প্রতিবন্ধীদের বীমায় করোনার বাগড়া

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ স্বাস্থ্য ও জীবনঝুঁকির ক্ষতি মোকাবিলায় অটিজম ও নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধীদের (এনডিডি) বীমার আওতায় আনতে ২০১৯ সালের জুলাই মাসে উদ্যোগ নেয় সরকার। এরপর প্রায় দুই বছর কেটে গেলেও তা এখনো আলোর মুখ দেখেনি। মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপের কারণে এই বীমা প্রকল্পটি এখনো চালু করা সম্ভব হয়নি বলে অভিমত বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ)।
এ বিষয়ে আইডিআরএর দায়িত্বশীলরা বলছেন, নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধীদের স্বাস্থ্য বীমা প্রকল্পটি পাইলট প্রকল্প হিসেবে বাস্তবায়নে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ এবং সাধারণ বীমা করপোরেশন কাজ করছে। তবে করোনার কারণে প্রকল্পটির কার্যক্রম বাঁধাগ্রস্ত হয়েছে। করোনা না থাকলে এতদিনে প্রকল্পটি চালু হয়ে যেত। করোনার জন্য অনেক কাজ করতেই সমস্যা হচ্ছে, তারপরও নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধীদের স্বাস্থ্য বীমা দ্রুত বাস্তবায়নে সবধরনের পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।
দেশে বর্তমানে কতজন প্রতিবন্ধী আছেন তার সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে ২০১৯ সালে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবন্ধিতা শনাক্তকরণ কর্মসূচির আওতায় পরিচালিত এক জরিপের উঠে আসে দেশে শনাক্ত প্রতিবন্ধীর সংখ্যা ১৬ লাখ ৬৫ হাজার ৭০৮ জন। বিশাল এই জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য ও জীবনঝুঁকির ক্ষতি মোকাবিলার অংশ হিসেবেই সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়াধীন নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্টের আগ্রহের পরিপ্রেক্ষিতে অটিজম ও নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী (এনডিডি) ব্যক্তিদের বীমার আওতায় আনার উদ্যোগ নেয়া হয়।
এ বিষয়ে ২০১৯ সালে একটি কার্যপত্রও তৈরি করে আইডিআরএ। এতে উঠে আসে, অটিজম ও নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধীদের জীবনমান উন্নয়ন, তাদের ঝুঁকি নিরাপত্তায় নতুন বীমার পরিকল্পনা করা যেতে পারে। সাধারণত বীমা প্রকল্পগুলো লাইফ ও নন-লাইফ এর ক্ষেত্রে পৃথক হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে বীমা প্রকল্পটি লাইফ ও নন-লাইফ এর জন্য পৃথক হতে পারে অথবা এ ধরনের বীমা প্রকল্পগুলো লাইফ ও নন-লাইফ কম্পোজিট হতে পারে।
এতে আরও উঠে আসে, এ বীমা প্রকল্পটি প্রস্তুতের জন্য প্রতিবন্ধীদের জন্য ঝুঁকিটা কোথায়, কার জন্য বীমা হবে, বীমার বেনিফিট বা সুবিধা কে গ্রহণ করবে, বীমা প্রকল্পটি কতদিনের জন্য হবে, বীমা কোম্পানির ঝুঁকি কোথায়, অটিস্টিক শিশুর জন্মহার, তাদের জন্যও ঝুঁকি গ্রহণ করা, যারা এ ধরনের প্রতিবন্ধী তাদের কতদিন চিকিৎসা নিতে হয়, যারা বর্তমানে চিকিৎসার আওতায় আছেন তাদের আরও কতদিন চিকিৎসা নিতে হবে- এসব বিষয় স্পষ্ট করা প্রয়োজন। এছাড়া এ খাতে সরকারের ভর্তুকি বা সহযোগিতার বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়।
আইডিআরএর সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কার্যপত্র তৈরির পর এই বীমা প্রকল্পটি চালু করার লক্ষ্যে একটি টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করা হয়। এই টেকনিক্যাল কমিটি এবং একচ্যুয়ারি ড. মোহাম্মদ সোহরাব উদ্দিনের সমন্বয়ে নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধীদের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্য বীমা প্রকল্প প্রস্তুত করা হয়। সেই সঙ্গে প্রকল্প পাইলট আকারে বাস্তবায়নের জন্য সরকারি প্রতিষ্ঠান সাধারণ বীমা করপোরেশনকে দায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তু সাধারণ বীমা করপোরেশন এখনো প্রকল্পটি পাইলট আকারে বাস্তবায়ন করেনি।
এ কারণে সম্প্রতি তাগাদা দিয়ে সাধারণ বীম করপোরেশনকে একটি চিঠি দিয়েছে আইডিআরএ। এই চিঠিতে বলা হয়েছে, নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধীদের স্বাস্থ্য বীমা প্রকল্পটি ইতোমধ্যে আইডিআরএ প্রস্তুত করে, তা বাস্তবায়নের জন্য সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। আগামী এক বছর এই প্রকল্প পরীক্ষামূলকভাবে বিপণন করা হবে। বিপণন শেষে প্রকল্পের মুনাফা, প্রিমিয়াম হার এবং ব্যবস্থাপনা খরচ পুনরায় যাচাই-বাছাই করে সংযোজন বা বিয়োজন করা হবে।
নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধীদের স্বাস্থ্য বীমা প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সাধারণ বীমা করপোরেশনের একটি সমঝোতা চুক্তি (এমওইউ) করতেও বলা হয়েছে চিঠিতে। সেই সঙ্গে পরীক্ষামূলকভাবে প্রকল্পটি ১ মাসের মধ্যে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে।
এদিকে নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধীদের স্বাস্থ্য বীমা প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে ৭ সদস্যের একটি বাস্তবায়ন ও তদারকি কমিটি গঠনের জন্য সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আইডিআরএ। এই কমিটিতে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, আইডিআরএ, নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী (এনডিডি) সুরক্ষা ট্রাস্ট, সাধারণ বীমা করপোরেশনসহ নন-লাইফের আরও একটি বা দুই টি কোম্পানির প্রতিনিধি থাকবেন।
যোগাযোগ করা হলে আইডিআরএর মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক এস এম শাকিল আখতার বলেন, নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধীদের স্বাস্থ্য বীমা প্রকল্পটি আমরা পাইলট প্রকল্প হিসেবে নিয়েছি। করোনার প্রকোপের কারণে এখনো প্রকল্পটি চালু করা সম্ভাব হয়নি। করোনা না থাকলে এতদিন প্রকল্পটি চালু হয়ে যেত। করোনার কারণে অনেক কাজই করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও দ্রুত প্রকল্পটি চালু করার সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।