করোনার ঊর্ধ্বগতিতে গণটিকা জরুরি

0

দেশে ভারতীয় নতুন ধরন ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ায় সংক্রমণ এবং মৃত্যুর হার লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। আগে রাজধানী শহরে করোনার প্রকোপ বেশি হলেও এখন ঢাকার বাইরে ভাইরাসটির সংক্রমণ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে। পরিস্থিতির ভয়াবহতা অনুধাবন করে সরকারের উচিত আর এক মুহূর্ত সময় ক্ষেপণ না করে এখনই ওই সব জেলায় প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। সেখানকার উপজেলা ও জেলা সদরের হাসপাতালগুলোতে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন, মাস্ক, হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলাসহ চিকিৎসাসরঞ্জাম পাঠানো, যেন গ্রামীণ জনপদে করোনায় আক্রান্ত কারো জটিলতা দেখা দিলে শুরুতেই চিকিৎসা পেতে পারেন। তা না হলে বর্তমান অবস্থা সামাল দেয়া খুবই কঠিন হবে। ইতোমধ্যে সীমান্ত জেলা সাতক্ষীরায় করোনা ডেডিকেটেড সাতক্ষীরা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গত বুধবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত কেন্দ্রীয়ভাবে সরবরাহ করা অক্সিজেনের সঙ্কট দেখা দেয়। অক্সিজেনের চাপ কমে যাওয়ায় ওই এক ঘণ্টা সময়ের মধ্যে অন্তত সাতজন রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে স্বজনরা অভিযোগ করেছেন। সাধারণত আক্রান্তদের মধ্যে যাদের বয়স বেশি তাদেরই সংক্রমণের পর শারীরিক জটিলতা বেশি দেখা দেয়। সাথে সাথে তাদের চিকিৎসার আওতায় না আনতে পারলে ষাটোর্ধ্ব বয়স্কদের মৃত্যুঝুঁকি বেশি থাকে।
দেশে করোনার প্রকোপ কমিয়ে আনতে হলে কঠোর লকডাউনের পাশাপাশি সবাইকে যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে, এ কথা যেমন সত্য- তেমনই সত্য, ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে আনার সবচেয়ে কার্যকর পদক্ষেপ হলো গণটিকাদান কর্মসূচি জোরদার করা। কিন্তু টিকা সংগ্রহের ব্যাপারে সরকার একটা লেজেগোবরে অবস্থা তৈরি করেছে এ কথা অস্বীকার করা যাবে না। অথচ টিকাই হচ্ছে সবচেয়ে কার্যকর প্রতিষেধক। দেখা গেছে, বিশ্বের অনেক দেশে যাদের টিকা দেয়া হয়েছে তারা করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে সংক্রমিত হলেও তাদের মধ্যে মৃত্যুহার ৯২ থেকে ৯৬ শতাংশ কমে গেছে। যারা টিকার দুই ডোজ নিয়েছেন তাদের মধ্যে মৃত্যু নেই বললেই চলে। তাই সরকারের উচিত দ্রুততার সাথে নির্দিষ্ট সংখ্যক মানুষকে টিকার আওতায় নিয়ে আসা। জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, যাদের হৃদরোগ সমস্যা, কিডনি জটিলতা, ফুসফুস সংক্রান্ত সমস্যা ও ডায়াবেটিস আছে এবং যারা ষাটোর্ধ্ব তাদের যত তাড়াতাড়ি টিকা দেয়া যাবে তত তাড়াতাড়ি তাদের মধ্যে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি কমে যাবে। সে জন্য পরিকল্পনা করে এ ধরনের লোকদের আগে টিকা দিতে হবে। যে করেই হোক ভ্যাকসিন সংগ্রহ করে গণটিকাদান কর্মসূচি যত দ্রুত সম্ভব এগিয়ে নিতে হবে। তবেই করোনার প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে আশা করা যায়।
সারা দেশে করোনার তৃতীয় তরঙ্গ চলছে। দ্বিতীয় ঢেউয়ের চেয়ে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা দুই-ই কয়েকগুণ বেড়েছে। গত কয়েক দিন ধরে একের পর এক ভাঙছে মৃত্যুর রেকর্ড। টানা ছয় দিন মৃত্যুর সংখ্যা শতাধিক। গত বছরের ১৮ মার্চ করোনাভাইরাসে প্রথম মৃত্যুর পর থেকে গত বৃহস্পতিবার রেকর্ডসংখ্যক ১৪৩ জন মারা গেছেন, যা এক দিনে সর্বোচ্চ। অন্য দিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, কোনো দেশে পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার টানা দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ৫ শতাংশের নিচে থাকলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে বলে ধরা যায়। কিন্তু আমাদের দেশে গত কয়েকদিন ধরে শনাক্তের হার ২০ শতাংশের বেশি। দেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ শনাক্তের ঘোষণা দেয়া হয় গত বছরের ৮ মার্চ। এরপর ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে সংক্রমণ। গত বছরের শেষ দিকে এসে আবার সংক্রমণ কমতে থাকে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে মৃত্যু ও সংক্রমণের হার টানা ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় সারা দেশে গত বৃহস্পতিবার থেকে ফের কঠোর লকডাউন শুরু হয়েছে।