সমাজসেবা দপ্তরে ভিড়,মিলছে না সমাধান কলারোয়ায় হাজার হাজার মানুষ পাননি ভাতার টাকা

0

কে এম আনিছুর রহমান, কলারোয়া (সাতক্ষীরা) সংবাদদাতা ॥ ‘স্বামী নেই। বাস্তভিটা ছাড়া জমিজমা নেই। দুই সন্তান প্রতিবন্ধী। উপার্জন বলতে ভিক্ষাবৃত্তি আর বিধবা ভাতার সামান্য কয়টা টাকা। সেই টাকা অন্যের নম্বরে চলে গেছে।’ কথাগুলো বলতে বলতে দু’চোখের পানি পড়তে থাকে সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার সোনাবাড়িয়া ইউনিয়নের মাদরা গ্রামের আতিয়ার রহমানের বিধবা কন্যা ফিরোজা খাতুনের।
স্বামীর দুই কাঠা বাস্তভিটার ওপর বাস করেন একই গ্রামের অহেদ সরদারের কন্যা হাসিনা খাতুন। জমিজমা না থাকায় স্বামী মারা যাওয়া ও ৩ কন্যার বিয়ের পরে ভিক্ষা করে সংসার চলতো। কিন্তু দু’বছর আগে হার্টের একটি ভাল্ব অকেজো হওয়ায় চলতে পারেন না তিনি। এখন মেয়েরা কিছু সাহায্য করে আর বিধবা ভাতায় দিন চলে। কিন্তু সেই ভাতার টাকা পাননি হাসিনা খাতুন।
চান্দা গ্রামের প্রতিবন্ধী বিউটি খাতুন, বিধবা সালেহা বেগম, রহিমা খাতুন, মাদরা গ্রামের প্রতিবন্ধী আসমা খাতুন, প্রতিবন্ধী মো. তৌহিদ, সোনাবাড়িয়া গ্রামের বিধবা ফিরোজা বেগমসহ কলারোয়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে হাজার হাজার মানুষ ভাতার টাকা পাননি। ভাতার টাকা হিসেবে ধরে খুড়িয়ে তাদের সংসার চলে। ওষুধ কিনতে হয়।
স্থানীয় সোনাবাড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম, মেম্বার কামরুজামান, মেম্বার মো. হাসান তাদের ইউনিয়নে তিন শতাধিক ব্যক্তির ভাতা না পাওয়ার সত্যতা স্বীকার করে জানান, সমাজসেবা দপ্তরের নির্দেশ মোতাবেক মাইকিং করে তিনবার বয়স্ক বিধবা প্রতিবন্ধীদের ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে হাজির করা হয়। প্রথমবার আইডি কার্ডের কপির ওপর মোবাইল ফোন নম্বর লিখে জমা নেওয়া হয়। দ্বিতীয়বার সমাজসেবা দপ্তরের কর্মকর্তারা ভাতা ভোগীদের আইডি ও মোবাইল নম্বর যাচাই করেন। তৃতীয় দফায় সমাজসেবা দপ্তরের সাথে মোবাইল ব্যাংকিং ‘নগদ’ এর কর্মচারীরা এসে মোবাইল ফোন সেট নিয়ে নম্বরগুলো যাচাই করেন।
একই অভিযোগ করেন দেয়াড়া ইউনিয়নের মহিলা মেম্বার আকলিমা খাতুন জানান, তার এলাকা ৪ ,৫ ও ৬ ওয়ার্ডের দুই শতাধিক ভাতা ভোগী এবার টাকা পাননি। ভুক্তভোগীরা সমাজসেবা দপ্তরে যোগাযোগ করলে বলা হচ্ছে টাকা দেওয়া হয়েছে। তবে যে নম্বরে টাকা গেছে বলা হচ্ছে, তা ভাতাভোগীর নয়। তাও আবার রাজধানী ঢাকা, রংপুর, দিনাজপুর, যশোর বা দেশের বিভিন্ন স্থানে সেই নম্বরধারীদের অবস্থান। ফোনে কল দিলে বেশিরভাগই টাকা পাওয়ার কথা অস্বীকার করছে। অনেক নম্বরে ফোন রিসিভ হচ্ছে না। আবার অনেক নম্বরে পাওয়া যাচ্ছে না সংযোগ। এভাবে গোটা উপজেলার হাজার হাজার ভাতা ভোগী এবার টাকা পাননি। টাকা না পেয়ে প্রতিদিন দলে দলে ভাতাভোগীরা উপজেলা সমাজসেবা দপ্তরে ভীড় করছেন। কিন্তু সমাজসেবা দপ্তর থেকে কেউ সমাধান পাচ্ছে না।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা নূরে আলম নাহিদ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্রের উদ্যোক্তারা মোবাইল ফোন নম্বর তালিকাভুক্ত করার সময় ভুল লেখার কারণে সমস্যা হয়েছে। তবে টাকা উদ্ধারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।