টিকা নয় মনে হয় ভোট

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ ‘মনে হয় করোনার টিকা নয় ভোট দিতে আইছি। সকাল ৮টা থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষায় থাকি কখন আমার সিরিয়াল আসবো। কিন্তু বেলা ১টা বেজে গেলেও আমার সিরিয়াল আর আইলো না। তার আগেই বলে দেয়া হলো আজকের মতো টিকা শেষ হয়ে গেছে। কি আর করুম বয়স্ক মানুষ হয়েও রোদের মধ্যে ৪ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে টিকা না নিয়েই বাড়ি ফিরতে হলো।’ এ কথাগুলো মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার বানিয়াজুরী ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের ৮৮ বছরের বৃদ্ধা রাধা রানী মণ্ডলের। সারা দেশে একযোগে করোনার টিকা কার্যক্রমের অংশ অনুযায়ী সরজমিন ঘিওর উপজেলার বানিয়াজুরী ইউনিয়ন পরিষদের করোনার টিকা কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেল সেখানে নারী- পুরুষের ঠাঁই নেই। সকাল থেকে উৎসুক মানুষজন লাইনে দাঁড়িয়ে টিকা নিচ্ছেন। শত শত নারী-পুরুষের বিশাল লম্বা লাইন মাঠের এ প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে চলে গেছে।
ঠেলা ধাক্কায় একে অপরের শরীরের সঙ্গে শরীর মিশে যাচ্ছে। তারপরও তারা লাইন ছাড়ছে না। এতে স্বাস্থ্যবিধি চরমভাবে উপেক্ষিত হওয়ায় করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা আরও বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। লম্বা লাইনের এমন দৃশ্য দেখে মনে হচ্ছে কোনো নির্বাচনের ভোট গ্রহণ চলছে। ১৮ বছর থেকে শুরু করে শত বছরের বৃদ্ধকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। তবে টিকা নিতে এসে সবচেয়ে ভোগান্তির শিকার হয়েছেন বয়স্ক শ্রেণির মানুষ। সেখানে তাদের জন্য আলাদা বুথ কিংবা টিকা দেয়ার মতো কোনো সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করেনি কর্তৃপক্ষ। এই ইউনিয়নের তিনটি ওয়ার্ডের জন্য টিকা বরাদ্দ হয়েছে মাত্র ৬শ’। সেখানে প্রতিটি ওয়ার্ডে কমপক্ষে আড়াই হাজার প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ টিকা নেয়ার আওতায় রয়েছে। অথচ ৬ থেকে ৭ হাজার মানুষের জন্য প্রথম দিন ৬শ’ টিকা তিন ওয়ার্ডে ধার্য করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। ঘোষণা অনুযায়ী টিকার কথা শুনে গতকাল শনিবার সকালে সেখানে হাজারো মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে ছুটে আসেন। ধার্যকৃত টিকা দুপুরের আগেই শেষ হয়ে যাওয়ায় অসংখ্য নারী-পুরুষ ক্ষোভ প্রকাশ করে টিকা না পেয়ে বাড়ি ফিরেছেন। ৩নং ওয়ার্ডের ৬৩ বছরের নারী পুটুলী রানী মণ্ডল বলেন, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পুরো রোদের মধ্যে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে অনেক কষ্ট হয়েছে। কয়েক ঘণ্টা টিকা নেয়ার জন্য অপেক্ষায় থেকেও শেষ পর্যন্ত টিকা ফুরিয়ে যাওয়ার কথা বলে আমাকে আর টিকা দেয়নি। বাধ্য হয়ে বাড়ি চলে যেতে হচ্ছে। এভাবে বয়স্ক মানুষজনকে কষ্ট দেয়ার কোনো মানে নেই। অথচ কম বয়সী মানুষজনকে চোখের সামনে টিকা নিয়ে চলে যেতে দেখেছি। একই ওয়ার্ডের নাদিরা বেগম জানালেন, সকালে এসে দেখি বিশাল লম্বা লাইন। এই লাইন ভেদ করে টিকা নেয়াটা অসম্ভব। স্বাস্থ্যবিধির কথা চিন্তা করে টিকা না নিয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছি। গৌরি রানী সাহা জানালেন, সংসারের কাজকর্ম ফেলে টিকা নিতে এসে দেখি মানুষের ঠাঁই নেই। এত ভিড় দেখে আর টিকা নেয়ার ইচ্ছেই জাগলো না। বাধ্য হয়ে বাড়ি ফিরে গেলাম। এদের মতো শত শত মানুষজনকে করোনাভাইরাসের টিকা না নিয়ে বাড়ি ফিরে যেতে দেখা গেছে। হেলথ এসিস্ট্যান্ট মিনাল কান্তি ঘোষ জানান, প্রথমদিন বানিয়াজুরী ইউনিয়নের ১, ২ ও ৩ নং ওয়ার্ডে মোট ৬শ’ জনকে টিকার আওতায় আনা হয়েছে। আর যারা বাদ পড়েছেন পর্যায়ক্রমে তাদেরকেও টিকা দেয়া হবে। বানিয়াজুরী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কাসেম চতু বলেন, আমার তিনটি ওয়ার্ডের মধ্যে প্রতিটি ওয়ার্ডে গড়ে প্রায় আড়াই হাজার মানুষ আছেন প্রাপ্তবয়স্ক। এরা সবাই টিকা নেয়ার আওতায় পড়েন। প্রায় সাড়ে ৭ হাজার মানুষের বিপরীতে মাত্র টিকা দেয়া হয়েছে ৬শ’ জনকে। সকাল থেকে মানুষের অতিরিক্ত চাপ সামলাতে গিয়ে আমরাও বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছি। অনেকের তিরস্কার শুনতে হয়েছে। এ ব্যাপারে ঘিওর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. হাসিব আহসানের সঙ্গে শনিবার বেলা ৩টার সময় মুঠোফোনে কথা বলার চেষ্টা করা হলে তিনি তার মোবাইল ফোন রিসিভ করেননি। এদিকে মানিকগঞ্জের সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলার ৬৫ ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভায় মোট ৪০ হাজার ২০০ জনকে শনিবার গণটিকার আওতায় আনা হয়েছে।