নিম্ন আয়ের মানুষের ভোগান্তি

0

শুক্রবার জাতীয় একটি দৈনিকের খবরে জানা যায়, খোলাবাজারে চাল-আটা বিক্রি অর্ধেক করে দিয়েছে সরকার। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় খবরটি বেশ গুরুতর। দেশে করোনার প্রভাবে লকডাউনে বন্ধ হয়ে আছে বিপুলসংখ্যক মানুষের আয়। এই অবস্থায় কোনো অজুহাতেই নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য বিশেষ সুযোগ খোলাবাজারে চাল-আটা বিক্রি কমিয়ে আনা শুভ বুদ্ধির পরিচয় হতে পারে না। খাদ্য সচিবের বক্তব্য ‘বেশি চাল ও আটা বরাদ্দ দিলে কালোবাজারে বিক্রি হয়ে যায়। এ কারণে সীমিত পরিমাণ চাল ওএমএসে দেওয়া হচ্ছে’। এ বক্তব্য কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। কালোবাজারে বিক্রি নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ গ্রহণ না করে দরিদ্রদের সুযোগ কমিয়ে আনা কোনোমতেই জনবান্ধব পদক্ষেপ হতে পারে না। বরং এই সিদ্ধান্তে বিপুলসংখ্যক মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা হুমকিতে পড়বে।
এ দেশের বিপুলসংখ্যক মানুষকে বছরের একটা লম্বা সময় শুধু ভাত খেয়ে বেঁচে থাকতে হয়। চালের দাম তাদের ক্রয়সাধ্যের বাইরে চলে গেলে তারা অনাহার-অর্ধাহারের ঝুঁকিতে পড়ে যায়। করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত বিপুলসংখ্যক মানুষের জন্য ইতিমধ্যে সেই ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে। সর্বশেষ খবর হলো, চালের দাম সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে, সামনের দিনগুলোতে দাম আরও বাড়বে। খাদ্যনিরাপত্তার দিক থেকে আমরা এখন এক গুরুতর সংকটের মুখোমুখি। এমন পরিস্থিতিতে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য খোলাবাজারে চাল-আটা ক্রয়ের সুযোগ কমিয়ে আনলে তাতে ভোগান্তি বাড়বে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
জানা যায়, প্রতিদিন ১৪৩টি পয়েন্টে দুই টন করে আটা আর চাল বিক্রি করা হতো। প্রতি ট্রাকে থাকে চার হাজার কেজি আটা ও চাল। এভাবে নিম্ন আয়ের মানুষদের ৫ লাখ ৭২ হাজার কেজি চাল ও আটা দেওয়া হতো। জনপ্রতি ৫ কেজি করে চাল এবং আটা দেওয়া হলে ১ লাখ ১৪ হাজার ৪০০ পরিবার উপকৃত হয়। কিন্তু গত মার্চ থেকেই আটা ও চাল বরাদ্দ অর্ধেক করে দিয়েছে খাদ্য অধিদপ্তর। এতে উপকারভোগী মানুষের সংখ্যা অর্ধেকে নেমেছে। ওএমএসে প্রতি কেজি চাল বিক্রি হয় ৩০ টাকা এবং আটা ১৭ টাকা কেজি দরে। বাজরে প্রতি কেজি মোটা চাল ৪৮ থেকে ৫০ টাকা এবং আটা ৩২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। চলতি বছর কভিডের দ্বিতীয় ঢেউ আসার পর সরকার গত ১ জুলাই থেকে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে। ইতিমধ্যে এই বিধিনিষেধের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। নিম্ন আয়ের মানুষদের ভিড় বাড়ছে খাদ্য অধিদপ্তরের ওএমএসের ট্রাক ও দোকানের সামনে। একই অবস্থা টিসিবির দোকানের সামনেও। এই অবস্থায় খাদ্য অধিদপ্তরের উচিত ছিল ওএমএসের দোকান, ট্রাক বা চালের পরিমাণ বাড়ানো।
গত বছরের তুলনায় চলতি বছর সরকারের চাল ও গমের মজুদ অনেক বেশি। তারপরও সরকার খোলাবাজারে বিক্রির চাল ও আটার বরাদ্দ কমিয়ে অর্ধেক করেছে। এতে করে খোলাবাজারে বা ওএমএস সেন্টারগুলোর সামনে নিম্নআয়ের মানুষের দীর্ঘ লাইন। ট্রাকের বা নির্ধারিত দোকানের চাল বা আটা দ্রুত ফুরিয়ে যাওয়ার কারণে লাইনে দাঁড়ানো মানুষেরা লাইন ভেঙে হুড়োহুড়ি করে এসব খাদ্যশস্য সংগ্রহের চেষ্টা করছেন। অনেকে চাল-আটা না পেয়ে খালি হাতে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন।
চুরি বন্ধ করা সরকারের দায়িত্ব। চুরি বন্ধ করার জন্য বিভিন্ন বিভাগীয় ব্যবস্থা আছে। সেটা না করে খাদ্য অধিদপ্তর যদি চাল ও আটা বরাদ্দ কমিয়ে দেয় তাহলে নিম্ন আয়ের মানুষেরা কোথায় যাবে? চুরি ঠেকাতে গিয়ে বিপুলসংখ্যক মানুষকে দুর্ভোগের মধ্যে ঠেলে দিয়েছে সরকার। গত দুই মাস ধরেই চাল ও আটার চাহিদা বেড়েছে। কভিডের এই দিনগুলোতে মানুষের আয়ের ক্ষমতা অনেক কমেছে। সরকারের উচিত নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষদের পাশে দাঁড়ানো। চুরি ঠেকাতে গিয়ে সরকার বিরাট জনগোষ্ঠীকে বঞ্চিত করছে। এটা কাম্য নয়।
অবহেলা, দায়িত্ব পালন না করা ও সামগ্রিক ব্যর্থতার জন্য খাদ্য মন্ত্রণালয়ের জবাবদিহি চাওয়া দরকার। খাদ্য পরিস্থিতির অবনতি ঠেকাতে অতি দ্রুত সরকারি মজুদ বাড়াতে হবে এবং দ্রুত স্বল্পমূল্যের চাল-আটার বরাদ্দ বাড়াতে হবে। কোনো রকম ঝুঁকি নেওয়া যাবে না। চালের মজুদ বাড়ানোর পাশাপাশি চাল বিতরণ কর্মসূচি জোরদার করতেই হবে। তাতে স্বল্প আয়ের মানুষের কষ্ট কিছুটা হলেও লাঘব হবে।