ভারী বৃষ্টিতে বেশ কিছু নদীর পানি দ্রুত বাড়বে, বন্যার শঙ্কা

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ দেশের উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার, ব্রহ্মপুত্র, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকা এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের পার্বত্য এলাকার প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি দ্রুত বাড়ার পূর্বাভাস দিয়েছে বাংলাদেশ ও ভারতের আবহাওয়া অধিদফতর। একইসাথে আগামী ২৪ ঘণ্টায় সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে বলেও জানানো হয়েছে। আর এর ফলে বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভুইয়া বলেন, বাংলাদেশের অনেক এলাকায়; বিশেষ করে দেশের ওপরের দিকে ভারতের সীমানা এলাকাগুলোতে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির এসব পানি দেশের ওপর দিয়েই প্রবাহিত হবে। এতে দেশের উত্তরাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদ-নদীগুলোর পানি বাড়বে। আমরা আগেই বন্যার আশঙ্কা করেছিলাম, সে অনুযায়ী পূর্বাভাসও দেওয়া হয়েছে। এর ফলে জুলাইয়ের শুরুতেই একটি স্বল্পমেয়াদি বন্যা হতে পারে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, আগামী ২৪ ঘণ্টায় সুরমা নদীর সুনামগঞ্জ পয়েন্টের পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। এদিকে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদ-নদীগুলোর পানির সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আগামী ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। একই সঙ্গে ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদ-নদীর পানির সমতল বাড়তে শুরু করেছে, যা আগামী ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে। এছাড়া গঙ্গা নদীর পানির সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে ও পদ্মা নদীর পানির সমতল স্থিতিশীল আছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে।
কেন্দ্র থেকে আরও জানা গেছে, আগামী ৭২ ঘণ্টা দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ও ভারতের হিমালয়ের পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গ, সিকিম, আসাম, মেঘালয় ও ত্রিপুরাসহ আশপাশের এলাকায় ভারী বৃষ্টি হতে পারে। এর ফলে দেশের উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার, ব্রহ্মপুত্র, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকা এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের পার্বত্য এলাকার প্রধান নদ-নদীগুলোর পানির সমতল সময় বিশেষে দ্রুত বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের স্টেশনের সংখ্যা হচ্ছে ১০১। এরমধ্যে পানির সমতল বেড়েছে ৬১টি পয়েন্টে, কমেছে ৩৩টি এবং অপরিবর্তিত আছে ছয়টি পয়েন্টে। গত ২৪ ঘণ্টায় কেন্দ্রের স্টেশনগুলোর মধ্যে যাদুকাটা নদীর লরেরগড় পয়েন্টে পানি ইতোমধ্যে বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। সেখানে পানি বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ এলাকায় বৃষ্টির পরিমাণও সর্বোচ্চ ১৮০ মিলিমিটার। এছাড়া জাফলং পয়েন্টে ১২৮, সুনামগঞ্জে ১১৬, মহাদেবপুরে ১০৯, ছাতকে ৯৮, লালাখালে ৯০, জামালপুর ও আত্রাইয়ে ৮১, মহেশখোলায় ৬৮, দুর্গাপুরে ৫৫, রাঙামাটিতে ৫৭, রোহানপুরে ৫৬, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৫৪, বরগুনায় ৫৩, বগুড়া ও নওগাঁয় ৫২, ময়মনসিংহে ৫০ ও কুড়িগ্রাম স্টেশনে বৃষ্টি রেকর্ড হয়েছে ৪০ মিলিমিটার।
এ ছাড়া দেশের উজানে ভারতের স্টেশনগুলোর মধ্যে চেরাপুঞ্জিতে ৫৬০ মিলিমিটার, পাসিঘাটে ৫৭ এবং ধুবরিতে ৩৭ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।
এদিকে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের এক সতর্ক বার্তায় বলা হয়, ঢাকা, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, মাদারীপুর, যশোর, কুষ্টিয়া, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ময়মনসিংহ ও সিলেট অঞ্চলগুলোর ওপর দিকে দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এজন্য এসব এলাকার বন্দরগুলোকে এক নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
মৌসুমি বায়ু অক্ষের বর্ধিতাংশ রাজস্থান, উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে উত্তর-পূর্ব দিকে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে উল্লেখ করে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে আরও বলা হয়, এই অক্ষের একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর মোটামুটি সক্রিয় ও উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় আছে। এসবের প্রভাবে রংপুর, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে দেশের কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হতে পারে।