ কোনো বক্তৃতায় স্বাধীন হয় নাই। বুকের রক্ত দিয়ে ইতিহাস করেছি আমরা। জেড ফোর্সের একজন সৈনিক হিসেবে আমি অত্যন্ত গর্বিত। স্বাধীনতাযুদ্ধে সবচাইতে ভয়াবহ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে জেড ফোর্স, আমাদের যেমন খেতাবধারীর সংখ্যা সর্বাধিক তেমনি শহীদের সংখ্যাও আমাদের সর্বাধিক। আজকে ইতিহাসকে বিকৃতি করে সেই গৌরবের কথা জনগণের মন থেকে মুছে ফেলা যাবে না।’ বিএনপির জাতীয় কমিটির সদস্য আহ্বায়ক খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আব্দুস সালামের পরিচালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, চিলমারী উপজেলার সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল বারী সরকার বক্তব্য রাখেন।