স্পাইওয়্যার বাণিজ্য নিষিদ্ধ করার দাবি জোরদার

    0

    লোকসমাজ ডেস্ক॥ মার্কিন প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে স্পাই সফটওয়্যারের মাধ্যমে ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নেয়ার বিষয়টি সামনে এসেছে। এ নিয়ে সপ্তাহজুড়েই বিশ্বজুড়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে। খবর এপি
    সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী, আইনজীবী ও রাজনীতিকদের ওপর আড়ি পাতার ঘটনা ফাঁস হওয়ার পর এ ম্যালওয়্যার নিয়ে বেশ আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিভিন্ন দেশের সরকারের স্পাইওয়্যার বাণিজ্যে বৈশ্বিক স্থগিতাদেশ জারি করা উচিত, নাহলে এমন একটি বিশ্বের সম্মুখীন হতে হবে যেখানে রাষ্ট্র-সমর্থিত হ্যাকারদের হাত থেকে কোনো মোবাইল ফোন নিরাপদ থাকবে না। কেবল লাভের আশায় ম্যালওয়্যার নির্মাণ উচিত নয় বলে মত দেন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সির (এনএসএ) সাবেক কন্ট্র্যাক্টর অ্যাডওয়ার্ড স্নোডেন।
    এনক্রিপটেড চ্যাটের পাইওনিয়ার হোয়াটসঅ্যাপের প্রধান উইল ক্যাথকার্ট বলেন, স্পাইওয়্যার শিল্প স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ন করছে। ইসরায়েলি কোম্পানি এনএসও গ্রুপের মালিকানাধীন পেগাসাস স্পাইওয়্যারের মাধ্যমে বিশ্বের অর্ধশতাধিক দেশ তাদের নাগরিকদের ওপর নজরদারি করছে এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ হোয়াটসঅ্যাপ প্রধান। এন্ড-টু-এন্ড ও নিরাপদ যোগাযোগের জন্য সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী ও সাধারণের কাছে গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছিল হোয়াটসঅ্যাপ। পেগাসাস স্পাইওয়্যারের মাধ্যমে পুরো ফোনের নিয়ন্ত্রণ নিতে সক্ষম হওয়ায় হোয়াটসঅ্যাপের মতো অন্যান্য নিরাপদ যোগাযোগ মাধ্যমগুলোরও নিরাপত্তা আসলে নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। এজন্য বিভিন্ন সরকার কিংবা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক ব্যবহারকারীদের ওপর তথাকথিত ব্যাকডোর নজরদারির বিপক্ষে কড়া অবস্থান হোয়াটসঅ্যাপ প্রধানের। বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের প্রতিনিধিত্বশীল সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসকে (সিপিজে) দেয়া এক সাক্ষাত্কারে স্পাইওয়্যার বাণিজ্য দমনে কঠোর পদক্ষেপের আহ্বান রাখেন ক্যাথকার্ট।
    পেগাসাস স্পাইওয়্যারটি তৈরি করে তা বিভিন্ন দেশের সরকারের কাছে বিক্রি করে ইসরায়েলি এনএসও গ্রুপ। এ স্পাইওয়্যারটি গোপনে মোবাইল ফোনকে আক্রান্ত করে এবং সেটি থেকে তথ্য সংগ্রহ করে। ই-মেইল, টেক্সট, যোগাযোগ তালিকা, অবস্থান ডাটা, ছবি ও ভিডিও সবই হাতিয়ে নিতে পারে এমনকি গোপনে ব্যবহারকারীর ওপর নজরদারি চালাতে ফোনের ক্যামেরা ও মাইক্রোফোনও সচল করে দিতে পারে এটি।
    স্নোডেনের মতে, বাণিজ্যিক ম্যালওয়্যার কীভাবে নিপীড়ক শাসকগোষ্ঠীকে আরো মানুষের ওপর আগ্রাসী নজরদারি চালানোর ব্যবস্থা করে দিচ্ছে তা উঠে এসেছে অনুসন্ধানে।
    ভারতের কানপুর আইআইটির সাইবার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সন্দীপ শুক্ল বলেন, ফোনে আড়ি পাতার নতুন কৌশল আয়ত্ত করেছে এনএসও গ্রুপ। তাদের তৈরি পেগাসাস এখন অনেক অগ্রসর। প্রচলিত অ্যান্টিভাইরাসগুলো পেগাসাসকে চিহ্নিত করতে পারে না। তাই ম্যাকাফে বা অন্যান্য কম্পিউটার অ্যান্টিভাইরাস তৈরি কোম্পানিগুলোও পড়েছে শঙ্কায়। এ ম্যালওয়্যারকে কীভাবে দূরে রাখা যায়, সে প্রযুক্তি আপাতত তাদের কাছে নেই। তবে এ ধরনের স্পাইওয়্যার যেহেতু সহজে চিহ্নিত করা যায় না, সুতরাং সবচেয়ে নিরাপদ হয়, যদি এসব অ্যাপ্লিকেশন বাণিজ্যিকভাবে নিষিদ্ধ করা হয়।
    ২০১৯ সালে হোয়াটসঅ্যাপে মিসড ভয়েস কল দিয়ে এ ম্যালওয়্যার ইনস্টল করে দেয়া হতো ফোনে। আর এখন হ্যাকারদের মূল নিশানা হলো অ্যাপলের মেসেজিং অ্যাপ্লিকেশন। আইফোনে ম্যালওয়্যার যুক্ত করে মেসেজ পাঠানো হচ্ছে। সেই আইমেসেজ ক্লিক না করলেও ম্যালওয়্যার ইনস্টল হয়ে যাচ্ছে ফোনে। যদি গ্রাহক মেসেজ না খুলে ডিলিটও করে দেন, তাহলেও এ সাংঘাতিক ম্যালওয়্যার ফোনের সিস্টেমে ঘুরতে থাকবে। হাতিয়ে নেবে ছবি, ভিডিও, অডিও, কললিস্ট, মেসেজসহ যাবতীয় তথ্য, এমনকি পাসওয়ার্ডও।
    এদিকে সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীসহ বিভিন্ন ব্যক্তির মোবাইল হ্যাক করে বিভিন্ন তথ্য হাতিয়ে নেয়ায় ইসরায়েলি স্পাইওয়্যার কোম্পানিটিকে কালো তালিকাভুক্ত করার দাবি তুলেছেন কিছু মার্কিন আইনপ্রণেতা। গত সোমবার চারজন ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতা এক যৌথ বিবৃতিতে এ আহ্বান রাখেন।