শিক্ষার্থীদের টিকাদান কতদূর এগুলো?

0

পিয়াস সরকার॥ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের আবাসিক শিক্ষার্থী ইসরাত জাহান সাদিয়া। টিকার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে তথ্য দেন। এরপর রেজিস্ট্রেশন করার পরও টিকার এসএমএস পাচ্ছেন না তিনি। সাদিয়া বলেন, আমার বন্ধুরা যারা প্রথম ধাপে তথ্য দিয়েছে তারা টিকা পেয়েছে। কিন্তু আমরা যারা দ্বিতীয় ধাপে তথ্য দিয়েছি তাদের অনেকেরই এসএমএস আসেনি। ১৬ মাসের অধিক সময় ধরে বন্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। প্রাণঘাতী করোনা রুখতে টিকাদানের পরই খুলতে শুরু করবে শিক্ষার দুয়ার। দেশজুড়ে চলছে টিকাদান।
বিশ্বজুড়ে ১৮ বছরের অধিক বয়সীদের দেয়া হচ্ছে টিকা। দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় খুলতে গেলে আবাসিক এক লাখ ৩০ হাজার শিক্ষার্থীকে টিকার আওতায় আনতে হবে। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি সম্প্রতি বলেছেন, আমরা সেপ্টেম্বরেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে চাই এবং নভেম্বরে এসএসসি ও ডিসেম্বরে এইচএসসি পরীক্ষা নেয়ার পরিকল্পনা আমাদের আছে। সরকার বিশ্ববিদ্যালয় দিয়েই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পরিকল্পনা করছে। কিন্তু তার আগে চাই টিকা। কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, টিকা কার্যক্রম শুরু হলেও চলছে তা ঢিমেতালে। নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৭ হাজার। যার মধ্যে আবাসিক শিক্ষার্থী ১৫০০। টিকা পেয়েছেন ৮০০ জন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই থেকে তিনবার তথ্য নেয়া হয়েছে। যার মাধ্যমে দেয়া হচ্ছে টিকা। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫৩৬৯ জন অনাবাসিক ও ১১২৮ জন আবাসিক শিক্ষার্থীর তথ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। যা মোট শিক্ষার্থীর প্রায় ৮০ শতাংশ। এছাড়াও দ্বিতীয় ধাপে তথ্য বিভ্রাট ও বিভিন্ন কারণে যাদের নাম পাঠানো হয়নি তাদের পুনরায় নাম পাঠানো হবে। এমনটাই বলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. সুব্রত কুমার দাস। তিনি আরও বলেন, প্রথম তালিকার ৬০ শতাংশ শিক্ষার্থী টিকার আওতায় এসেছেন।
ঢাকা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ডুয়েট) শিক্ষার্থীদের টিকার জন্য কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে নিজ দায়িত্বে টিকা গ্রহণের। একই অবস্থা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত ৭ কলেজের শিক্ষার্থীদেরও। তাদের কোনো টিকার আওতায় আনা হয়নি। এছাড়াও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরও টিকা নিয়ে কোনো তোড়জোড় নেই। ২৫ বছরের অধিক বয়সী যারা শিক্ষার্থী রয়েছেন তারাই মূলত টিকার আওতায় আসছেন সাধারণ নিয়ম মেনে। নেয়া হয়নি বিশেষ কোনো ব্যবস্থা। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের টিকাদান গুগল ফরমে আটকে আছে। বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, টিকার জন্য তারা গুগল ফরমে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছেন। কিন্তু এরপর আর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। এই মুহূর্তে দেশের কোটি মানুষের প্রশ্ন- কবে খুলবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান? সরকার থেকে বারবার বলা হয়েছে সংক্রমণের হার নিয়ন্ত্রণে এলেই খুলবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সংক্রমণের হার স্বাভাবিক বলতে বোঝানো হয় পাঁচ শতাংশের নিচে নেমে আসা। বর্তমানে দেশে সংক্রমণের হার স্বাভাবিকের তুলনায় পাঁচ থেকে ছয় গুণ। টিকা প্রদানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরানোই একমাত্র ভরসা। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফেরাতে আরও প্রয়োজন শিক্ষকদের টিকার আওতায় আনা। রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক লাজু রহমান বলেন, আমাদের আলাদাভাবে টিকার জন্য কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি। বলা হয়েছে শুধু আপনারা দ্রুত টিকা নিন। দুই তিন মাস আগে যেসব শিক্ষক টিকা পাননি তাদের তালিকা নেয়া হয়েছে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী শিক্ষক শিক্ষার্থীদের টিকার আওতায় আনার পরই খুলবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দুয়ার। এই বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন সদস্য ড. ফেরদৌস জামান বলেন, গণটিকা কার্যক্রম শুরুর পর ব্যাপকভাবে টিকা পাচ্ছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯০ শতাংশ শিক্ষক টিকার আওতায় এসেছেন। এছাড়া রেজিস্ট্রেশন করা প্রায় দুই লাখ শিক্ষার্থীর মধ্যে অধিকাংশই টিকার আওতায় এসেছেন। তিনি আরও বলেন, আশা করছি সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়া সম্ভব হবে। শিক্ষা সাংবাদিকদের সংগঠন এডুকেশন রিপোর্টার্স এসোসিয়েশন বাংলাদেশের (ইরাব) এক অনুষ্ঠানে সম্প্রতি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন বলেন, দীর্ঘ বন্ধে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি আমরা। করোনার সংক্রমণ কমে এলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্কুলগুলো খুলে দেয়া হবে। জাকির হোসেন আরও বলেন, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের তদারকিতে প্রাথমিকের বেশির ভাগ শিক্ষকই টিকা নিয়েছেন। একই অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের এক লাখ ৭৯ হাজার ২৬১ শিক্ষার্থী টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন। এর মধ্যে প্রথম ডোজ টিকা পেয়েছেন ৭৯ হাজার ৯১৪ জন। দুই ডোজ পেয়েছেন ৬ হাজার ৭২ জন। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, সরকারি পর্যায়ের প্রায় সব শিক্ষকই টিকা নিয়েছেন। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তিন লাখ ৬৩ হাজার ২২২ শিক্ষক-কর্মচারীর মধ্যে টিকা নিয়েছেন দুই লাখ ৭৮ হাজার ৪২৬ জন। বাকি আছেন প্রায় ৮৪ হাজার শিক্ষক। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৪ হাজারের বেশি শিক্ষক টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন, তাদের মধ্যে টিকা নিয়েছেন ৩০ হাজারেরও বেশি। আগামী চার-পাঁচ দিনের মধ্যে সব শিক্ষকই টিকা নিয়ে নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।