‘বাজেটে তামাক কর প্রস্তাব কিশোর-তরুণদের স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি’

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকের ব্যবহার ৫ শতাংশে কমিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও, প্রস্তাবিত বাজেটের কর কাঠামো তামাক ব্যবহার কমাতে কোনো ধরনের ভূমিকা রাখবে না। বরং এ কর ব্যবস্থা তামাক কোম্পানিকে নতুন ধূমপায়ী সৃষ্টি এবং পুরনো ধূমপায়ীকে উৎসাহী করতে সহযোগিতা করবে। বৃহস্পতিবার (৩ জুন) প্রস্তাবিত বাজেটের প্রতিক্রিয়ায় তামাক নিয়ন্ত্রণে কার্যরত সংগঠন বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট (বাটা), বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্যাক্স পলিসি (বিএনটিটিপি) ও তামাক বিরোধী নারী জোট (তাবিনাজ) এ আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।
গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে সংগঠনগুলো জানায়, বাংলাদেশে প্রায় ৭২ ভাগ মানুষ নিম্নস্তরের সিগারেট সেবন করে। নিম্ন ও মধ্যস্তর মিলে ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ৮৮ ভাগ। এই দুই স্তরের সিগারেটের মূল্য না বাড়ায় ব্যবহারের পরিমাণ বাড়বে এবং সিগারেট সহজলভ্য হওয়ায় কিশোর-তরুণরা ধূমপান শুরু করতে উৎসাহিত হবে। আশঙ্কা প্রকাশ করে তারা আরও বলেছে, জর্দা, গুল ও বিড়ির মূল্য অপরিবর্তিত থাকায় এগুলোর ব্যবহারকারীর সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পাবে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি বয়ে আনবে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রতিক্রিয়ায় কর বৃদ্ধি তামাক ব্যবহার ত্যাগে কার্যকর ব্যবস্থা হলেও এ বাজেটে বিষয়টি উপেক্ষিত হয়েছে। বিশেষ করে কভিড মহামারিকালে এটি মূখ্য বিবেচ্য হলেও সকারের কাছে তা গুরুত্ব পায়নি। এই প্রতিক্রিয়ায় তারা তামাকজাত দ্রব্যের ওপর এই মূল্য ও কর প্রস্তাব হতাশাজনক উল্লেখ করে সংগঠনগুলো বলেছে, এর ফলে তামাক ব্যবহারজনিত অসুস্থতা ও মৃত্যু মারাত্মক আকার ধারণ করবে একই সঙ্গে সুনির্দিষ্ট করারোপ পদ্ধতির প্রবর্তন না করায় সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাবে, কিন্তু তামাক কোম্পানি লাভবান হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও বিএনটিটিপি এর কনভেনর ড. রুমানা হক বলেন, বাজেট প্রস্তাবে নিম্নস্তর ও মধ্যস্তরের সিগারেটে কোনো ধরনের মূল্য পরিবর্তন না করে এই দুই স্তরের ১০ শলাকা সিগারেটের দাম আগের বছরের মতোই ৩৯ টাকা ও ৬৩ টাকা বহাল রাখা হয়েছে। জর্দা, গুল ও বিড়ির মূল্যেও কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। অথচ একইসময়ে মানুষের মাথাপিছু আয় বাড়ার পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি এবং নিত্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য দ্রব্যের মূল্যও বেড়েছে। সেই বিবেচনায় মূল্য না বাড়ানোর ফলে এসব তামাকজাত দ্রব্য আগের বছরের তুলনায় আরো সহজলভ্য হয়েছে। তিনি আরও বলেন, করারোপে অ্যাডভেলোরেম পদ্ধতি বহাল থাকায় উচ্চস্তরের মূল্য বৃদ্ধি থেকে তামাক কোম্পানি লাভবান হবে। একটি বহুজাতিক তামাক কোম্পানির নিজস্ব হিসাব মতে ২০১৮ সালে তারা ২৮ শতাংশ মুনাফা অর্জন করে। যা অন্য কোনো ব্যবসাতেই সম্ভব না। ওই একই তামাক কোম্পানির নিজস্ব নথিতে দেখা যায়, ২০০৯ থেকে ২০১৮ এই ১০ বছরে তাদের উৎপাদন বেড়েছে দ্বিগুণ কিন্তু একই সময়ে তাদের মুনাফা বেড়েছে পাঁচ গুণ। আমাদের ত্রুটিপূর্ণ কর ব্যবস্থার কারণে এটি হচ্ছে। বৃহত্তর জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা ও রাজস্ব আয় বৃদ্ধি বিবেচনায় অর্থমন্ত্রীর এই প্রস্তাব পরিবর্তন করবেন বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।