যশোরে আমের বাজারে ধসউঠছে না উৎপাদন খরচ

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ করোনা মহামারির বিস্তার কঠোর বিধি নিষেধসহ লক ডাউনের কারণে চলতি বছর যশোরে আমের দাম অস্বাভাবিক কমে গেছে। চাষিরা এ থেকে উৎপাদন খরচ তুলতে পারছেন না।
চলতি বছর কুয়াশা না থাকায় যশোরাঞ্চলের গাছে গাছে যেমন বোল দেখা দিয়েছিল তেমনি গুটি ছিলো পর্যাপ্ত। আম চাষিরা স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল। কিন্তু চৈত্র-বৈশাখ পুরোটা সময় জুড়ে ছিলো খরা আর অসহনীয় তাপমাত্রা। এতে ব্যাহত হতে থাকে আমের বৃদ্ধি। অনেক চাষি আম গাছের গোড়ার চারিদিক ঘিরে পানি দিতে শুরু করেন। এতে গুটি ঝরে পড়া কিছুটা রোধ হয়। তবে পর্যাপ্ত বৃদ্ধি আসে না। অনেক আমচাষি গাছে পানি ¯েপ্র করে তাপ ও খরা থেকে ফসল রক্ষা করার চেষ্টা করেন। মৌসুমে এবার ঝড়ের উৎপাদনও তেমন না থাকায় আম চাষিরা সবমিলিয়ে ভালো ফলন পান। এত কিছুর পর করোনা মহামারির কারণে কাক্সিক্ষত দাম থেকে বঞ্চিত হন তারা। ল্যাংড়া, হিমসাগর, বোম্বাই, গোপালভোগ, রূপালি বা আম্রপালি, ফজলি, লতাই ছাড়াও স্থানীয় নানা জাতের আম যশোর বাজারে পর্যাপ্ত পাওয়া যাচ্ছে। সরেজমিনে শহরের মনিহার এলাকায় অবস্থিত ফলের পাইকারি মার্কেটে যেয়ে দেখা যায় মৌসুমের প্রথম দিকে জাত ভেদে আম মণপ্রতি ১০০০ থেকে চৌদ্দশত টাকায় বিক্রি হলেও পরবর্তীতে তা ৮০০ টাকা পর্যন্তও নেমেছে। বাহাদুরপুরের চাষি আব্দুল কুদ্দুস, বসুন্দিয়ার চাষি আব্দুল মান্নান ও শার্শার হারুন মোল্লা মতে, না হওয়ায় ফলন মোটামুটি ভালো পেয়েছিলেন। তবে দাম আশাব্যঞ্জক হয়নি। ভালো জাতের আম শেষ পর্যন্ত ২২ থেকে ২৭ টাকা কেজি দামে পাইকারি বিক্রি করতে হয়েছে। এ অবস্থার জন্যে তারা করোনায় লক-ডাউন বিধি নিষেধ প্রভৃতিকেই দায়ি করেছেন। তাদের মতে, এখানকার আম বিভিন্ন স্থানে যায়। পরিবহন বন্ধ থাকায় মানুষ চলাচল যেমন কম হয়েছে তেমনি বেচাকেনাও কম হয়েছে। দোকানপাট, ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ থাকায় মানুষের হাতে টাকা কম। তাই বেঁচাকেনা কম। তাছাড়া ঝুঁকি নিয়ে ঢাকা-চিটাগাংয়ের বা বরিশালের ব্যাপারিরা ঠিকমতো আসেনি। এ জন্যে ট্রাক ট্রাক আম এবার যশোরের বাইরে যায়নি। শার্শা, বেনাপোল, কেশবপুরে কিছু আম পার্শ্ববর্তী সাতক্ষীরার বাজারে বিক্রি করেছেন বলে কয়েকজন চাষির দাবি। তবে, এর পরিমাণ কম। শহরের দড়াটানা, চিত্রামোড়, মুজিবসড়ক, থানামোড়সহ বিভিন্ন এলাকায় ভ্যানে করে মৌসুমে ফল বিক্রি করা কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, এবার আমের দাম এতো কম হবে তা বছরের শুরুতে ভাবতে পারিনি। একটি বেসরকারি অফিসের কেরানি মোস্তফা দড়াটানার একটি ভ্যান থেকে ৫ কেজি আম কিনলেন। তিনি জানান, এ বছর দাম কম তাই ছেলে-মেয়েদের জন্যে মাঝে মাঝে আম কিনি। যশোরের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক, কৃষিবিদ বাদল চন্দ্র বিশ্বাস, জানান চলতি বছর জেলায় শুধু বাগান হিসেবে ৪ হাজার হেক্টরেরও বেশি জমিতে আমের চাষ হয়েছিল। খরায় ফলের বৃদ্ধি কিছু কম থাকলেও অর্ধলক্ষ মেট্রিক টন আম উৎপাদিত হয়েছে। এখনো কিছু কিছু আম গাছে অবশিষ্ট রয়েছে। এছাড়া গৃহস্থালি পর্যায়ে মানুষের বাড়িতেও পর্যাপ্ত আম হয়েছে। অনেক কৃষক আম্ফানের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারতো। তবে মহামারি করোনা ও বিভিন্ন প্রকার বিধি নিষেধের কারণে কৃষকরা সুবিধামত বাজার দর পাননি। আগামীতে হয়তো চাষিদের এরকম সমস্যা হয়তো থাকবে না। তিনি জানান, সবার আগে তো বেঁচে থাকা, সরকারি এ উদ্যোগে বাজারের হয়তো কিছু ক্ষতি হলেও মানুষের জীবন বাঁচাতে এর দরকার আছে। তিনি আম চাষিদের হতাশ না হয়ে আগামীর জন্যে প্রস্তুত হওয়ার পরামর্শ দেন।